চিকিৎসক দম্পতির ছাদ বাগান
মনে হতে পারে এটি একটি স্বর্গোদ্যান। হরেক রকমের ফুল-ফলের সমারোহ বাড়ির ছাদ জুড়ে। মনোমুগ্ধকর বাগানটিতে আছে দূর্লভ দেশি-বিদেশি গাছের সমারোহ। দ্বিতল বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত নানান গাছের সমন্বয়ে এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন পাবনার চিকিৎসক দম্পতি মনোয়ারুল আজিজ ও তাহসীন। বাড়ির ছাদে ফল-ফুল ও শাক-সবজির বাগান গড়ে তুলে সাড়া ফেলেছেন তারা।
বৃক্ষপ্রেমী দন্ত চিকিৎসক মনোয়ারুল আজিজ ছিলেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে স্ত্রীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় গড়ে তুলেছেন বিশাল এক ছাদ বাগান। বাড়ির ছাদে মনোরম সবুজের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন কৃষির নির্যাস।
বাবার রেখে যাওয়া কিছু দুর্লভ গাছ পরিচর্যা করতে গিয়ে বাগান করার সখ জাগে সাবেক সিভিল সার্জন ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ তাহসীনার। বৃক্ষপ্রেমী স্বামী মনোয়ারুল আজিজ স্ত্রীর মনোবাসনা পূরনের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। দুজনে মিলে বাড়ির ছাদে গড়ে তোলেন বৃক্ষোদ্যান।
প্রথমে বাড়ির উঠোনে কিছু ফল-ফুলের গাছ দিয়ে শুরু। তারপর বাড়ির কানি-কোণা, বারান্দা ও ছাদ ভরে তুলেন সৌখিন বৃক্ষরাজিতে। দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে গাছগুলো হয়ে ওঠে তাদের জীবনেরই অংশ।
পাবনা শহরের দিলালপুর এলাকার বাড়িটিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস পাবনার স্বনামধন্য ওই চিকিৎসক দম্পতির। বৃক্ষপ্রেমী মানুষের কাছে বাড়িটি এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সৌখিন এই দম্পতির দেখাদেখি অনেকেই ছাদ বাগানে আকৃষ্ট হচ্ছেন। শহরের বাড়িতে বাড়িতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সৌখিন বাগান ও ছাদ-কৃষি।
মহসীনা-আজিজ চিকিৎসক দম্পতি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে সেবার দরজা বন্ধ করেননি। সবুজে ঘেরা এই বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন রোগী দেখার চেম্বার। ছাদ বাগানের সমারোহ উপভোগ করেন রোগী ও তাদের স্বজনরাও। এছাড়া ছাদ-বাগান কৃষি কর্ম-কৌশল দেখতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বৃক্ষমোদী মানুষ। নান্দনিক বাগানে মুগ্ধতায় কাটে রোগীদের অপেক্ষার প্রহর।
দোতলা বাড়িটির যেদিকে চোখ যায়- শুধু গাছ আর গাছ। সবুজ পাতার আড়ালে ফুলে-ফলে ছেয়ে আছে চারপাশ। দেয়ালে ঝুলছে সজীব লতা। তাতে ফুটেছে নানান রঙের ফুল। সারি সারি গাছগুলো নজর কাড়ে খুব সহজেই। দেশি-বিদেশি জাতের ফল, ফুল ও শোভাবর্ধন গাছসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির গাছ। মিটছে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা।
চিকিৎসক দম্পতির এই বাড়ির আশপাশ ও ছাদ সুচারুভাবে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ, সূর্যমুখী, ডালিয়া, পিটুনিয়া, অর্কিড, গন্ধরাজ, জুঁই, হাসনাহেনা, আম, লেবু, ছোবেদা, ডালিম, পেয়ারা, পামসহ পাঁচ শতাধিক ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে। এখানে রয়েছে বাহারি সৌন্দর্যবর্ধক লতা, গুল্ম, পাতাবাহার আর ক্যাকটাসের সমারোহ। রযেছে দেশি-বিদেশি নানান প্রজাতির অর্কিড ।
চিকিৎসক মনোয়ারুল আজিজ বলেন, বাগান পরিচর্যা একটি উত্তম শরীরচর্চা। ছাদ বাগান বাড়ির সৌন্দর্য যেমন বাড়ায়, তেমনি মানুষের শরীর ও মন প্রফুল্ল রাখে। নগর জীবনের ব্যস্ততার মাঝে কেবল মনের খোরাক জোগাতে নয়, পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি বাড়ির ছাদে এমন বাগান এখন সময়ের দাবি।
আজিজ পত্নী স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ তাহসীন বলেন, নিজ বাড়ির ছাদে উৎপাদিত ভেজালমুক্ত ফল ও সবজি দিয়ে পরিবারের প্রতিদিনের চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, “প্রতিনিয়ত পরিবেশের উষ্ণতা ভীতিকর পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রতিটি বাড়ির ছাদে বাগান করা হলে আমাদের বাড়ির উষ্ণতা যেমন কমবে পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”
পাবনা কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল আলম বলেন, এই চিকিৎসক দম্পতি শহরবাসীর জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাড়ির ছাদ বা আঙ্গিনা ফেলে না রেখে বাগান তৈরির আহ্বান জানান তিনি। ছাদ বাগান তৈরিতে আগ্রহীদের সকল সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।