স্বপ্নের শিরোপার নিঃশ্বাস দূরত্বে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা
যেকোনো শিরোপা জয়েই ঘাম ঝরে। আর সেটা বিশ্বকাপ হলে? জয় যাত্রাটা কেমন, সেটা জানা নেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরাটা এখনও যে অনেক দূরের স্বপ্ন তাদের কাছে। প্রিয় ফরম্যাট হওয়ায় ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে আশার বেলুন ফুলেফেঁপে ওঠে, কিন্তু শিরোপাটা বেশ দূরে থাকতেই মিশন শেষ হয় বাংলাদেশের। এখন পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনাল খেলাই বাংলাদেশের সেরা সাফল্য।
লড়াই করে ছিনিয়ে আনা হয় না স্বপ্নের বিশ্বকাপ ট্রফি, তাই সান্ত্বনা খুঁজে নিতে হয় প্রতি আসরের আগে বিশ্বকাপ ট্রফির বিশ্ব ভ্রমণের অংশ হয়ে। আগের মতো এবারও বাংলাদেশে এসেছে বিশ্বকাপ ট্রফি। তিন দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে ট্রফিটি আনা হয় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মিরপুর স্টেডিয়ামে ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রাখা ট্রফির সঙ্গে আনন্দ-আড্ডায় সময় কেটেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের, তুলেছেন ছবি। নিঃশ্বাস দূরত্ব থেকে ট্রফি দেখতে এসেছিলেন সাবেক ক্রিকেটার, নারী ক্রিকেট দল, অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলসহ বিসিবির কর্তারা।
সূচিটা আগেই জানা ছিল সংবাদমাধ্যমের। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকেই মিরপুর স্টেডিয়ামে সংবাদকর্মীদের ভীড়। এক ঝাঁক সাংবাদিকের দৃষ্টি হঠাৎ আটকে যায় ড্রেসিংরুমের দিকে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসছেন মুশফিকুর রহিম। চওড়া হাসিতে দুই হাতে বিশ্বকাপ ধরে এগিয়ে আসছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। হাতে ট্রফি নিয়ে মুশফিকের এগিয়ে আসার দৃশ্য ধারণ করছিলেন আইসিসির কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর ক্যামেরাও তখন তার দিকে তাক করা।
মিরপুর স্টেডিয়ামের মাঠে রাখা পোডিয়াম পর্যন্ত ট্রফি বয়ে আনেন মুশফিক। এই কাজটি করতে পারতেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক, সেটাই হয়তো ঐতিহ্য অনুযায়ী ঠিক ছিল। কিন্তু তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর এখনও ওয়ানডের অধিনায়ক চূড়ান্ত করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবিতে আজ জরুরি সভা, এই সভা শেষে সন্ধ্যা নাগাদ ওয়ানডের নতুন অধিনায়ক ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
মুশফিক ট্রফি নিয়ে যাওয়ার পর অনুশীলনের প্রস্তুতি নিতে থাকা ক্রিকেটাররা এগিয়ে যান পোডিয়ামের দিকে। ট্রফি সামনে রেখে কোচিং স্টাফ, ক্রিকেটারদের নিয়ে করা হয় ফটোসেশন। ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাসকিন আহমেদ, শেখ মেহেদি হাসান, হাসান মাহমুদ, নাসুম আহমেদ, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, নাঈম শেখ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, জাকির হাসান, তানজিম হাসান সাকিব, তানজিদ হাসান তামিমরা।
ফটোসেশন শেষে অনুশীলনে যোগ দেন অনেকেই। কিন্তু মঞ্চেই থেকে যান তাসকিন, তানজিম হাসান, শামীম, তানজিদ হাসান ও রিশাদ হোসেন। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের প্রধান অস্ত্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা তাসকিন ট্রফি ছুঁয়ে দেখছিলেন, এদিক-ওদিক করে যেন সোনালী শিরোপাটির গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করছিলেন ডানহাতি এই পেসার। নিজের ফোনে ছবি তুলছিলেন শামীম, স্বপ্নের শিরোপা এতো কাছে পেয়ে ট্রফিতে চুমুও এঁকে দেন তরুণ এই ক্রিকেটার। বাকিরাও ছবির সঙ্গে ছবি তোলেন।
এরপর মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় মুশফিক, তাসকিন ও জাতীয় দলের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথকে। আইসিসির ট্রফির বিশ্ব ভ্রমণের আয়োজনের অংশ হিসেবে সাক্ষাৎকার দেন এই তিনজন, তাদের প্রশ্ন করছিলেন আইসিসির কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা। এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ করেন মুশফিক। অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে এগিয়ে রাখবে বিশ্বাস তার। বাংলাদেশ দলের পেস বিভাগের প্রশংসা করে কথা বলেন তাসকিন।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভালো করার তিনটি কারণ হিসেবে দলীয় চেষ্টা, সততা ও কঠোর অধ্যাবসায়ের কথা বলেন এই পেসার। তাসকিন বলেন, 'আসলে এটা শুনতে খুব আনন্দের যে আমাদের ফাস্ট বোলাররা ভালো করছে এবং এই ফাস্ট বোলারদের উন্নতির জন্য সর্বশেষ কিছু বছর আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি। সামনে আরও উন্নতির লক্ষ্যে কষ্ট করে যাচ্ছি যেন, সামনে আরও ভালো কিছু করতে পারি। আসন্ন বিশ্বকাপেও আমরা খুব আশাবাদী যে ভালো কিছু হবে, ইনশা আল্লাহ।'
এরপর মাঠের মাঝখানে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্বকাপ ট্রফি। সেখানে শুধু ট্রফির ফটোসেশন হয়, এরপর ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলেন মিরপুর স্টেডিয়ামের মাঠকর্মীরা। এরপর ট্রফিটি নিয়ে যাওয়া হয় মিডিয়া প্লাজায়। সেখানে ছবি তোলার সুযোগ দেওয়া হয় জাতীয় নারী দল, অনূর্ধ্ব-১৯ দল ও বিকেএসপির ক্রিকেট বিভাগের ছাত্রদের। সংবাদ সংগ্রহ করতে হাজির হওয়া সংবাদকর্মীরাও ছবি তোলেন ট্রফির সঙ্গে।
ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলেন সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার। ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে পারার অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'বিশ্বকাপ খেলাটাই আসলে বিশেষ একটা কিছু। প্রতিটা বিশ্বকাপ আসে আশা নিয়ে, দিনদিন আশা বাড়ছে। আমরা যখন প্রথম শুরু করেছিলাম, আর এবারের বিশ্বকাপটা আবার শুরু করছি।'
'আশা প্রতিবার পরিবর্তন হচ্ছে, আর এবারের আশাটা আমার না, আমার মনে হয় আশাটা সবারই একটু বেশি। কারণ গত দুই বছর ধরে খুব ভালো খেলছি আমরা ৫০ ওভারের সংস্করণে। ট্রফিটা ছুঁতে পেরে খুব ভালো লাগছে, একটা স্বপ্ন তো থাকে। যদি খোলা ট্রফিটা ধরতে পারতাম জেতার পরে, তাহলে আরও ভালো লাগবে। একটু রোমাঞ্চ অনুভব করছি, আমাদের জন্য বিশ্বকাপ মনে হচ্ছে আজ শুরু হয়ে গেলো।' বলেন বাশার।
দল নিয়ে ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলা নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি জানান কাছ থেকে ট্রফি দেখার রোমাঞ্চ, 'আগে কখনও সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি। ধন্যবাদ বিসিবি ও আমাদের নারী বিভাগকে আমাদের এ সুযোগটা দেওয়ার জন্য। অনেক তরুণ খেলোয়াড় ছিল, তাদের আসলে স্বপ্নের মতো ছিল বিশ্বকাপ ট্রফিকে সামনে থেকে দেখা।'
'অবশ্যই বলতে হয়, এক্সপেক্টেশন বাংলাদেশের কাছ থেকে আমাদের সবার খেলোয়াড় হিসেবে অনেক বেশি, পাশাপাশি জনগণেরও অনেক বেশি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমার মনে হয় সেরা দলটাই বোধহয় এবার যাচ্ছে। যারা তরুণ খেলোয়াড়, তারা খুব ভালো ছন্দে আছে এবং এ সংস্করণে আমরা খুব ভালো খেলি। এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে আমরা তো সেরাটাই আশা করব।'
মিডিয়া প্লাজা থেকে পরে ট্রফি বিসিবির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকজন পরিচালককে নিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বাংলাদেশ সফরে শেষ দিনে (৮ আগস্ট) জনসাধারণের জন্য ট্রফি দেখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পান্থপথে অবস্থিত বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিশ্বকাপ ট্রফি প্রদর্শন করা হবে।