কোনো কর্মী নিয়োগের আগে স্টিভ জবস নিজেকে একটি মাত্র প্রশ্ন করতেন!
"আমি কি এই মানুষটির সাথে বাইরে বিয়ার খেতে গেলে উপভোগ করবো?" সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী কোম্পানিতে নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজেকে এই প্রশ্নটিই করতেন স্টিভ জবস। অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জবসের এই কৌশলটিকে মূলত কর্পোরেটের ভাষায় 'বিয়ার টেস্ট' বলা হয়।
'বিয়ার টেস্ট' এর মাধ্যমে নিজের প্রবৃত্তি ও মানসিক বুদ্ধিমত্তাকে কার্যকরীভাবে কাজে লাগানো যায়। ফলে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে, ঠিক কোন ব্যক্তি কোম্পানির জন্য উপযুক্ত হবেন।
তবে স্টিভ জবস কখনো সুনির্দিষ্টভাবে 'বিয়ার টেস্ট' টার্মটির কথা উল্লেখ করেছেন কি-না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অ্যাপলের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতার কোনো পাবলিক সাক্ষাৎকারে কিংবা জবসকে নিয়ে লেখা আইজ্যাকসনের জীবনীতে সরাসরি এমন কিছুর উল্লেখ নেই। তবে তিনি সরাসরি এই টার্মটি উল্লেখ না করলেও এই কৌশলের আদলেই যে কর্মী নিয়োগ করতেন, সেটা অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
যেকোনো চাকরির ইন্টারভিউ মূলত বেশ ফরমাল হয়ে থাকে। যেখানে সাক্ষাৎকার দাতা ও সাক্ষাৎকার গ্রহীতা উভয়ই নিজের সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা প্রদানের চেষ্টা করেন। একে অপরের সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেন। যার ফলে সাক্ষাৎকারের কথোপকথন হয় বেশ সচেতনভাবে। এতে করে একজন প্রার্থীর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এমনকি দুর্বলতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যেতে পারে। কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে একজন ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ কিছু নাও জানা যেতে পারে।
তবে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরিপ্রত্যাশী সম্পর্কে একটু বিশদভাবে জানা বেশ প্রয়োজনীয়। তাই প্রথাগত পন্থায় চাকরির ইন্টারভিউ গ্রহণে বিশ্বাসী ছিলেন না জবস। ফলে বেশিরভাগ চাকরির ইন্টারভিউ তিনি নিতেন অফিস সেটিংয়ের বাইরে।
এমনকি কর্মীদের সাথে হেঁটে হেঁটে মিটিং করতেও পছন্দ করতেন জবস। একইভাবে চাকরি প্রত্যাশীদের সাথে নিয়ে তিনি অনেক সময় অ্যাপলের বাইরে হাঁটতে বের হতেন।
অনেক সময় জবস চাকরি প্রত্যাশীদের খাবার খেতেও নিয়ে যেতেন। যাতে করে ঐ ব্যক্তির সাথে রেস্টুরেন্টে বসতে কিংবা কথা বলতে ঠিক কেমন অনুভব হয়, সেটা কল্পনায় না ভেবে বরং বাস্তবেই পরখ করা যায়।
একবার স্টিভ জবস বলেছিলেন, "আপনি এক ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে কাউকে ভালোভাবে জানতে পারবেন না। তাই দিনশেষে সিদ্ধান্তটা আপনার সাহসী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে, 'এই ব্যক্তি সম্পর্কে আমি কেমন অনুভব করি? তাদেরকে যখন চ্যালেঞ্জ জানানো হয়, তখন তারা কেমন পারফর্ম করে? তারা এখানে চাকরির জন্য কেন এসেছেন?' এমন সব বিষয়।"
জবস নিজের জীবনদশায় প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি ব্যক্তির চাকরির ইন্টারভিউতে উপস্থিত ছিলেন। এক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার বিষয়টি তিনি বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখতেন।
এ সম্পর্কে জবস বলেন, "আমি এটা খেয়াল করেছি যে, একজন গড়পড়তা ব্যক্তি যা করতে পারে এবং একজন চৌকস ব্যক্তি যা করতে পারে তার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।"
অন্যদিকে ভুল মানুষকে কর্মী হিসেবে নিয়োগ প্রদান আবার কোম্পানির ব্যর্থতার কারণ হতে পারে। ব্রায়ান স্কুডামোর নামের একজন উদ্যোক্তা ইনক ডট কমের সাথে ঠিক এমনি একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।
ব্রায়ান এক সময় নিজের কোম্পানিতে থাকা মোট ১১ জন কর্মীর সকলকেই চাকরীচ্যুত করতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং সকল কার্যক্রম তার আবার নতুন করে শুরু করতে হয়েছিল।\
কেননা কর্মী নিয়োগের সময় ব্রায়ান ঠিকভাবে যোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করতে পারেননি। পরিশেষে তিনি নিজেও 'বিয়ার টেস্ট' পদ্ধতির ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছেন।
তবে 'বিয়ার টেস্ট' পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা এমন সব ব্যক্তির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি যাদের মাঝে আমরা নিজেকে কিংবা আমাদের বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের মিল খুঁজে পাই। তাই কেউ যদি এই বিষয়টিকে বিবেচনায় না নিয়ে বরং নিজের তাৎক্ষণিক ইচ্ছায় কর্মী নিয়োগ করে ফেলি তবে সেটা নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে।
অ্যাপলসহ সিলিকন ভ্যালির বেশিরভাগ কোম্পানির ক্ষেত্রেই এমন সমস্যা দেখা গিয়েছিল। যদিও অ্যাপলের পক্ষ থেকে এমন সমস্যা সমাধানে ব্যাপক কাজ করা হয়েছে। আর ঠিক এই কারণেই একজন চাকরি প্রত্যাশীকে বেশ কয়েকজন মিলে সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এতে করে ভিন্ন ভিন্ন মতামত ও পর্যবেক্ষণ পাওয়া যায়; যা উপযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
স্টিভ জবস থেকে শুরু করে বহু উদ্যোক্তা ও বিজনেস লিডাররা খুব প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে উপযুক্ত কর্মী নিয়োগের ব্যাপারটি বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখেন। অন্যদিকে ভুল নিয়োগ প্রতিষ্ঠানকে কতটা পিছিয়ে দিতে পারে, সেটাও ভালো করে উপলব্ধি করেন। এক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে 'বিয়ার টেস্ট' সন্দেহাতীতভাবে বেশ কার্যকরী একটি কৌশল।