কাচ্চি ভাইয়ের মালিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
অনুমোদনবিহীন বাদাম শরবত উৎপাদন ও বিক্রি করায় কাচ্চি ভাইয়ের মালিক মো. সোহেল সিরাজের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এছাড়া, ব্ল্যাঙ্ক প্যাডে সাক্ষর করে রাখায় শান্তিনগরের গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টারের এক ডাক্তার, প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. সাল্লাহ উদ্দিন মেহেদীসহ এক মেডিকেল টেকনোলজিস্টের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
খিলগাঁওয়ের চৌধুরী পাড়ায় অবস্থিত কাচ্চি ভাই নামক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনের প্রেক্ষিতে অঞ্চল-২ এর নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসান গত ১ নভেম্বর সেখানে সরেজমিন পরিদর্শনে যান এবং পরিদর্শনকালে তিনি খাওয়ার অনুপযোগী ও নাম-ঠিকানাবিহীন আনুমানিক ১০০ বোতল বাদাম শরবত জব্দ ও ধ্বংস করেন।
এ সময় তিনি অনুমোদনবিহীন বাদাম শরবত উৎপাদন, বিষাক্ত রং, ঘন চিনি ইত্যাদি ব্যবহার না করার জন্য ম্যানেজার ও কর্মচারীদের মৌখিকভাবে সতর্ক করেন।
পরবর্তীতে গত ৭ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট পরিদর্শক আবারও সেখানে পরিদর্শনে যেয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাদাম শরবত উৎপাদন ও বিক্রি করার চিত্র দেখতে পান এবং সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করেন।
স্বাস্থ্য পরিদর্শক মামলার আর্জিতে বলেন, "প্রতিষ্ঠানটির এ ধরনের কার্যক্রম খাদ্য গ্রহীতার স্বাস্থ্যহানী ও ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।"
বিষয়টি আমলে নিয়ে করপোরেশনের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আলাউল আকবর কাচ্চি ভাইয়ের মালিকের বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এর ৩১, ৩৩, ৪১ ও ৪২ ধারা লঙ্ঘন করায় একই আইনের ৫৮ ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টারের মালিক ও এক ডাক্তারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
প্রতিষ্ঠানের ব্ল্যাঙ্ক প্যাডে (যা টেস্ট রিপোর্টের কাজে ব্যবহৃত হয়) ডাক্তার অগ্রিম স্বাক্ষর করে রাখায় শান্তিনগরস্থ 'ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার' এর মালিক মো. সাল্লাহ উদ্দিন মেহেদী, প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডাক্তার ফরিদা ইয়াসমিন ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আদালত নং-২) আদালত।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) ঢাকা দক্ষিণের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) আলাউল আকবর এই আদেশ দেন।
আদেশে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টারের মালিক-ডাক্তার-টেকনোলজিস্টকে এবং খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কাচ্চি ভাইয়ের মালিককে গ্রেপ্তার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়াও আদেশে আদালত আগামী ৬ ডিসেম্বর মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে।
মামলার আর্জিতে প্রসিকিউটিং অফিসার ও খাদ্য পরিদর্শক মোহাং কামরুল হাসান বলেন, "শান্তিনগরের শান টাওয়ারের ৩য় তলায় অবস্থিত দি ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টারের মালিক গত ৫ নভেম্বর নতুন ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করেন। তৎপ্রেক্ষিতে গত ১২ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-২ এর স্বাস্থ্য পরিদর্শক মোহাং কামরুল হাসান স্বাস্থ্যগত মতামত প্রদানের লক্ষ্যে সরেজমিন পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ল্যাবের কম্পিউটারের প্রিন্টারের ভেতরে 'খালি প্যাডে' প্রতিষ্ঠানটির প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডাক্তার ফরিদা ইয়াসমিনের স্বাক্ষর দেখতে পান।"
এ সময় স্বাস্থ্য পরিদর্শক এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাল্লাহ উদ্দিন মেহেদী তাকে বলেন, "ডাক্তার ১ সপ্তাহের ছুটিতে আছেন বলে অগ্রিম স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন।"
পরবর্তীতে স্বাস্থ্য পরিদর্শক খালি প্যাডে ডাক্তারের স্বাক্ষর রেখে যাওয়া নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে লিখিত স্বীকারোক্তি নেন এবং নমুনা হিসেবে ৩০টি স্বাক্ষরিত ব্লাঙ্ক প্যাড জব্দ করে নিয়ে আসেন।
স্বাস্থ্য পরিদর্শক বিষয়টি করপোরেশন স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করেন এবং এ সময় তিনি বলেন, গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টারের এ ধরনের কার্যক্রম সেবা গ্রহীতাদের সাথে প্রতারণার শামিল। এছাড়াও এ ধরনের কার্যক্রম জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এরই প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার সিটি কর্পোরেশন আইন, ২০০৯ এর ৫ম তফসিলের ৩, ১৪, ৬১ ধারা ও দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারা লঙ্ঘন করায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।