বঙ্গবাজার: ‘৭ লাখ টাকার ঋণ কীভাবে শোধ করবো, সংসার চালাবো কীভাবে?’
ঈদের দিন পরিবারকে বাসায় রেখে বঙ্গবাজারের পোড়া দোকানের সামনে খোলা আকাশের নিয়ে বসে আছেন মোহম্মদ তুহিন।
"বাসায় মন টেকে না। বুকটা ফেটে যায়। আমার ৩টা দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনো আশার আলো দেখছি না," বললেন তুহিন।
ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হওয়া রাজধানীর বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের নিচ তলায় ২টি ও তিনতলায় ১টি গোডাউন ছিল তার। প্রতিষ্ঠানের নাম তুনিন গার্মেন্টস। এক্সপোর্ট কোয়ালিটির গেঞ্জি বিক্রি হতো দোকানগুলোতে।
তুহিন বলেন, "সামনের দিনে কী খাবো, পরিবার নিয়ে কীভাবে চলবো- সেই চিন্তায় চোখে ঘুম নেই।"
রাজধানীর বংশালে ১৫ হাজার টাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তুহিন। টাকা নেই তাই বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। বাড়িওয়লা একমাসের ভাড়া নেন নি। আগামী মাসে (মে মাস) তাকে বাসা ছেড়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, "ভাড়া না হয় একমাসের দিতে হবে না। কিন্তু তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে খাবো কী?"
ঈদের ব্যবসার কথা চিন্তা করে একবারে কয়েক লাখ টাকার নতুন পোশাক দোকানে তুলেছিলেন তুহিন।
"দোকানে থাকা ৩৫ লাখ টাকার মালপত্র ও ক্যাশবাক্সে নগদ ৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা পুড়ে গেছে। ১৫ বছর ধরে এখানে দোকানদারি করেছি, সব সঞ্চয় শেষ হয়ে গেল," বলেন তিনি।
তুহিনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। বাসার ব্যবহার করা মালপত্র নিয়ে সেখানে যেতে প্রায় ১০ হাজার টাকা ভাড়া লাগবে, কিন্তু সেই টাকাও তার কাছে নেই।
তুহিন বলেন, "ঈদের সময় ছেলে একটি প্যান্ট কিনতে চেয়েছে, দিতে পারি নি। বুকটা ফেটে গেছে। কথা বলার সময় তার চোখে পানি চলে এসেছিল। ১০ বছর বয়সী ছেলেও বুঝেছে হাতে টাকা নেই। বলেছে, বাবা আগামী ঈদে শার্ট কিনে দিও, এবার একটা প্যান্ট কিনে দেও।"
তুহিন জানান, অনেকের কাছ থেকে ধারদেনা করে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। ব্রাক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন প্রায় ৭ লাখ টাকা। এখন নিজের ঘরেই খাবার নেই, তার ওপর চেপেছে ঋণ শোধ করার বোঝা।
ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যবসায়ীদের এমন পরিস্থিতির কথা এখনও শোনা যায় বঙ্গবাজারে। তারা এসে বসে থাকেন বঙ্গবাজারের খালি মাঠের অস্থায়ী চকিতে।
তুহিন বলেন, অস্থায়ী চকি পেতে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছিল, কিন্তু কোনো মাল নেই দেখে বসতে পারি নি।
ঈদের দিন শনিবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১২ টার দিকে আরও কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মোহম্মদ মিলন ও মোহম্মদ মাকছুদ পাটোয়ারির সঙ্গে।
শকমিই গার্মেন্টসের মালিক মোহম্মদ মিলনের একটি দোকান ও একটি গোডাউন পুড়েছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তিনি বলেন, "সরকার যদি আমাদের সহায়তা না করে আমরা পথে বসে যাবো। সরকার যেন দ্রুত এই মার্কেট তৈরি করে দেয়। দেরি করলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরবো।"
মোহম্মদ মাকছুদ পাটোয়ারির দোকানের নাম পাটোয়ারি গার্মেন্টস। তার ২টি দোকান ও একটি গোডাউন পুড়েছে তার। তিনি জানান, এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা।
মাকছুদ পাটোয়ারি বলেন, "এক বস্তা চাল কিনে দিয়েছিল একজন। আর ১৫ হাজার টাকা ছিল, সেটা দিয়ে চলছি। সামনে কী হবে বুঝতে পারছি না।"
"ইচ্ছে ছিল ঈদের পর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে ঘর উঠাবো। গ্রামে এখনও কোনো ঘর নেই। ছেলে বড় হচ্ছে, গ্রামে যাবো। সব শেষ হয়ে গেল," যোগ করেন তিনি।