টিম বয়দের সাহায্যে পঞ্চপাণ্ডবের উদ্যোগ
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের শক্তি। দৃঢ় হচ্ছে মনোবল, বেজে উঠছে মানবতার জয়গান। দুস্থ-অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছেন অনেকই। এই তালিকায় বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারই আছেন। নিজ নিজ জায়গা থেকে করোনাভাইরাস দুর্গদের সাহায্য করে যাচ্ছেন তারা।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই চলছে লকডাউন। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। এই স্থবিরতায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। দেশের ক্রিকেট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যাওয়ায় অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে টিম বয়, মাসাজম্যানদের।
এদের অবস্থার কথা চিন্তা করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার। মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ; এই পাঁচ ক্রিকেটার প্রত্যেকে এক লাখ টাকা করে অনুদান দিচ্ছেন টিম বয়, মাসাজম্যানদের জন্য।
৫০ জনের মতো টিম বয় ও মাসাজম্যানকে সাহায্য করার এই বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন তামিম ইকবাল। জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই ওপেনার জানিয়েছেন, মুশফিকুর রহিমের উদ্যোগে সিনিয়র পাঁচ ক্রিকেটার এক হয়ে টিম বয়, মাসাজম্যানদের সাহায্যে এক লাখ টাকা করে দিচ্ছেন।
তামিম ইকবাল বলেন, 'আমরা এমন একটা উদ্যোগ নিয়েছি। টিম বয়, মাসাজম্যানদের আমরা একটা পরিমাণ টাকা দিচ্ছি। এটা প্রথমে মুশফিক বলেছে। এই উদ্যোগটা মুশফিক নিয়েছে। ও উদ্যোগ নিয়ে আমাদের চারজনের সাথে কথা বলেছে।'
দেশসেরা এই ব্যাটসম্যান আরও বলেন, 'আমাদের এই কার্যক্রমে সাকিবও আছে। অর্থাৎ আমরা ৫ জন। সবার কাছে জিজ্ঞাস করেছে মুশফিক, আমরা রাজি হয়ে সবাই এক লাখ টাকা করে কন্ট্রিবিউট করেছি। যেটা দিয়ে তাদের তিন মাস চলে যাবে। অন্তত তিন মাস তাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। মুশফিক নিজ উদ্যোগে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। এরপর আমরা এক সাথে হয়ে এই জিনিসটা করছি।'
এই ব্যাপারটি টিম বয়দের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা করছেন প্রাইম ব্যাংকের টিম বয় দেলওয়ার হোসেন সেন্টু। তিনি বলেন, 'আমরা ঘরোয়া লিগে কাজ করি। এখন তো সব খেলাধুলা বন্ধ। তো আমরা মুশফিক ভাই, তামিম ভাইদের কাছে আবেদন করেছিলাম। উনারা বলেছিলেন দেখব। এরপর উনারা আমাদের সহায়তা করেছেন। আমাদেরকে টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমরা বিসিবির বেতনভুক্ত নই। এখন পর্যন্ত বিসিবি থেকে আমরা কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি।'
টিম বয়, মাসাজম্যানদের সাহায্যে এগিয়ে আসা সিনিয়র এই পাঁচ ক্রিকেটারের প্রত্যেকে নিজেদের জায়গা থেকে করোনা মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি সরকারি ও নিজ অর্থায়নে দুস্থ মানুষদের সাহায্য করে যাচ্ছেন। তার নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনও মাঠে থেকে কাজ করছে।
এক মাসের বেতনের অর্ধেকটা দান করার পর বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০ পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট), হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক দিয়েছেন দিয়েছেন মুশফিক। এ ছাড়া দেশের হয়ে টেস্টে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করা ব্যাটটি নিলামে তুলতে যাচ্ছেন তিনি। নিলাম থেকে পাওয়া অর্থের পুরোটাই দুস্থ মানুষের সাহায্যে খরচ করবেন মুশফিক।
তামিম ইকবালও লড়াই অব্যহত রেখেছেন। অ্যাথলেট সামিউল ইসলামের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। গত বছর জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দ্রুততম মানব হওয়া সামিউলের পরিবারের তিন মাসের খরচ দিয়েছেন বাংলাদেশ ওপেনার। সাকিব তার 'দ্য সাকিব আল ফাউন্ডেশন'- এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।