পাঁচ মাস বেতন পান না জ্যোতিরা, বিসিবি বলছে, ‘আমাদের অজ্ঞতা’
পুরুষ দলের মতো তারাও জাতীয় দল। ২৬ জন ক্রিকেটার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন। বিভিন্ন গ্রেডে বেতন পান তারা। যদিও এখন বলতে হবে, 'বেতন পেতেন তারা।' খেলা, অনুশীনসহ নারী দলের সব কার্যক্রম ঠিক থাকলেও বেতনটা ঠিক নেই তাদের। দুই-এক মাস নয়, গত পাঁচ মাস ধরে বেতন পান না জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটাররা।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিসিবির নারী বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, এটা বিসিবির 'অজ্ঞতা'। সব দায় তাই তারা মেনে নিচ্ছেন। নারী ক্রিকেটারদের বেতন নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই মিটে যাবে বলে জানান বিসিবির এই পরিচালক।
শফিউল আলমের দাবি, বিষয়টি জানা ছিল না তার। বেতন না হওয়ার ব্যাপারটি কোনো ক্রিকেটারও তাকে জানায়নি। এমনকি তাদের বেতন না পাওয়ার তথ্য বিসিবির কারও কাছেই ছিল না। নারী বিভাগের পাঠানো বেতনের তালিকা কোনো কারণে বিসিবির অ্যাকাউন্টসে যায়নি জানিয়ে টিবিএসকে নারী বিভাগের তিনি বলেন, 'ঘটনাটা সত্য। নারী বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথমেই দায়টা আমার নিজের। আমি দায়িত্বে আছি, পাঁচ মাস ধরে বেতন হয়নি। আসলে আমিও বিষয়টা জানতাম না। মেয়েরাও আমাকে কেউ কিছু বলেনি।'
'ওরা নিয়মিত সিরিজের মধ্যেই ছিল, ক্যাম্পে ছিল। দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয়তার কথা তারাও যে জানাবে; সিরিজ, ক্যাম্প অথবা কোনো কারণে ইয়ে (মিস) হয়ে গেছে। আমরা নারী বিভাগ থেকে একটা তালিকা দিয়েছিলাম চুক্তিভিত্তিক। আমরা তো অর্থ বছরে তাদের তালিকা করি এবং ওই অনযায়ী অ্যাকাউন্টস থেকে বেতনটা তাদের দেওয়া হয়। আমরা পাঠিয়েছি, বোর্ড মিটিংয়ের পরে কোনো কারণে অ্যাকাউন্টসে যায়নি। না যাওয়ার কারণে বেতন আটকে ছিল, অন্য কিছুই নয়।' যোগ করেন তিনি।
পাঁচ মাস ধরে বেতন না হওয়ার ব্যাপারটি বিসিবির কেউ জানেন না, বিষয়টি অস্বাভাবিক কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে নারী বিভাগের প্রধান বলেন, 'আমি যখন জেনেছি আজ থেকে পাঁচ-ছয়দিন আগে, আমরা প্রক্রিয়া করে দিয়েছি। আমার ধারণা এই বৃহস্পতিবারের মধ্যেই বেতন হয়ে যাবে। আমি প্রথমেই বললাম, এটার ব্যাপারে আমরা দায় এড়াতে পারব না। যে কারণেই হোক, যেহেতু আমাদের নারী বিভাগের দায়িত্ব ছিল খোঁজ-খবর রাখা, কিন্তু রাখা হয়নি। এটা আসলে আমাদের অজ্ঞতা বা এখানে অবশ্যই গ্যাপ আছে।'
নারী ক্রিকেটারদের কম বেতন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বহু দিনের। অনেক দেন-দরবারের পর গত জুনে ২০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। মেয়েদের সর্বোচ্চ বেতন এক লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা। যদিও বিসিবি সভাপতির দেওয়া ঘোষণা গেল পাঁচ মাসে বাস্তবায়ন হয়নি, এই সময়ে বেতনও পাননি নারী ক্রিকেটাররা। বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ-হতাশা আছে ক্রিকেটারদের, তবে সঙ্গত কারণেই নাম প্রকাশ করতে চান না কেউ।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক নারী ক্রিকেটার টিবিএসকে বলেন, 'আমরা গত পাঁচ মাস ধরে বেতন পাই না। এ নিয়ে বিসিবির কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি আমাদের বেতনের ব্যাপারে। কাকে বললে কী হবে, সেটা বুঝতেই পারি না আমরা। কারণ আগে অনেক বিষয়ে বলেও কোনো কাজ হয়নি। এ ছাড়া আমাদের ধারণা ছিল, দায়িত্বে থাকা মানুুষরা হয়তো ব্যাপারটি জানেন। সত্যি বলতে কিছু বলার নেই, সবাই জানে আমরা কতো অল্প বেতন পাই।'