ফ্লাইটে বয়স্ক নারীর ওপর মূত্রত্যাগের ঘটনায় ভারতে তীব্র সমালোচনার মুখে এয়ার ইন্ডিয়া
ভারতের টাটা সন্স কোম্পানির মালিকানাধীন বিমান পরিবহনসংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে একজন মদ্যপ ব্যক্তির বিরুদ্ধে জনৈক বয়স্ক নারীর গায়ে মূত্রত্যাগ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় 'দুঃখ' প্রকাশ করেছেন টাটার প্রধান। খবর বিবিসি'র।
গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু ওই নারী অভিযোগ জানানোর পর কেবল গত সপ্তাহে এটি প্রকাশ্যে আসে।
এ খবরে ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া যেভাবে ঘটনাটিকে সামলেছে তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
গত সপ্তাহান্তে শংকর মিশ্র নামক ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং ফার্ম ওয়েলস ফার্গোতে কাজ করতেন। সেখান থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
রবিবার (৮ জানুয়ারি) টাটা সন্স-এর চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরন বলেছেন, বিমানসংস্থাটির উচিত ছিল আরও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
'আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করব এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে তার ব্যবস্থা নেব,' বিবৃতিতে বলেন তিনি।
তার বিবৃতির একদিন আগেই এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও ক্যাম্পবেল উইলসন 'সহযাত্রীদের নিন্দনীয় কাজের' দরুন এয়ারলাইনটির সেবাগ্রহীতাদের অসুবিধায় পড়ার জন্য 'পরিতাপ' ও 'বেদনা' প্রকাশ করেছেন।
২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর নিউ ইয়র্ক-দিল্লি ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাস কেবিনে ওই ঘটনা ঘটেছে। ৭২ বছর বয়সী ওই নারী-সহযাত্রীর ওপর মূত্রত্যাগ করার সময় শংকর মিশ্র মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে জানা গেছে।
এর পরের দিন চন্দ্রশেখরনকে লেখা এক অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী নারী জানান, 'আমার কাপড়, জুতা ও ব্যাগ প্রস্রাবে সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছিল।'
ভুক্তভোগী ফ্লাইট ক্রুদের কাছে তার আসন পরিবর্তনের অনুরোধ করলে তাকে আর কোনো আসন না থাকার কথা জানানো হয়। তার বদলে বিমানের স্টাফদের ব্যবহার করা একটি ছোট আসনে বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিমানের ক্রুরা ওই লোককে তার কাছে নিয়ে এসেছিলেন যাতে অভিযুক্ত ক্ষমা চাইতে পারেন।
ওই ফ্লাইটকে তার জীবনের সবচেয়ে 'ট্রমাটিক' ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করে ভুক্তভোগী নারী জানান, এয়ার ইন্ডিয়া তাকে তার টিকিটের দামের কেবল একটি অংশ ফেরত দিয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে তিনি জানান, ঘটনার দিন এয়ার ইন্ডয়াকে একটি অভিযোগ লিখেছিলেন তিনি, কিন্তু তা-তে কোনো লাভ হয়নি।
ঘটনার পর মিশ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করে এয়ার ইন্ডিয়া। দুই সপ্তাহ পর তার বিরুদ্ধে ৩০ দিনের অন্তর্বর্তীকালীন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে সংস্থাটি। এত কম সময়ের নিষেধাজ্ঞার জন্যও সমালোচনার শিকার হয়েছে সংস্থাটি।
ওই নারীর পরিবারের অনুরোধের পর এয়ারলাইনটি অবেশেষে ঘটনাটি নিয়ে গত ২৮ ডিসেম্বরে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায়।
এক সপ্তাহ পরে ভারতের বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে এটি একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। গত সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ওই ফ্লাইটের কর্মকর্তা ও ক্রুদেরকে একটি নোটিশ জারি করে। সেখানে জানানো হয়, তারা ওই ঘটনাটি যথাযথভাবে সামলাতে পারেননি এবং ক্রুদের আচরণ 'অপেশাদার' ছিল।
গত শনিবার বেঙ্গালুরু থেকে মিশ্রকে যৌন হয়রানি ও জনসমক্ষে অসদাচরণের অভিযোগ গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ।
গ্রেপ্তারের আগে মিশ্র তার আইনজীবীর মাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি ঘটনার দুই দিন পর ওই নারীর পোশাক ও ব্যাগ পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তদন্তে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।