'শাক, ডাল খেয়ে বেঁচে আছি, চলছি ধারদেনায়': অবরোধে বিক্রি নেই ফেরিওয়ালাদের
মিরপুর-১০ এলাকায় বাসে ফেরি করে শসা, আচার বিক্রি করেন তোফাজ্জল মিয়া (৩১)। গত কয়েকদিন ধরে চলা অবরোধে রাস্তায় বাস চলাচল কমে যাওয়ায় যেন তার পরিবারের উপার্জনের চাকাও থমকে গেছে।
তোফাজ্জল মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পেট তো আর অবরোধ দেখে নে। প্রতিদিনই তো স্ত্রী, দুই ছেলে নিয়ে খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। আগে যেখানে মাঝে মধ্যে মুরগী, গরুর মাংস খেতে পারতাম এখন খেতে হচ্ছে শাক, ডাল দিয়ে।"
তিনি আরও বলেন, "আগে দিনে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা বিক্রি হতো এবং প্রায় অর্ধেক টাকা লাভ হতো। কিন্তু এখন যে কয় টাকার মালামাল আনি সেই টাকাই উঠে না।"
"আজকে ৫০০ টাকার শসা, আচার এনে বিক্রি শুরু করেছি, কিন্তু ২০০ টাকাও বিক্রি করতে পারিনি। হয়তো আজকে চালানই উঠবে না৷ আর সবই কাঁচামাল, বিক্রি না হলে বাকি সব ফেলে দিতে হবে। গতকাল প্রায় অর্ধেকটা ফেলে দিতে হয়েছে। সকালে একটু বিক্রি হলেও বিকালে একেবারেই বিক্রি হয়নি। রাস্তায় কোনও বাসই নেই।"
ভৈরব থেকে ঢাকায় আসা আরেক ফেরিওয়ালা রিমন হোসেন (১৬) টিবিএসকে বলেন, "অবরোধের আগে দিনে ৭০০/৮০০ টাকা বিক্রি হতো, ৩০০ টাকা থাকতো। এখন ৪০০ টাকাও বিক্রি হয় না। আজকে মাত্র ২০০ টাকার শসা, আমড়া, জলপাই নিয়ে বের হয়েছি। অর্ধেকটাও বিক্রি হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, "ঢাকায় বাবা-মা সহ থাকি। বাবাও ফেরি করে আচার বিক্রি করেন। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বাবার শরীর খারাপ হওয়ায় তিনি রাস্তায় বের হতে পারেনি। এদিকে আমারও ইনকাম নেই। মানুষের থেকে ধার দেনা করে শাক, সবজি দিয়ে কোনভাবে খেয়ে দিনযাপন করছি।"
রিমন বলেন, "রাস্তায় গাড়ি কম, লোকজনও কম বের হয়। যারা বের হন তারাও খুব একটা কেনেন না। অনেক বাসে আবার এখন উঠতেও দেয় না আমাদের। ভাবে আমরা বুঝি বাসে আগুন দিব।"
বাস স্টেশনে পান-সিগারেট বিক্রেতা মো. সেলিম টিবিএসকে বলেন, "রাস্তায় বের হওয়া আর না হওয়া এখন আমার জন্য একই বিষয়। যা বিক্রি হয় তা খরচ বাদ দিয়ে কিছু থাকে না। অবরোধের আগে দিনে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো এবং ৩০০-৪০০ টাকা লাভ হতো। কিন্তু এখন দিনে ৫০০ টাকাও বিক্রি করতে কষ্ট হয়।"
সেলিম আরও বলেন, "বিক্রি ভালো হলে একটি মাছ কিংবা মুরগী খেতে পারি। কিন্তু বিক্রি ভালো না হলে শাক, ডাল দিয়ে খেতে হয়। এখন দেখা যায় তিন বেলা খাবার না খেয়ে দুই বেলা খাই। এক ছেলে ডে লেবারের কাজ করে সেই উপার্জনেই কোনভাবে চলছি৷ এখন ছেলেরও কাজ থাকে না প্রতিদিন।"
বিকল্প অটো সার্ভিসের হেলপার আলাউদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "দেশের যে অবস্থা এতে বাস নিয়ে বের হওয়া রিস্ক। অর্ধেকের মতো বাস রাস্তায় বের হয়েছে। আমরাও ভয়ে ভয়ে বাস চালাচ্ছি, যাত্রী অনেক কম।"