আম কেনা থেকে শুরু করে বিলাসবহুল ঘড়ি, ২০০০ রূপির নোট হাতবদলের প্রাণান্ত চেষ্টা
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ভারতের বাজার থেকে ২০০০ রূপির নোট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকে দেশটিতে এই নোট ভাঙিয়ে নানা পণ্যদ্রব্য কেনার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতেও ২০০০ রূপির নোট ব্যবহার করছেন ভারতীয়রা। মূলত ব্যাংকে গিয়ে নোট বদলে নেওয়া বা ডিপোজিট করার ঝক্কি এড়াতে এমনটা করছেন তারা। খবর রয়টার্সের।
গত ১৯ মে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা দেয়, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দেশটির সবচেয়ে বড় অংকের কাগজি নোট, ২০০০ রূপির নোট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ না জানালেও, বিশ্লেষকরা বলছেন এমন একটি সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তটি এসেছে যখন ভারতের রাজ্য ও সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে নগদ লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এসব অনেক চুক্তিরই কোনো খবর পাওয়া যায় না।
তবে ২০১৬ সালে রাতারাতি দেশটির ৮৬ শতাংশ মুদ্রা রহিতকরণের পদক্ষেপ নেওয়ার পর যেমনটা হয়েছিল, এবার মুদ্রা বিনিময় সেরকম বিঘ্নিত হবে না বলে মনে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এদিকে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ২০০০ রূপির নোট বদলে নেওয়া বা বড় অঙ্ক ডিপোজিট করে আবার কর বিভাগের তদন্তের মুখে পড়ার ঝামেলা নিতে চাইছেন না অনেকেই। এর ফলে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। দোকানিরাও আগ্রহ নিয়ে ২০০০ রূপির নোট গ্রহণ করছেন। কারণ তারা এই পরিস্থিতিকে নিজেদের বিক্রিবাট্টা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছেন। মঙ্গলবার দোকানিদের অনেকেই জানান, প্রথম দিন মুদ্রা বিনিময়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
ভারতের রাজধানী মুম্বাইয়ের ক্রফোর্ড মার্কেট এলাকার পাশের একজন আম বিক্রেতা মোহাম্মদ আজহার বলেন "শনিবার থেকে অনেকেই ২০০০ রূপির নোটের বিনিময়ে আম কিনছেন। এখন প্রতিদিনই এই নোট ৮-১০টা করে পাচ্ছি। আমি এই নোট নিচ্ছি, কারণ আমার আর কোনো উপায় নেই। এটা তো আমার ব্যবসা। তবে ৩০ সেপ্টেম্বরের আগেই আমি এই নোটগুলো ব্যাংকে ডিপোজিট করে দিব। যেহেতু এই নোট বৈধ, তাই ভয়ের কোনো কারণ নেই।"
মুম্বাইয়ের একটি শপিং মলে রাডো'র দোকানের ম্যানেজার মাইকেল মার্টিস জানান, ২০০০ রূপির নোট প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণার পর থেকে তার দোকানে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। "আগে দিনে ১-২টা ঘড়ি বিক্রি হতো, এখন ৩-৪ পিস ঘড়ি বিক্রি হয়", বলেন মার্টিস।
সোমবার ফুড ডেলিভারি ফার্ম জোম্যাটো তাদের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে জানায়, শুক্রবার থেকে তাদের খাবার ডেলিভারির ৭২ শতাংশ অর্ডারেই ২০০০ রূপির নোট দিয়ে মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিশদ জানতে চাওয়া হলে কোম্পানির মুখপাত্র বলেন, ওই টুইটটি ঠাট্টার ছলে করা হয়েছে এবং এটি পুরোপুরি সঠিক তথ্য নয়। সেইসঙ্গে কোম্পানিটি সত্যিকার হিসাব জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।
তবে সব দোকানদাররা যে এই নোট গ্রহণ করতে আগ্রহী তা নয়। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের একজন রেস্টুরেন্ট মালিক বলেন, "আমি এই নোট গ্রহণ করছি না, করবো না। আমি ব্যাংকে গিয়ে ডিপোজিট করার ঝামেলায় জড়াতে চাই না।"
এর আগে ২০১৬ সালে ৫০০ ও ১০০০ রূপির নোট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর ভারতীয়দের যেভাবে নোট বদলে নেওয়ার জন্য ব্যাংকে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে, এবার তেমনটা দেখা যায়নি। মুম্বাই ও নয়াদিল্লির ব্যাংকগুলোতে মোটামুটি শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছিল এবং অল্প কিছু সংখ্যক মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায়। কারণ এই ব্যাংকে একবারে সর্বোচ্চ ২০,০০০ রূপি পর্যন্ত বিনিময়ের ক্ষেত্রে কোনো কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে না।