তিন মাসে কোটি টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কমেছে প্রায় ২ হাজার
দেশে মহামারি কোভিডকালে কোটিপতির সংখ্যা বাড়লেও চলমান মুল্যস্ফিতির চাপে গত তিন মাসে কোটিপতি হিসাবধারী কমেছে প্রায় ২ হাজার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের 'শিডিউলড ব্যাংকস স্ট্যাটিস্টিকস' প্রকাশনা থেকে জানা গেছে, এই সময়ে কোটিপতিদের ব্যাংকে থাকা আমানত কমেছে কমেছে ২৭ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা।
প্রকাশনার সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা আছে এমন ব্যাংক হিসাব ১ লাখ ৬৫২০টি। এসব অ্যাকাউন্টে জমা আছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা।
যদিও গত জুনে মোট কোটিপতির হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭টি। সেই হিসেবগুলোতে জমা টাকা ছিল ৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৬১ কোটি টাকার আমানত।
ব্যাংকাররা বলেন, কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব আর কোটিপতির সংখ্যা কখনই এক নয়। এসব ব্যাংক হিসাবের গ্রাহকদের মধ্যে ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। চলতি অর্থবছর থেকে মূল্যস্ফিতির পরিমাণ বাড়তে থাকায় অনেকে আমানতের টাকা ভেঙ্গে সংসার চালাচ্ছে, তাই মানুষের জামানো টাকা কমে আসছে।
দেশে পরপর দুইমাস মূল্যস্ফিতির পরিমাণ ছিল ৯ শতাংশের উপরে। গত আগস্টে মুল্যস্ফিতি ছিল ৯.৫২%। এরআগে গত সেপ্টেম্বরে মুল্যস্ফিতি ছিল ৯.১০%। যদিও অক্টোবরে এসে মুল্যস্ফিতি কিছুটা কমে হয়েছে ৮.৯১%।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "গ্রাহক ব্যাংকে টাকা রাখলে আমানতের সুদহার পাচ্ছে গড়ে ৫% এর কম। তবে বিএসএস যে মুল্যস্ফিতির হার দিচ্ছে বাজারে, সেই তুলনায় জিনিসপত্রের দাম আরও বেশি। তাই গ্রাহক যে টাকা প্রফিট পাচ্ছে তার চেয়ে বেশি সংসার খরচে লাগছে। এ কারণে জমানো টাকা কমে আসছে।"
তিনি আরো বলেন, "ব্যাংকে টাকা রাখলে যে লাভ পাচ্ছে তার তুলনায় প্রপার্টিতে ইনভেস্ট করলে তারচেয়ে বেশি প্রফিট হচ্ছে। তাই এই টাকাগুলো সেদিকে চলে যাচ্ছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২০২১ সালের জুনে কোটিপতি আমানতকারীদের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৯১৮টি। তারপর থেকে চলতি বছরের জুনে একটানা কোটিপতির পরিমাণ বেড়েছে।
গত জুন পর্যন্ত বিগত এক বছরে কোটিপতি হিসাবধারীর পরিমাণ বেড়েছে ৮৫৩৯টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোয় জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। মোট ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ৩৬ হাজার ব্যাংক হিসাবে এ আমানত জমা হয়েছে। দেশের মোট ব্যাংক আমানতের ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ সরকারি। বাকি ৮২ দশমিক ৬৯ শতাংশই বেসরকারি খাতের।
কোটি টাকার স্থিতি থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিলেও সে হিসাবগুলোর মধ্যে ব্যক্তির সংখ্যা কত, সে পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও নেই।
দেশের কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলে জানা যায় এ ব্যাংকগুলোর কোটি টাকার বেশি হিসাবের মাত্র ৫-৭ শতাংশ ব্যক্তির। বাকি হিসাবগুলো সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি খাতের প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে করপোরেট প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানও।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে মূল্যস্ফিতি বৃদ্ধির কারণে গ্রাহকের আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। যে পরিমাণে আমানত বাড়ছে তার চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার ৫% বেশি।
এদিকে গ্রাহকের টাকা অন্যখাতে ব্যয় করায় ব্যাংকগুলোরও তারল্যের পরিমাণ কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য মাত্র তিন মাসে ৩৩ হাজার কোটি টাকা কমে সেপ্টেম্বরে ১.৭০ লাখ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।