দ্বিতীয় দিন শেষেই বাংলাদেশ শিবিরে জয়ের সুবাস
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ যে পুঁজি গড়েছে, তা নিশ্চয়ই আশা পূরণের মতো নয়। এরপরও বড় একটা লিড মেলে। যা পেরিয়ে বাংলাদেশকে লক্ষ্য দিতে নেমে মুহূর্তেই ওলট-পালট হয়ে গেছে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের বোলিং তোপে দিকহারা আয়ারল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায়।
মিরপুর টেস্টে আয়ারল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে করা ২১৪ রানের জবাবে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজদের ব্যাটে ৩৬৯ রান তোলে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসেই ১৫৫ রানের লিড পায় সাকিবের দল। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ২৭ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়েছে আইরিশরা। ইনিংস হার এড়াতে তাদের আরও ১২৮ রান করতে হবে, হাতে আছে ৬ উইকেট।
আয়ারল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে উজ্জীবিত সাকিবকে মাঠে পাওয়া যায়নি। এমনকি সেভাবে বোলিংও করেননি তিনি। ৬৬তম ওভারে প্রথমবারের মতো বল হাতে নেওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ক মাত্র ৩ ওভার বোলিং করেন। বাংলাদেশের আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম একাই নেন ৫ উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে আর বোলিং করা থেকে নিজেকে দূরে রাখেননি সাকিব। আইরিশদের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ওভারেই বোলিং আসেন তিনি, আর চতুর্থ বলেই তুলে নেন জেমস ম্যাককলামের উইকেট। যদিও সাকিবের এলবিডব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেননি। রিভিউ নিয়ে সফল হন তিনি। ম্যাচে এখন পর্যন্ত এটাই একমাত্র সফল রিভিউ।
এরপর আইরিশদের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠেন তাইজুল। আগের ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ভোগানো বাংলাদেশের এই স্পিনার দুই ওভারের ব্যবধানে মারে কমিন্স ও আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যান্ডি ব্যালবার্নিকে ফিরিয়ে দেন। এক ওভার পরে গিয়ে আবারও সাকিবের তোপ, এবার শিকার কার্টিস ক্যাম্ফার। ১৩ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে আর উইকেট হারাতে দেননি হ্যারি টেক্টর ও পিটার মুর। টেক্টর ৮ ও মুর ১০ রানে অপরাজিত আছেন।
এরআগে প্রথম দিন প্রথম ইনিংসে ১০ ওভারে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ, ২ উইকেটে তোলে ৩৪ রান। নাজমুল হোসেন শান্ত কোনো রান করার আগেই থামেন, দিনের শেষ বলে আউট হওয়া তামিম ইকবাল করেন ২১ রান। দ্বিতীয় দিনের শুরুটা ভালো ছিল না। এদিন আর ৫ রান করে বিদায় নেন ৩৪ বলে ১৭ রান করা সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক।
৪০ রানে ৩ উইকেট হারালেও অবশ্য দলকে কোনো চাপই বুঝতে দেননি মুশফিক-সাকিব। মুশফিক স্বাভাবিক গতিতে ব্যাট চালালেও সাকিব খেলেন আক্রমণাত্মক হয়ে। মুহুূর্তে চাপ উধায়। বাংলাদেশের স্কোরকার্ড হতে থাকে সমৃদ্ধ। চতুর্থ উইকেটে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন মুশফিক-সাকিব।
এই জুটি গড়ার পথে ৪৫ বলে ৯টি চারে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩১তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। বাংলাদেশষ এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথেই, কিন্তু ৮০ পেরিয়ে থামতে হয় তাকে। ৯৪ বলে ১৪টি চারে ৮৭ রান করেন সাকিব। ছয় বছর ধরে টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পান সাকিব, ২০১৭ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের শততম টেস্টে ১১৬ রানের ইনিংস খেলার পর আর তিন অঙ্কে যাওয়া হয়নি তার।
সাকিবের বিদায়ের পর লিটন কুমার দাসের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। এ সময় টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ১৩৫ বলে ১৩টি চার ও একটি ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্রুততম। আজ হাফ সেঞ্চুরির মতো সেঞ্চুরিতেও চার মেরে পৌঁছান মুশফিক।
মুশফিকের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়লেও খুব বেশিক্ষণ উইকেটে ছিলেন না লিটন। ওয়ানডে মেজাজে ৪১ বলে ৮টি চারে ৪৩ রান করে থামেন তিনি। আরও কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে আউট হন মুশফিক। এর আগে ১৬৬ বলে ১৫টি চার ও একটি ছক্কায় ১২৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক।
মুশফিকের বিদায়ের পর মিরাজই যা লড়েছেন। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ৮০ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৫ রান করেন। টেস্টে এটা তার চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ ৪ রান করে করেন। আয়ারল্যান্ডের অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ১১৮ রান খরচায় ৬টি উইকেট নেন। টেস্টে এটাই তার সেরা বোলিং। মার্ক এডেয়ার ও অভিষিক্ত বেন হোয়াইট ২টি করে উইকেট নেন।