একটি ম্যাচ, নতুন শুরু ও অনেক সমীকরণ
ক্রিকেট ম্যাচের রং বদলাতে সময় লাগে না। মাত্র একটি বলেই বদলে যেতে পারে ম্যাচের চেহারা। ব্যাপারটা দলের ক্ষেত্রেও যায়। বাংলাদেশের কথাই ভাবুন না, সাকিব আল হাসানের এই দলটা নিয়ে কে-ই বা আশাবাদী ছিলেন! অধিনায়ক সাকিবও বড় লক্ষ্যর কথা জানাননি একবারের জন্য। ভালো ক্রিকেট খেলাই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য পাল্টে যেতে সময় লাগেনি। তিন ম্যাচ পরই দৃষ্টিসীমায় ধরা দেয় সেমি-ফাইনাল খেলার স্বপ্ন।
আবার এই স্বপ্ন ফিঁকে হতেও সময় লাগেনি। অস্ট্রেলিয়ায় চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার লিগে চতুর্থ ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর শেষ চারে খেলার আশা প্রাই ছেড়েই দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। শেষ ম্যাচে শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতার কঠিন চ্যালেঞ্জ তো আছেই, সঙ্গে আছে আরও অনেক জটিল সমীকরণ।
যদিও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম এতো কিছু না ভেবে বলছেন, এটাকে নতুন শুরু হিসেবে ভাবা যাক। ভারতীয় এই কোচ মনে করিয়ে দিয়েছেন, এটাই বাংলাদেশের সফলতম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কীভাবে সেটা, সেই ব্যাখ্যাও দিলেন শ্রীরাম। বললেন, এই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সুপার লিগে দুটি ম্যাচ জিতেছে।
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর লম্বা সময়েও মূল পর্বে কোনো নেই তাদের। এবার মিলেছে দুটি জয়। এ নিয়ে ক্রিকেটাররা গর্ব করতে পারে জানিয়ে শ্রীরাম বলেন, 'টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা আসর এটি। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনও মূল পর্বে দুটি খেলায় জেতেনি দল। আমরা সেটা করেছি, ছেলেরা নিজেদের নিয়ে গর্ব করতে পারে।'
সবচেয়ে বেশি সাফল্য পাওয়ার আসরে আছে হতাশাও। ভারতের বিপক্ষে একেবারে কাছে গিয়েও জেতা হয়নি বাংলাদেশের। যদিও তীরে গিয়ে তরী না ভেড়াতে পারার আক্ষেপ অতীতে অনেকবারই সঙ্গী হয়েছে তাদের। এরপরও ভারতের বিপক্ষে হারটি পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে দলের জন্য এটা চাপ কিনা জানতে চাইলে শ্রীরাম বর্তমান নিয়ে থাকার কথা জানান।
তার ভাষায়, 'এটা নতুন শুরু। আগে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই। আমি সেখানে একদমই ছিলাম না। নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুব ক্লোজ দুটি ম্যাচ আমরা জিতেছি। আরেকটি ক্লোজ ম্যাচে আমরা ভারতের কাছে হেরে গেছি। তবে সেটা হতেই পারে। আমি এটাকে একদম নতুন শুরু হিসেবেই দেখছি। আমি অতীতে খুব বেশি ডুব দেইনি, সে সময় ছিলাম না। তাই মন্তব্য করতে পারব না।'
আগেরদিন অনুশীলন শেষে তাসকিন আহমেদ জানান, পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের জন্যই খেলবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষকে শক্তিতে এগিয়ে রাখলেও তার কণ্ঠে ছিলো লড়াইয়ের প্রত্যয়। শিষ্যের মতো দারুণ লড়াইয়েয়ের আশায় শ্রীরামও, 'পাকিস্তান খুব ভালো দল। নিউজিল্যান্ডে ওদের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই আমাদের খুব ভালো সম্ভাবনা ছিল। আমরা তাদের শক্তির জায়গা জানি, তারাও আমাদের শক্তির জায়গা সম্পর্কে জানে। তাই দারুণ একটি লড়াই তাই হবে।'
চার ম্যাচে ২ জয় ও ২ হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চার নম্বরে বাংলাদেশ। সেমি-ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে ৬ নভেম্বর অ্যাডিলেড ওভালে পাকিস্তানকে তো বড় ব্যবধানে হারাতেই হবে, পরে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য ম্যাচের দিকে। কাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতলেই ৭ পয়েন্ট নিয়ে সেমিতে উঠবে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন হলে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভারতের বড় হারের অপেক্ষায় থাকতে হবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ জিতলে এবং ভারত হারলে দুই দলের সমান ৬ পয়েন্ট হবে। তখন রান রেটের হিসাব করা হবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রান রেট -১.২৭৬ এবং ভারতের + ০.৭৩০। এ কারণে জয়ের পাশাপাশি রান রেট বাড়িয়ে নেওয়ার ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হবে বাংলাদেশ। আছে অন্য সমীকরণও, যেটা তুলনামূলক সহজ পথ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা হারলে তাদের পয়েন্ট ৫-ই থাকবে। পাকিস্তানকে হারাতেই পারলেই সেমির টিকেট মিলবে বাংলাদেশের।
অনেক হিসাব নিকাষ করে বাঁচিয়ে রাখা সেমিতে খেলার নিভু নিভু সম্ভাবনা নিয়ে অবশ্য শ্রীরাম ভাবছেন না। তার ভাবনায় কেবলই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। শিষ্যদের ওপর আস্থা রেখে জয়ে দৃষ্টি দেওয়া ভারতীয় সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, 'অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি যে পাকিস্তানকে হারাতে পারি। তবে সেমি-ফাইনালে খেলতে পারা আমাদের হাতে নেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে।'