রিয়ালকে উড়িয়ে সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতে এই প্রতিযোগিতা ১৪ তম বারের মতো জিতলো বার্সেলোনা। বার্সার শিরোপা জয়ে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন রবার্ট লেভানডোভস্কি ও গাভি। দুজনই একটি করে গোল এবং অ্যাসিস্ট করেছেন, বার্সার অন্য গোলটি করেছেন পেদ্রি। ম্যাচের শেষ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে করিম বেনজেমা একটি গোল শোধ করলেও সেটি ছিল কেবলই সান্ত্বনা।
স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদ পাত্তাই পায়নি। সৌদি আরবের কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে রিয়াল যেন আত্মসমর্পণই করেছে বার্সেলোনার কাছে। ম্যাচে ছিলো না এল ক্লাসিকোর চিরাচরিত উত্তেজনা ছিটেফোঁটাও।
যদিও ম্যাচের শুরুতে বোঝা যায়নি যে খেলা একতরফা হতে যাচ্ছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেই মনে হচ্ছিল। বল দখলে রিয়াল এগিয়ে থাকলেও, আক্রমণে ভয় দেখাচ্ছিল কাতালানরাই। ম্যাচের ১৩ মিনিটে সামান্যের জন্য গোলের সুযোগ নষ্ট করেন লেভানডোভস্কি। ডি-বক্সের সামান্য বাইরে থেকে নেওয়া তার শট রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার হাত ছুঁইয়ে পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এরপর আলেহান্দ্রো বালদের ফিরতি শটও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
এরপর সুযোগ পায় রিয়াল, ১৯ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল লস ব্লাঙ্কোসদের সামনে। তবে করিম বেনজেমার হেড অল্পের জন্য জালে জড়ায়নি। এরপর দুই দলই নিজেদের স্বভাবিক ছন্দে খেলতে থাকে। বার্সার কাছে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও রিয়াল চেষ্টা করছিল প্রতি আক্রমণে জাভির দলকে ভড়কে দেওয়ার। গোলের জন্য দুই দলের আপ্রাণ চেষ্টা ম্যাচের উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছিল।
ধারাবাহিক আক্রমণের ফলাফল পায় বার্সা, ম্যাচের ৩৩ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। রিয়াল ডিফেন্সের ভুলে বল পেয়ে লেভানডোভস্কি পাস বাড়ান গাভির উদ্দেশ্যে। বল পেয়ে ভুল করনেনি এই তরুণ তুর্কি। নিঁখুত ফিনিশিংয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ১৮ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার।
গোল খেয়ে জেগে ওঠার চেষ্টা করে রিয়াল। বার্সা ডিফেন্সে একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে আন্সেলোত্তির দল, তবে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি তারা। উল্টো বিরতির আগ মুহূর্তে আবারও দেখা মেলে বার্সার প্রথম গোলের জুটির কারিকুরি। এবার গাভির পাস থেকে গোল করেন লেভা।
তবে এই গোলে অবদান আছে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের, তার দুর্দান্ত একটি পাস ধরেই গাভি বল দিয়েছেন লেভানডোভস্কিকে। প্রথম গোলের মতো এই গোলেও ভুল করে রিয়ালের ডিফেন্স। যার ফলে প্রথমার্ধেই ম্যাচ থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে রিয়াল।
বিরতির পর ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় কামাভিঙ্গাকে তুলে নিয়ে রদ্রিগোকে নামান রিয়াল কোচ কার্লো আন্সেলোত্তি। তবে বার্সেলোনা প্রথমার্ধের মতোই আধিপত্য নিয়ে খেলতে থাকে। ৫১ মিনিটে তৃতীয় গোলটি করে ম্যাচটা সেখানেই শেষ করে দিতে পারত বার্সা। উসমান দেম্বেলের শট রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়ার দুর্দান্ত সেইভের কারণে সে যাত্রায় বেঁচে যায় লস ব্লাঙ্কোসরা।
এ সময় গোল করা দূরে থাক, সেভাবে গোলের সুযোগই তৈরি করতে পারছিল না রিয়াল। উল্টো বার্সাই বারবার হুমকির মুখে ফেলছিল তাদের। সেই সুবাদেই ম্যাচের ৬৯ মিনিটে আরেকবার ধসে পড়ে রিয়াল ডিফেন্স। এবারও তাদের রক্ষণভাগের ভুল ছিল চোখে পড়ার মতো।
৭০ মিনিট পেরোনোর আগেই শেষ হয়ে যায় রিয়ালের শিরোপা ধরে রাখার সম্ভাবনা। এরপর চেষ্টা করেও আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি বেনজেমা-ভিনিশিয়ুসরা। রিয়ালের দারুণ কিছু আক্রমণ ফিরিয়েছেন বার্সেলোনার গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগান।
শেষ দিকে রিয়ালের হয়ে বেনজেমা একটি গোল শোধ করেন, কিন্তু ততোক্ষণে যা সর্বনাশ হওয়ার টা হয়েই গিয়েছে। তাই গোলটি সান্ত্বনা হিসেবেই থেকে যায় রিয়ালের।
শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে ২০২৩ সালের প্রথম এল ক্লাসিকো জয়ের স্বাদ পায় বার্সেলোনা। সেই সাথে মেসি পরবর্তী যুগের প্রথম শিরোপাও লাভ করে জাভির দল।