মিডল অর্ডারে তামিমের ব্যাটিং করতে না চাওয়া শিশুসুলভ, মনে করেন সাকিব
বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার পরদিন তামিম ইকবাল জানিয়েছেন, প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাকে না খেলার পরামর্শ দিয়েছেন বিসিবির শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্তা। অথবা খেললেও তিনি যেন মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করেন। এমন প্রস্তাব ভালোভাবে নেননি বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ওপেনার। তামিমের বিশ্বকাপ দলের অংশ হাতে না চাওয়ার অন্যতম কারণ এটা। বুধবার ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে অনেক কিছু নিয়েই কথা বলেন তিনি।
যে কারণে বিশ্বকাপ দলেই নিজের নাম দেখতে চাননি তামিম, সেই কারণটি সাকিব আল হাসানের তেমন কিছুই নয়। এমন প্রস্তাবে খারাপ কিছু দেখেন না বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। তার মতে, কেউ এমন প্রস্তাব দিলেও, সেটা দলের ভালোর জন্যই দিয়েছেন। দলের ভালোর জন্য যেকোনো জায়গায় খেলার মানসিকতা রাখা উচিত। এভাবে কেউ না ভাবলে, সে শুধু নিজের কথা ভাবছেন বলে মনে করেন সাকিব। এ ছাড়া তামিমের মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতে না চাওয়ার ব্যাপারটিকে শিশুসুলভ মনে হয়েছে তার কাছে।
দলের অধিনায়ক সাকিব, বিশ্বকাপ দল বাছাইয়ে তার মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। তামিমের বাদ পড়ার পেছনে সাকিবের হাত আছে? একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেন, 'আমি অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে খেলা শুরু করেছি বাংলাদেশের হয়ে, তখন থেকে দেখে আসছি, খুব ভালোভাবে যে খেলোয়াড় দলের জন্য অবদান রাখছে, ভালো করছে, তাকে কখনো বাদ দেয়নি বাংলাদেশের কোনো দল।'
'কোনো দিনও না। সিম্পল একটা উদাহরণ দিই, রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) ছিলেন না, হঠাৎ করে বিশ্বকাপ দলে এলেন। হয়তো যে দুই ম্যাচে খেলেছেন, সেভাবে অবদান রাখতে পারেননি সেভাবে। সুযোগ ছিল, পারফেক্ট স্টেজ ছিল ভালো করার ওনার জন্য। তবে ওনার যে নিবেদন, দলের প্রতি দায়বদ্ধতা, ইচ্ছা ছিল, সবাই দেখেছে সবকিছু। পার্থক্য আছে।' যোগ করেন সাকিব।
দল গঠনের পুরো দায়িত্ব তার নয় জানিয়ে সাকিব বলেন, 'আমার তো দায়িত্ব না পুরো দল নির্বাচন করা। এটা হলে তো এশিয়া কাপের এক দিন আগে দল ঘোষণা করে দল দিতে পারত না। অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। শুধু মাঠের পারফরম্যান্স না, মাঠ ও মাঠের বাইরে, ড্রেসিংরুম, আবহ; অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। বলছি না যে আমি সম্পৃক্ত। কারণ, এগুলোতে এখন খুবই কম সম্পৃক্ত।'
মিডল অর্ডারে তামিমকে ব্যাটিং করতে বলার প্রস্তাবের প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, 'আলোচনাই হয়নি এটা নিয়ে আমার সঙ্গে। কেউ যদি বলে থাকে, সেটা অথরাইজড কেউ। আগে থেকে আলাপ করে রাখতে চেয়েছিল, যেন দুই পক্ষের জন্যই ভালো হয়। এতে খারাপের কিছু দেখি না। খারাপের জন্য তো বলবে না।'
'আমি নিশ্চিত, কেউ যদি বলে থাকে, দলের কথা চিন্তা করেই বলেছে যে "ওকে, ঠিক আছে, এমন কম্বিনেশন যদি করি! এ রকম বানালে কী হতো।" অনেক থাকে এমন। ম্যাচকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু হয়। সে হিসাবে চিন্তা করে আগে থেকে পরিষ্কার করে রাখতে চায়, (তাহলে) আলোচনা দোষের কিছু না। নাকি প্রস্তাবই দেওয়া যাবে না? একজনকে বলা হবে, "যে যা ইচ্ছা তা-ই করো।" দল আগে না ব্যক্তি আগে?'
বিষয়টি বোঝাতে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার উদাহরণ টানেন সাকিব। আর তামিমের জায়গা ছাড়তে না চাওয়ার মনোভাবকে ছোটবেলার একগুঁয়েমির সঙ্গে তুলনা করেন তিনি, 'রোহিতের (রোহিত শর্মা) মতো ক্রিকেটার সাত নম্বর থেকে এসে ১০ হাজার করে ফেলেছে। মাঝে মাঝে সে-ও যদি তিন-চারে খেলে, ব্যাটিংয়ে না নামে, খুব একটা কি সমস্যা হয়? এটা আসলে আমার কাছে মনে হয়, একদম বাচ্চা মানুষের মতো, "আমার ব্যাট আমি খেলব। আর কেউ খেলতে পারবে না"।'
সাকিবের কাছে সবার আগে দল। তার ভাষায়, 'দলের প্রয়োজনে যে কারও যেকোনো জায়গায় খেলা উচিত, দল আগে। ১০০-২০০ করে দল হারল, কিছু যায় আসে না। ব্যক্তিগত অর্জন দিয়ে কী করবেন আপনি? আপনি শুধু নিজের নাম কামাবেন? তাহলে কী? আপনি দল সম্পর্কে ভাবছেন না, কোনোভাবেই না...মানুষ এই পয়েন্টগুলাই বোঝে না। যখন দেখলেন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কেন দেওয়া হয়েছে? হয়তো দলের ভালো হবে। অবশ্যই আলোচনা আছে যে না আমি পারব, আমি নিজের সেরাটা দেব। তাহলে আপনি টিমম্যান। না হলে আপনি টিমম্যান না। নিজের রেকর্ড, সাফল্য, খ্যাতির জন্য খেলছেন।'