তারল্য সংকট: সমস্যার মধ্যেই রয়েছে সমাধান
দেশের ব্যাংকখাতে এখন লিকুইডিটি ক্রাইসিস বাড়ছে। এর একটা আভাস দেখা যায় ব্যাংকখাতে কল মানি মার্কেটে। গত কয়েকদিন ধরে ওভারনাইট কলমানিতে ইন্টারেস্ট রেট ৬.৮০%, যেটি গত সাড়ে ৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ব্যাংকগুলো যখন অন্য ব্যাংক থেকে ধারে টাকা নেওয়ার চাহিদা বেড়ে যায়, তখন এই রেটগুলো বাড়তে থাকে। অবশ্য নভেম্বর থেকেই রেটগুলো বাড়তে শুরু করে।
ওভারনাইট কলমানিতে সুদের হার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাধ্যবাধকতা থাকায় বেশিরভাগ ব্যাংকই বেশি সুদে ২-১৪ দিনের শর্ট নোটিশে ধার দিতে শুরু করে। এক্ষেত্রে ডিসেম্বর মাসের বেশ কয়েকটি কার্যদিবসে এসব ধারের ইন্টারেস্ট রেট ১০.৫০% পর্যন্ত উঠে। পরে সেখানেও বাধ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শর্ট নোটিশে টাকা ধারের ইন্টারেস্ট রেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মৌখিকভাবে ৯% ক্যাপ করে দেওয়ায় দুইদিন ধরে রেটটি ক্যাপের নিচেই আছে।
তবে ব্যাংকগুলো বলছে, এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা উল্টো পরিস্থিতি খারাপ করে দিতে পারে। কলমানিতে সুদের হার অবশ্যই বাজারের চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। এমনিতেই দূর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দিতে চাচ্ছে না অন্য ব্যাংকগুলো। এভাবে ক্যাপ দিয়ে রাখলে দেখা যাবে, অনেক ব্যাংকই আর ধার দেবে না। ফলে কিছু ব্যাংকের লিকুইডিটি ক্রাইসিস চরমে উঠবে।
লিকুইডিটি ক্রাইসিস কমাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়ার বদলে উল্টো পরিশোধ করছে সরকার। বাজেট সাপোর্টে সরকার ব্যাংক খাত থেকে এ ঋণ নিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৬ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ধার করেছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া এ ঋণের টাকা থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকার ঋণ শোধ করা হয়েছে।
এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ বাড়লেও কমেছে বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ। এতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।
মূলত ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে এসব ঋণ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১ থেকে ২০ বছর মেয়াদী এসব বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেরাই কিনে নিচ্ছে। ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ডাকা শেষ নিলামে দীর্ঘমেয়াদী সরকারি বন্ডের সুদের হার ৮.৯৫% পর্যন্ত বেড়েছে, যখন ঋণের হারের সীমা ছিল ৯%।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে টাকা বাজারে ছাড়ে, তার পুরোটাই রিজার্ভ মানি বা নতুন টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা বাইরে ছাড়ার অর্থ উচ্চমানের টাকা (হাই পাওয়ার) বাজারে ছাড়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ বেড়ে গেলে একদিকে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায়, তাতে চাপ তৈরি হয় মূল্যস্ফীতির।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, গত অক্টোবরে দেশে ছাপানো টাকা বা রিজার্ভ মানির পরিমাণ ছিল ৩.৩৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকে ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি ও মানুষের হাতে ছিল ২.৩৬ লাখ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, নগদ টাকা সাধারণ মানুষের হাতে বেশি থাকলে সেটি অর্থনীতিতে প্রভাব কম রাখে। কারণ সেগুলো ইনভেস্টমেন্টে যেতে পারে না। ফলে কর্মসংস্থান কম হয় ও জিডিপির গ্রোথে প্রভাব ফেলে। ব্যাংকে জমা থাকলে টাকা অনেক বেশিবার হাতবদল হয় যেটি অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করে।
ব্যাংকগুলোর কাছে গত অক্টোবরে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১.৭০ লাখ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য এক্সেস লিকুইডিটি ছিল মাত্র ১২.৭৪ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালের অক্টোবরে এর পরিমাণ ছিল ৩৪.৪১ হাজার কোটি টাকা।
লিকুইডিটি ক্রাইসিস কেন হচ্ছে
লিকুইডিটি ক্রাইসিস হওয়ার কারণকে মোটাদাগে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে বাজারের ডলার সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে রিজার্ভ থেকে ১.২৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। অর্থাৎ, কমবেশি ১.২০ লাখ কোটি টাকা বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে চলে গেছে। একে বাজারে লিকুইডিটি ক্রাইসিসের অন্যতম কারণ বলছেন অর্থনীতিবিদেরা।
দ্বিতীয়ত, আমানত ও লোনের পার্থক্য। ব্যাংক সাধারণত জনগণ ও প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপোজিট সংগ্রহ করে লোন দিয়ে থাকে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া ও ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেট কম থাকার কারণে মানুষ ব্যাংকে ডিপোজিট কম করছে। উল্টো খরচ চালাতে আগের করা ডিপোজিট ভেঙে ফেলছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে আগের মাসের তুলনায় ডিপোজিট প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা কমেছে। সেপ্টেম্বরে ডিপোজিটের বার্ষিক গ্রোথ ছিল ৭.৭৪%, নভেম্বরে যেটি কমে হয়েছে ৬.৬৮%। অন্যদিকে, লোনের গ্রোথ ডিপোজিটের তুলনায় অনেক বেশি। সেপ্টেম্বরের (১১.৮৫%) তুলনায় নভেম্বরে (১০.৯৩%) লোন গ্রোথ কমলেও তা ডিপোজিট গ্রোথের তুলনায় অনেক বেশি।
তৃতীয়ত, ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণগুলো সময়মতো ফেরত না আসা। কোভিড, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইত্যাদি না কারণে ব্যবসায়ীদের লোন ফেরত দেওয়ার সময় বাড়ানোসহ নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ, নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে ২.৫-৪.৫% ডাউন পেমেন্ট প্রয়োজন। এর আগে, এটি নিয়মিতকরণের জন্য ১০-৩০% ঋণ পরিশোধ করতে হত।
গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো তাদের খেলাপি ঋণের ৫,৫৫১ কোটি টাকা পুনঃতফসিল করেছে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ৫০% - বা ১,৮৪৫ কোটি টাকা বেশি। ২০২২ সালের এপ্রিল-জুন মেয়াদে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩,৭০৬ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শুরুতে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১.০৩ লাখ কোটি টাকা। জুন শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১.২৫ লাখ কোটি টাকা এবং সেপ্টেম্বর শেষে তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১.৩৪ লাখ কোটি টাকায়।
এটিকেও লিকুইডিটি ক্রাইসিসের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চতুর্থত, উপরে কারণগুলোর কারণে কিছু ব্যাংকের লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্টে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মাঝেমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না কিছু ব্যাংক। খেলাপি ঋণ বেশি থাকার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার কেনার কারণে লিকুইডিটি ক্রাইসিসে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো। এর বাইরে ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংকসহ বেশকিছু ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে নামে বেনামে বের হওয়া ঋণ ফেরত না আসায় লিকুইডিটি ক্রাইসিস ফেস করছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ব্যাংক চাহিদামতো সিআরআর রাখতে পারেনি।
সবশেষে, কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেছে ব্যাংক খাত নিয়ে নানা নেতিবাচক খবর প্রকাশ ও রিউমার। এসব কারণে গ্রাহকেরা ডিপোজিট বেশি তুলছে, যেটি লিকুইডিটি ক্রাইসিসকে ট্রিগার করেছে।
সব ব্যাংকই কি লিকুইডিটি ক্রাইসিসে?
লিকুইডিটি ক্রাইসিসে ভুগছে ব্যাংক খাত, কথাটি অনেক সরল হয়ে যায়। ঘটনাটি সত্য, আবার সত্য নয়। দেশে বর্তমানে ৬১টির মতো ব্যাংক কর্মরত আছে। লিকুইডিটি ক্রাইসিস বা ক্রান্চ, যেটাই বলি না কেন, সবগুলো ব্যাংক এই পরিস্থিতিতে নেই। ব্যাংকগুলোর মধ্যে এমন অনেক ব্যাংক আছে, যাদের সারপ্লাস লিকুইডিটি আছে, তারা অন্য ব্যাংকগুলোকে প্রায় প্রতিদিনই ধার দিচ্ছে। এমন ব্যাংকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে কিছু ব্যাংক আছে, যাদের লিকুইডিটি অতোটা ভালো নয়, মূলত তারাই অন্য ব্যাংকের কাছে থেকে ধার চাচ্ছে।
লিকুইডিটি ক্রাইসিসে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা কেমন হতে পারে, ব্যাংক খাতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। একটি নেতৃত্বস্থানীয় ব্যাংকের ডিএমডি জানিয়েছেন, একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর ঠিকমতো দাঁড়াতে বেশ কয়েক বছর সময় লেগে যায়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে দেশে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো বিকশিত হওয়ার সুযোগ সেভাবে পায় নি। মার্কেটে তাদের গুডউইলও কম। ফলে তারা সেভাবে ডিপোজিট সংগ্রহ করতে পারে না। ইদানিং 'ব্যাংক থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে না' গুজবের কারণে এই ব্যাংকগুলোই সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর তালিকায় অন্তত ২৩/২৪টি ব্যাংক স্থান পাবে উল্লেখ করে অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার বলেন, গ্রাহকদের ডিপোজিট তুলে নেওয়ার চাপ এখনও রয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোকে ডিপোজিটের টাকা ফেরত দেওয়ার তাগিদ আছে। এই কারণেই যেসব ব্যাংকে গ্রাহকেরা ডিপোজিটের টাকা বেশি ভাঙাতে আসছে বা যাদের ব্যালেন্স শিট ছোট, তারা লিকুইডিটি ক্রাইসিসে পড়েছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, "আমাদের দেশে এক বছরের কম সময়ের মেয়াদী আমানতের পরিমাণ বেশি। অন্যদিকে, ব্যাংকগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে লোন দিতে হয়। ফলে আপনি আজকে চাইলেই দেওয়া লোনের সব টাকা ফেরত পাবেন না। কিন্তু অধিকাংশ ডিপোজিটের টাকা চাওয়ামাত্র ফেরত দেয় ব্যাংকগুলো। এখন ডিপোজিট তোলার চাপ যদি না কমে, ব্যাংকখাতে চলা এই লিকুইডিটি ক্রাইসিসের মেয়াদ আরো বাড়বে।"
লিকুইডিটি ক্রাইসিস কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন মানিটারি পলিসিতে কী করবে, অর্থনীতিবিদেরা কী বলছেন
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামীকাল রোববার জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য নতুন মানিটারি পলিসি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার লোনের ইন্টারেস্ট ক্যাপ তোলা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই রেটটিকে স্থির রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কীভাবে মানিটারি পলিসি প্রণয়ন করবে। মানিটারি পলিসিতে মূলত ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটকে স্থিতিশীল করার দিকেই নজর দিতে চাচ্ছে দেশের আর্থিক খাতে নীতিনির্ধারণী এই প্রতিষ্ঠান।
অর্থনীতিবিদদের অভিযোগ, প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের সস্তায় ঋণ দিতে ইন্টারেস্ট রেটের ক্যাপকে তুলছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে। সে তুলনায় ডিপোজিট বাড়ছে না। এই জায়গাতে গ্যাপ থাকার কারণে লিকুইডিটি ক্রাইসিস আরো বাড়ছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট জাহিদ হোসেনের মতে, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখন উচিত ইন্টারেস্ট রেটের ক্যাপ তুলে দেওয়া। ইন্টারেস্ট রেট হবে বাজারভিত্তিক। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত রিজার্ভ মানিকে টার্গেট করে মানিটারি পলিসি প্রণয়ন করে থাকে। এই টুলটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকার কারণে তারা এটিকে খুব সহজেই কন্ট্রোল করতে পারে।"
তবে ইন্টারেস্ট রেটে ক্যাপ রেখে এই টুল ব্যবহার খুব একটা কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রিজার্ভ মানিকে আর বাড়ানো উচিত হবে না উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, "রিজার্ভ মানি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে বাজারে মানি সাপ্লাই বেড়ে যাওয়া। এর ফলে ইনফ্লেশন ট্রিগার করবে।"
ডিপোজিটের পরিমাণ না বাড়লে লিকুইডিটি ক্রাইসিস সামাল দেওয়া কঠিন হবে মন্তব্য করে জাহিদ হোসেন বলেন, "মানুষকে অবশ্যই ডিপোজিট করতে উৎসাহিত করতে হবে। চলমান ইনফ্লেশনের কারণে ডিপোজিট বাড়ার সম্ভাবনা কম, তবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। কারণ, কম সুদের কারণে লোন গ্রোথ বাড়বে, এক্ষেত্রে ডিপোজিট না বাড়াতে পারলে ব্যাংক খাত আরো সমস্যায় পড়ে যাবে।"
অনেক ফিজিক্যাল টাকা ব্যাংক চ্যানেলের বদলে আন্ডারগ্রাউন্ড ইকনোমিতে চলে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "আমার ধারণা যেসব টাকা দেশের বাইরে ডলার হয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো ব্যাংক চ্যানেলের বাইরে থেকে গেছে। অর্থাৎ, টাকাগুলো ব্রিফকেসে করে হয়তো হাতবদল হচ্ছে, কিন্তু ব্যাংকে আসছে না। এটিও ব্যাংক খাতের লিকুইডিটি ক্রাইসিস বাড়াচ্ছে।"
এই অর্থনীতিবিদের সঙ্গে একমত পোষণ করে আইএমএফ এর সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আহসান এইচ মনসুর। তিনিও ইন্টারেস্ট রেটের ক্যাপ তুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েই বলেন। সেইসঙ্গে টাকা পাচার থামানোর পরামর্শও দিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "টাকা ও ডলারের সংকট একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। দেশ থেকে হুন্ডি, ওভারইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। এগুলো পাচার না হলে আমাদের ব্যাংক চ্যানেলে অনেক ডলার থেকে যেত। ফলে ব্যাংকগুলোকে ডলারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেতে হতো না। তাহলে বাজার থেকে লিকুইড মানিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে যেতো না। ব্যাংক চ্যানেলে চলমান টাকা ও ডলারের ক্রাইসিস কমাতে হলে আমাদের টাকা পাচার হওয়াকে যেভাবেই হোক থামাতে হবে।"
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি আরফান আলী টিবিএসকে বলেন, "বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনা প্যাকেজের লোনকে টার্ম লোনে রূপান্তর করে সময় বাড়িয়ে দেওয়াও ব্যাংকগুলোতে সামনের বছর লিকুইডিটিতে টান পড়ার একটা কারণ। এমন না করলে ঋণগুলো ব্যাংকের কাছে ফেরত আসতো। তখন ব্যাংক আবার ঋণ দিতে পারতো। এসব দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এই বছর টাকাপয়সার একটু টান থাকবে ব্যাংক চ্যানেলে। বিশেষ করে দূর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য একটু অসুবিধা হবে।"