লিটনের কাণ্ড দেশের জন্য ‘লজ্জাজনক’, বিসিবির আনুষ্ঠানিক দুঃখপ্রকাশ
আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলেও পরের দুই ম্যাচ ভালো যায়নি বাংলাদেশের। চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইংল্যান্ডও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারে সাকিব আল হাসানের দল। এমন পারফরম্যান্সে নিশ্চয়ই স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ দল। এর মাঝে বেড়েছে অস্বস্তি। পুনেতে টিম হোটেলে নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে সাংবাদিকদের বের করে দিয়েছেন লিটন কুমার দাস, এমন অভিযোগ উঠেছে।
এটাকে অনাকাঙিক্ষত ঘটনা দাবি করে সোমবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন লিটন। এই ঘটনায় বাংলাদেশ দল ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করলেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে বিশ্বকাপ সফরে থাকা বিসিবির এই পরিচালক জানান, এমন ঘটনা দেশের জন্য লজ্জাজনক। লিটন কী কারণে মেজাজ হারিয়েছেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে লিটনের এমন আচরণে বিসিবি উদ্বিগ্ন জানিয়ে জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, 'অবশ্যই বিসিবি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমার ধারণা লিটন এরই মধ্যে তার ফেসবুকে পেজে দুঃখ প্রকাশ করেছে। সে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করেনি। হয়তো আপনাদের বের করে দেওয়ার কথাটাও সে বলেই নাই। সে হয়তো অস্বস্তি বোধ করছিল। আমি যেহেতু ছিলাম না, তাই সঠিক উত্তরটা দিতে পারব না। তবে ও যেটা বলেছে, সে অস্বস্তি বোধ করছিল। সেটাই সে নিরাপত্তারক্ষীদের জানিয়েছে। এখন নিরাপত্তারক্ষীরা আপনাদের কীভাবে জানিয়েছে, সেটা আমি জানি না।'
দুঃখপ্রকাশ করে খালেদ মাহমুদ বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি, বাইরে নিয়ে একসঙ্গে খাবার খেতে, একসঙ্গে সব কিছু করার চেষ্টা করছি। তবে দিন শেষে ক্রিকেট খেলাটা তো শারীরিক চাপের চেয়ে মানসিক চাপ বেশি যে, রান করতে পারছে না বা ধারাবাহিকতা হচ্ছে না। এটা একটা সমস্যা হচ্ছে। তো ওই কারণে কিছু (প্রতিক্রিয়া) এলো কি না জানি না। তবে আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ও বিসিবির পক্ষ থেকে এই ঘটনার ব্যাপারে আমি স্যরি বলছি। আমি এটার জন্য দুঃখপ্রকাশ করলাম। আপনারা এটাকে ইতিবাচকভাবে নেবেন।'
একই সঙ্গে ঘটনাটিকে দেশের জন্য লজ্জানজকও বলেছেন তিনি, 'আমি আবার বলছি, কোনো কিছুই ইচ্ছাকৃত ছিল না। আমরা সব সময় ভাবি যে আপনারা কষ্ট করে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। এটা আমাদের দেশের জন্যও লজ্জাজনক ব্যাপার, যদি আমাদের মিডিয়াকে এখান থেকে সরে যেতে বলা হয়। এটা আমাদের জন্যও ঠিক না। আমরা সব সময় আপনাদের ছবি তোলার জন্য, ভিডিও করার জন্য উৎসাহ দিই।'
ঘটনার ব্যাখ্যা ও লিটনের বক্তব্য নিয়ে টিম ডিরেক্টর বলেন, 'আমরা জিনিসটাকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক, দুইভাবেই নিতে পারি। তখনকার তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি আমি জানি না। লিটন বা বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার কখনও এমন করেছে কি না, আমার জানা নেই। বা লিটনও আমার মনে হয়, ও এরোগেন্ট ছেলে, এমন আমি কখনও দেখিনি। কিন্তু ও কেন বলল ওই সময়ের কথাটা, সেটা তো বলেনি। ও আমাকে বলেছে, 'স্যার আমি নির্দিষ্ট কোনো কারণে বলিনি। আমি শুধু তখন অস্বস্তিবোধ করছিলাম। ক্যামেরাটা আমার মুখের সামনে নিয়ে আসছিল বারবার, যে কারণে আমি বলেছি।" হয়তোবা যেটা হয়, একটা দল হারলে অনেক সময় অনেক নেতিবাচকতা কাজ করে। নিজেদের গুটিয়ে রাখতে চায়।'
পুনেতে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা কনরাড পুনে হোটেলে রোববার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন, এটি জানতে পেরে টিম হোটেলে যান বিশ্বকাপ কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকরা। প্রধান নির্বাচক তখন হোটেল না থাকায় লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয় তাদের।
এক পর্যায়ে লিটনকে দেখতে পেয়ে তার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে থাকেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। বাংলাদেশ ওপেনার তখন হোটেলের নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে কিছু বলেন, হাত দিয়ে সাংবাদিকদের দিকে ইশারাও করেন। পরবর্তীতে নিরাপত্তাকর্মীরা সাংবাদিকদের চলে যেতে বলেন। যা ভালোভাবে নেননি তারা।