বিজয়ের মাসে এশিয়া জয় বাংলাদেশ যুবাদের
একদিন আগেই গেছে ১৬ই ডিসেম্বর, বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় দিন। দিনটায় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বিজয় কেতন উড়িয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল, ব্যাটে-বলে শাসন করে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন মুর্শিদা-জ্যোতিরা। পরের দিন বিশ্বমঞ্চে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ালো বাংলাদেশের যুবারা। বিজয়ের মাসে এশিয়া জয় করলেন শিবলি-বর্ষণরা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক তরফা ফাইনালে আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে মাহফুজুর রহমান রাব্বির দল। এবারের আসরে রানের হিসেবে এটাই সবচেয়ে বড় জয়। যুবাদের এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নের মুকুট জিতলো বাংলাদেশ। এর আগে খেলা একমাত্র ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে শিরোপা খোয়ায় তারা।
বাংলাদেশের বৈশ্বিক শিরোপা জয় মানে সেখানে দুটি দলের নাম অবধারিত; নারী ক্রিকেট দল ও যুব ক্রিকেট দল। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট দল হিসেবে কোনো আসরের শিরোপা জেতে নারী ক্রিকেট দল। ২০১৮ সালে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হন সালমা-জাহানারা। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। যুবাদের হাত ধরে এবার এলো আরেকটি শিরোপা। দুর্বার ছন্দে থাকা যুবারা শিরোপা জয়ের পথে একটি ম্যাচও হারেনি, তাদের গায়ে এখন অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের সিল।
শিরোপার লড়াইয়ে আরব আমিরাতকে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট হাতে শাসন, পরে দাপুটে বোলিং; প্রতিপক্ষ দলটিকে রীতিমতো গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে বড় নাম টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক আশিকুর রহমান শিবলি। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান তুলে নেন সেঞ্চুরি, জেতেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।
হাফ সেঞ্চুরি করেন চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আরিফুল ইসলাম। এই তিন ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ৮ উইকেটে ২৮২ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। এবারের আসরে এটা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ, আসরের তৃতীয়। জবাবে রোহানাত দৌল্লাহ বর্ষণ, মারুফ মৃধা, ইকবাল হোসেন ইমন, শেখ পারভেজ জীবনদের বোলিং তোপের মুখে বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেনি আরব আমিরাত। প্রথমবারের মতো যুবাদের এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা দলটি ২৪.৫ ওভারে ৮৭ রানেই গুটিয়ে যায়।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামা আরব আমিরাতকে শুরুতেই বিপাকে ফেলেন মারুফ। পঞ্চম ওভারে আরিয়ানশ শর্মাকে ফিরিয়ে দেন তিনি। দ্বিতীয় জুটিতে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে স্বাগতিকরা। কিন্তু এই জুটিও ভেঙে দেন মারুফ। ২৮ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে কিছুক্ষণ পর চেপে ধরেন বর্ষণ। ১০ রানের ব্যবধানে আরব আমিরাতের ৩টি উইকেট তুলে নেন দারুণ বোলিং করা ডানহাতি এই পেসার। তিনশ ছুঁইছুই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৫ রানে নেই ৫ উইকেট, এখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি আরব আমিরাত।
বরং ১৫তম ওভারে তাদেরকে দিক ভুলিয়ে দেন ইমন, টানা দুই উইকেট তুলে নেন তিনি। ৬১ রানে ৭ উইকেট হারানো আরব আমিরাত পরের তিন উইকেটে ২৬ রান তোলে। দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন ধ্রুব পারাশার। এ ছাড়া আকশাত রায় করেনন ১১ রান। এই দুজনই কেবল দুই অঙ্কের রান করেন, বাকি ৯ ব্যাটসম্যান উইকেটে গেছেন আর ফিরেছেন। দুর্দান্ত বোলিং করা মারুফ ও বর্ষণ ৩টি করে উইকেট নেন। ইমন ও জীবন ২টি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে আলো ছড়ানো শিবলি। ডানহাতি এই ওপেনার ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ১৪৯ বলে ১২টি চার ও একটি ছক্কায় ১২৯ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। এবারের আসরে এটাই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। দ্বিতীয় সেরা ইনিংসটিও শিবলির, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১৬ রান করেও অপরাজিত থাকেন তিনি।
এবারের এশিয়া কাপ জয়ে কাণ্ডারীর ভূমিকায় ছিলেন শিবলি, ব্যাট হাতে রীতিমতো রানের বন্যা বইয়ে দেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। ৫ ম্যাচে দুটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিসহ ১২৬.০০ গড়ে ৩৭৮ রান করেন তিনি, যা আসরের সেরা। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তার ধারেকাছেও কেউ নেই। দুই নম্বরে থাকা পাকিস্তান যুবা আজান আওয়াইসের রান ২২২।
ম্যাচসেরা শিবলির ছড়ি ঘোরানোর দিনে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৭১ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৬০ রান করেন রিজওয়ান। ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি করেন আরিফুল। স্কুপ শট খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউর শিকার হওয়া বাংলাদেশের এই যুবা ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। শেষ পর্যন্ত ৪০ বলে ৬টি চারে ৫০ রান করেন তিনি। শেষ দিকে ১১ বলে ২১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন অধিনায়ক রাব্বি। আরব আমিরাতের আয়মান আহমেদ সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান অমিদ রেহমান।