ঈদে জমজমাট বিনোদন অঙ্গন: টিভি নাটকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ইউটিউব নাটক
বছরঘুরে আবারও দোরগোড়ায় ঈদুল ফিতর। ঈদে দর্শক বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিচিত টিভি নাটক। বিশেষ করে, গত এক দশকে অধিকাংশ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টিভিমুখী দর্শকের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। ঈদের সময়ে তাই টিভি চ্যানেলগুলোও নাটক প্রচারে মনযোগ দিয়েছে বেশি।
তবে এখন ইন্ডাস্ট্রিতে ইউটিউবকেন্দ্রিক নাটকেরও একটি বিকল্প বাজার গড়ে উঠেছে। শুধুমাত্র ইউটিউবে মুক্তির জন্যই গত কয়েক বছর ধরে তৈরি হচ্ছে নাটক; আর ঈদ হলো এসব নাটকে দর্শক আকর্ষণের সবচেয়ে ভালো মৌসুম।
ঈদের সময় টিভি চ্যানেলের মতো ইউটিউবেও বেশ গুরুত্ব দিয়ে এখন নাটক নির্মিত হচ্ছে। নিয়মিত নাটক প্রচার করছে এমন অন্তত ২০টির মতো ইউটিউব চ্যানেলে ঈদের নাটক প্রচার হবে এবার। এরমধ্যে সবচেয়ে নতুন এবং মান সম্মত নাটক প্রচার করবে ইউটিউব চ্যানেল 'সিএমভি'। তারা ১৫টি একক নাটক প্রচার করবে এবারের ঈদে, যার বাজেট এক কোটির টাকার ওপরে। আর এসব নাটকে অভিনয় করছেন নিয়মিত শীর্ষ টিভি অভিনেতারা।
যদিও শুধু ইউটিউবে মুক্তির জন্য নির্মিত নাটকগুলোর মোট বাজেট অনুমান করা কঠিন, তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদে এ ধরনের নাটকের বাজেট প্রায় ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে, ঈদে টিভি নাটকের আনুমানিক বাজেট ১৪ কোটি টাকা এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বাজেট ২ কোটি টাকা।
সিএমভির স্বত্বাধিকারী এসকে শাহেদ আলী পাপ্পু জানান, এবারের ঈদের নাটকে অপূর্ব, নিলয় আলমগীর ও কেয়া পায়েলের মতো নামকরা অভিনেতাদের দেখা যাবে। প্রতিটি নাটকের বাজেট টিভি চ্যানেলের নাটকের মতোই, ৪ লাখ থেকে ১৩ লাখ টাকা।
"আগে ইউটিউব নাটকের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা কঠিন ছিল; কিন্তু এখন স্পনসরশিপের মাধ্যমে আমরা প্রায় সারাবছরই ভাল ইনকাম করি। আমাদের টিভি চ্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় যে জায়গাটিতে আমরা সুবিধা পাই তা হলো, ইউটিউবের নাটকগুলো সব সময়ই অনলাইনে পাওয়া যায় এবং যে কেউ যখন-তখন যেকোনো স্মার্ট ডিভাইসে এগুলো উপভোগ করতে পারেন," বলেন পাপ্পু।
ইউটিউবে আরেকটি জনপ্রিয় চ্যানেল হলো ধ্রুব টিভি। মৌলিক নাটক নির্মাণ করে তারা। ধ্রুব টিভির সহকারী মহাব্যবস্থাপক ওমর ফারুক জানান, ২০১৭ সালে চ্যানেলটি প্রথম চালু হয়। শুরুতে লাভের মুখ তেমন একটা দেখা না গেলেও, এখন আর তাদের লোকসানে চলতে হয় না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইউটিউবে মুক্তি পাওয়া নাটকগুলো টিভি চ্যানেলের নাটকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে কি-না জানতে চাইলে দীপ্ত টিভির দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক 'বকুলপুর'-এর প্রযোজক আব্দুল আলীম বলেন, "যখন থেকে ইউটিউবে মৌলিক নাটক নির্মাণ শুরু হয়েছে, তখন থেকে আসলেই প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। এতে কাজের মানও উন্নত হয়েছে। তবে ইউটিউবের নাটকগুলো টার্গেট ভিউকে কেন্দ্র করে নির্মিত হলেও, টিভি নাটকগুলো নির্মিত হয় ভাল গল্প এবং গ্ল্যামারের ওপর ভিত্তি করে।"
তিনি আরও বলেন, বিকল্প প্ল্যাটফর্মের কারণে নয়, বরং টিভি নাটকের আয় কমেছে বিজ্ঞাপনের দাম কমায় এবং অনেক বেশি নতুন টিভি চ্যানেলের কারণে।
এ প্রসঙ্গে টেলিভিশন প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপাব) সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির বলেন, আজকাল ইউটিউবে ভালো বাজেটের নাটক তৈরি হচ্ছে।
"সঠিকভাবে তদারকি করতে পারলে ইউটিউবকেন্দ্রিক নাটকের ব্যবসা আরও শক্ত অবস্থানে পৌঁছাবে বলে আমি মনে করি," যোগ করেন তিনি।
তবে নাটক নির্মাণের দিক দিয়ে টিভি চ্যানেলগুলো এখনও অনেক এগিয়ে। এবারের ঈদে প্রায় ৩২৬টি নতুন নাটক টিভিতে প্রচার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাগরিক টিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান কামরুজ্জামান বাবু বলেন, "আমরা কেবল কোভিড মহামারি কাটিয়ে উঠেছি। তবে নাট্যাঙ্গন গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশ সক্রিয়। মোটামুটি সবাই কাজ করছেন। যতটুকু জেনেছি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবারের ঈদে। এটি আমাদের শিল্পের জন্য ইতিবাচক দিক।"
টেলিপ্যাবের সভাপতি নাট্য প্রযোজক মনোয়ার পাঠান বলেন, "টিভি নাটকের যে মন্দাভাব ছিল, তা এই ঈদ থেকেই হয়ত অনেকটা কেটে যাবে। কারণ বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে নিঃসন্দেহে। তাছাড়া, প্রয়োজকরাও আগের চেয়ে নাটক নির্মাণের সংখ্যা বাড়িয়েছেন।"
এদিকে, ঈদ সামনে সিনেমাঙ্গনও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত ১১টি সিনেমা মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। তবে প্রযোজক সমিতি কিংবা প্রযোজক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ভিন্ন কথা। ঘোষণা থাকলেও শেষ পর্যন্ত চার-পাঁচটির বেশি সিনেমা হয়ত মুক্তি পাচ্ছে না এবারের ঈদে।
জানা গেছে, মুক্তির তালিকায় থাকা সিনেমাগুলোর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র প্রযোজক ও চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য খোরশেদ আলম খসরু বলেন, "গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের ঈদে বেশি সিনেমা ও বিগ বাজেটের সিনেমা মুক্তি হচ্ছে। এটি অবশ্যই ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক দিক। তবে সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রযোজকদের জন্য ভালো আয় করা কঠিন হবে।"
দেশজুড়ে আগে প্রায় ১,২০০টি সিনেমা হল বা প্রেক্ষাগৃহ থাকলেও এখন ঈদের সময় চালু থাকে ১০০টির মতো। আর সারাবছর মাত্র ৪৫ থেকে ৫০টি সিনেমা হল খোলা থাকে।