গরুর হাট এখনো জমেনি, দাম কমার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
ঈদ-উল-আযহার আর মাত্র চার দিন বাকি থাকলেও রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রি এখনও ততটা জমে ওঠেনি। ক্রেতাদের চেয়ে হাটগুলোতে উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড়ই বেশি।
এদিকে, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে এবারে পশুর দাম কিছুটা বেশি বলে জানাচ্ছেন খামারিরা। কিন্তু বর্ডার দিয়ে দেশে গরু প্রবেশ করলে, বাজারে গরুর দাম কমে যাবে এবং এতে তাদের লোকসান গুনতে হতে পারে বলেও শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
ঢাকার দুই সিটিতে এবার মোট ১৯টি গরুর হাট বসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এরমধ্যে একটি আবতাবনগর গরুর হাট। শুক্রবার (২৩ জুন) সরেজমিন হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে গরুর সংখ্যা খুবই কম; কিন্তু দর্শনার্থীতে ভরা। অনেকেই ছুটির দিনে গরুর হাট দেখতে এসেছেন। যে কয়েকজন খামারি, ব্যপারী গরু নিয়ে এসেছেন, তারাও থাকার জায়গা ঠিক করছেন; কেউবা কাটাচ্ছেন অলস সময়।
হাট সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাত থেকে কিছু গরু আসতে শুরু করেছে। হাটে বেচা-কেনা পুরোদমে শুরু হতে এবং গরু আসতে আরও দুই-তিনদিন সময় লাগবে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারে অন্যান্য বছরের তুলনায় গরু একটু বেশি খরুচে হবে। কারণ গরু পালনের ব্যয় বেড়ে গেছে। ৩০ টাকার আশপাশে থাকা ভুসির দাম এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। বিদ্যুৎ খরচ, পরিবহন খরচ সবই বেড়েছে।
আবতাবনগর হাটে ঝিনাইদহ থেকে আসা ছোট খামারি মো. জালাল বলেন, "ঢাকায় গরু নিয়ে আসার বড় কারণই থাকে একটু ভালো দাম পাওয়া। কিন্তু যেভাবে শুনছি বর্ডার দিয়ে গরু আসছে, তাতে তো দাম পড়ে যাবে। দাম কমে গেলে যে খরচ করে গরু পালন করেছি, সেখানে লোকসান গুনতে হবে।"
কুষ্টিয়ার থেকে আরেক খামারি কামরুল এসেছেন ৬টি গরু নিয়ে। তিনি বলেন, "ভালো দামে বিক্রির আশায় এখানে এসেছি। কিন্তু সবাই বলাবলি করছে, এবার বর্ডার দিয়ে গরু আসছে। অবস্থা এমন হলে, ভালো দাম পাবো কি না তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।"
এদিকে হাট সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যেই হাটগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেনের ব্যবস্থা, পুলিশি নিরাপত্তা, অবকাঠামো তৈরি করে দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ শেষ হয়েছে। কোরবানির পশুও আসতে শুরু করেছে।
অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি
হাটে গরু বেচাবিক্রি শুরু না হলেও অনলাইনে অবশ্য গরুর বিক্রি শুরু হয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের বড় খামারগুলোর বিক্রি শুরু হয়েছে আগেই।
খামারিরা জানান, এসব খামারে অবশ্য কিছু ক্রেতা আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখেন। লাইভ ওয়েটের মাধ্যমে এগুলো বিক্রি হয়। যারা হাটে যাওয়ার ঝামেলা ছাড়াই গরু কিনতে চান, তারা আগেভাবেই অনলাইনে গরু ক্রয় করছেন।
তবে বড় খামারিরা বলছেন, খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে এবার গরুর দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। গত বছর লাইভ ওয়েট হিসেবে ৪৬০-৪৭৫ টাকা পর্যন্ত কেজি হিসেবে গরু বিক্রি হয়েছে। এবারে এটি ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)-এর সভাপতি মো. ইমরান হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "উৎপাদন খরচের তুলনায় কোরবানির পশুর দাম খুব একটা বাড়েনি। ঢাকার হাটের বেচাকেনা এখনো সেভাবে শুরু না হলেও অনলাইনে অনেক পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। অনেকে বুকিং দিয়ে রাখছেন, ঈদের দিন সকালে বা আগের দিন বাসায় নেবেন।"
তিনি বলেন, "অর্থনৈতিক সংকেটর মধ্যেও এবার বিক্রি কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।"
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ইদ-উল-আজহা সামনে রেখে গত ২২ জনু পর্যন্ত ৬৪৬টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ৫১ হাজারেরও বেশি পশুর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ইতোমধ্যেই ৯ হাজারের বেশি পশু বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। গত বছর কোরবানির আগে ৭০ হাজার ৫৭০টি পশু বিক্রি হয় অনলাইন মাধ্যমে, যার মূল্য ছিল ৪৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
প্রণীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর ৯৯ লাখ পশু সারাদেশে বিক্রি হয়েছিল। সেবার কোরবানি কম হওয়ার প্রধান কারণ ছিল করোনা পরবর্তী প্রভাব। কিন্তু অধিদপ্তর বলছে, এবারে চাহিদা আরো একটু বাড়বে। সে হিসেবে ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজারের একটু বেশি পশুর চাহিদার হিসাব ধরা হয়েছে।
এই চাহিদার বিপরীতে মোট গবাদিপশুর মজুদ ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ এমদাদুল হক তালুকদার টিবিএসকে বলেন, "গত বছরের তুলনায় এবারে চাহিদা বেশি থাকবে। চাহিদার তুলনায় আমাদের কোরবানিযোগ্য পশুও এবার বেশি।"
তিনি বলেন, "বর্ডার দিয়ে যাতে গরু দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।"
এবারের মজুদ পশুগুলোর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৫ হাজার; চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার; রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার; খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার; বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৯৩ হাজার; সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১০ হাজার; রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ লাখ ৯৮ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে।