টিকফা: বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর মুনাফা প্রত্যাবাসন সমস্যার সুরাহা চাইবে যুক্তরাষ্ট্র
চলমান রিজার্ভ সংকটের কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর প্রফিট প্রত্যাবাসনের সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে আসন্ন ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) সভায় এর সুরাহা চাবে দেশটি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মেট লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে তাদের মুনাফার অর্থ নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে পারছে না। মূলত ডলার সংকটের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে আলাপও করেছেন। টিকফা সভাতেও যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে রেখেছে।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠেয় এই সভায় বাংলাদেশের শ্রম অধিকার, ইউনিয়ন-বিরোধী বৈষম্য ও শ্রম বিষয়ক অন্যান্য অন্যায্য বিষয়, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন সহ শ্রমিক অধিকার বিষয়ে বেশকিছু এজেন্ডা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত টিকফা মিটিংয়ের প্রস্তুতিমুলক সভা শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা শ্রম অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।
"তারা চায়, ট্রেড ইউনিয়নের জন্য কোন আবেদন আসলেই তা দিয়ে দিতে হবে। তারা সবকিছুর সঙ্গে শ্রম অধিকারের ইস্যু সম্পৃক্ত করে রেখেছে," বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এগ্রিকালচারাল বায়োটেকনোলজি ডায়ালগ এবং বাংলাদেশের সিড অ্যাক্ট রুলস সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় তৈরি আরএমজি পণ্য দেশটির বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাংলাদেশে যেটুকু ভ্যালু এডিশন হবে, তার উপর শুল্কারোপের প্রস্তাব করবে বাংলাদেশ।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, "যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে আরএমজি তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি হচ্ছে, এটা অনেকটা বাইব্যাকের মতো। তাই আরএমজির পুরো মূল্যের উপর শুল্কারোপ যৌক্তিক নয়। সে কারণেই আমরা শুধু বাংলাদেশে ভ্যালু এডিশনের ওপর শুল্কারোপের প্রস্তাব করব।"
"এসময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরবো," বলেন তিনি।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডিউটি ফ্রি কোটা ফ্রি এক্সেস সুবিধা এবং এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরও ৬ বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা রপ্তানি সুবিধা ও ট্রিপস বেনিফিট অব্যাহত রাখার ডাব্লিউটিওতে এলডিসি গ্রুপের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চাবে ঢাকা।
তিনি জানান, এলডিসি গ্রুপ গ্রাজুয়েশনের পরও শুল্কমুক্ত সুবিধা, ট্রিপস বেনিফিট অব্যাহত রাখার জন্য ডাব্লিউটিওতে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি দিয়েছে। বাকি দেশগুলো হয় এই প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে, না হলে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করতে নিরব রয়েছে।
আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় ডাব্লিউটিও'র মিনিস্ট্রিয়াল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র যাতে এলডিসির প্রস্তাবে সমর্থন দেয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্ব দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রোডাক্ট রেজিস্ট্রেশন সহজ করা এবং ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে অর্থায়ন পাওয়ার বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ।
কাউনটার ফেইট সম্পর্কে বাণিজ্য সচিব বলেন, "আমাদের দেশে আইনের কোন ঘাটতি নেই। আইনে সবার অধিকার নিশ্চিত করা আছে। কারও অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে তারা মামলা করবে, সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, সরকার এক্ষেত্রে মামলা করুক, যা সম্ভব নয়। আমাদের এ বক্তব্যই তুলে ধরবো।"
তপন কান্তি ঘোষ এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ টিকফা সভায় সহ-সভাপতিত্ব করবেন। উভয় পক্ষে বাণিজ্য, শ্রম, কৃষি এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
এর মাধ্যমে ৭ম দফায় টিকফা বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ টিকফা কার্যকর হওয়ার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক খাতে যুক্ত হয়।