এনবিএফআই থেকে ১ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণে মনিটরিং বাড়ালো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অনিয়ম রোধ এবং দুর্বল খাতে সহায়তা বাড়ানোর লক্ষ্যে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) থেকে ১ কোটি টাকা ও তদুর্দ্ধ অংকের যে কোন প্রকার ঋণের জন্য প্রাক-অডিট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব ফিন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন্স অ্যান্ড মার্কেটস (ডিএফআইএম) এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি করেছে।
ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সব নিয়মকানুন মানা হয়েছে কিনা, তা তদারকি বাড়াতে ড্যাশবোর্ড চালু করার জন্য বলা হয়েছে সার্কুলারে।
এছাড়া ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে তা সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করার জন্য এনবিএফআইগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, "সম্প্রতি কতিপয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিতরণকৃত ঋণ যথাযথভাবে আদায় না হওয়ার ফলে তারল্য প্রবাহ হ্রাস- ইত্যাদির কারণ পর্যালোচনায় দেখা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ও ডিএফআইএম থেকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালন না করে জামানতবিহীন/ পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ ছাড়া ঋণ বিতরণ, একক গ্রাহককে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ঋণসুবিধা প্রদান, ঋণ বিতরণের আগে যথাযথ ডকুমেন্টেশন না করা, বিতরণকৃত ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত না করা ইত্যাদির ফলে খাতটিতে সংকট তৈরি হচ্ছে।"
এসব ক্ষেত্রে ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স (আইসিসি) ব্যবস্থাপনা ঘাটতির কারণেই এসব হচ্ছে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, কোনো ঋণ খেলাপি হওয়ার পর মামলা করতে গেলে দেখা যায়, জামানত, চেকের কপিসহ প্রয়োজনীয় অনেক কাগজপত্রই পাওয়া যায় না। ফলে ঋণ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে।
"তাই নতুন সার্কুলারে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম বদলানো হয়েছে। এখন থেকে প্রাক-অডিটের মাধ্যমে সবকিছু নিশ্চিত হয়ে ঋণ ছাড় করা হবে।
ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে এখন সঙ্গে সঙ্গেই জানা যাবে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, "এতদিন ঋণে অনিয়ম হওয়ার অনেক পরে আমরা জানতে পারতাম। নতুন সার্কুলারের কারণে এখন অনিয়মের আগেই আমরা কেসগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারবো। আইসিসি হলো প্রতিষ্ঠানের পাহারাদার। তাদের কাজগুলো এখন সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে যাতে তাদের সরাসরি দায়বদ্ধতা থাকে।"
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া টিবিএসকে বলেন, কিছু এনবিএফআই অনেক আগে থেকেই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজস্বভাবে অডিট পরিচালনা করে আসছে। "এখন সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানতে এটি অনুশীলন করতে হবে। এটি ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা বাড়াবে বলে আমি মনে করি।"
"বর্তমান নিয়মে ঋণ বিতরণের অনেক পরে সমস্যা সনাক্ত করা হয়। যদি প্রাক-অডিট ব্যাপকভাবে চালু করা হয়, তাহলে বিতরণের আগেই সমস্যা সনাক্ত করা যাবে," যোগ করেন তিনি।
সার্কুলার অনুযায়ী, এখন থেকে এক কোটি টাকা ও তদুর্দ্ধ অংকের যে কোন প্রকার ঋণ/লিজ/বিনিয়োগের আগে ডকুমেন্টেশন সম্পাদনসহ সব নিয়ম যথাযথভাবে পরিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আইসিসি এর মাধ্যমে ঋণ বিতরণের আগে প্রাক-অডিট করতে হবে ও প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট নথিতে সংরক্ষণ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে তদারকির জন্য এনবিএফআইগুলোতে ড্যাশবোর্ড স্থাপন করতে হবে। এনবিএফআই এর প্রধান নির্বাহী এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন বিভাগের প্রধান নিয়মিত এই ড্যাশবোর্ড মনিটরিং করবেন।
নিয়মের বাইরে গিয়ে ঋণ দেওয়া হলে সেসব ঋণের প্রতিমাসের তথ্য পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিএফআইএম এ পাঠাতে হবে।
পাশাপাশি এই প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানে অডিট কমিটির চেয়ারম্যানকে পাঠাতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রাপ্ত ক্রটি-বিচ্যুতির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করতে হবে।