বাংলাদেশি গারো তরুণীর ইউটিউব চ্যানেল
সীমান্ত জেলা নেত্রকোনার বিরিশিরিতে জন্ম নীল নন্দিতা রিছিলের। সেখানকার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী গারো সম্প্রদায়ের অধিবাসী তিনি। বিরিশিরি মতো জায়গা থেকে একজন গারো তরুণী ইউটিউবে জায়গা করে নেবে- এটা অল্প কিছুদিন আগে ভাবেননি নীলও।
কিন্তু নিজের ভাবনাকে পাশ কাটিয়ে নীল নন্দিতা রিছিলের হাতে গড়া ইউটিউব চ্যানেল 'বিডি গারো প্রোডাকশন' এর সাবস্ক্রাইবার ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে নিজের তৈরি করা ভিডিওর পাশাপাশি আছে গারো সম্প্রদায়ের নাচ-গানসহ বিভিন্ন কন্টেন্ট।
কেন এমন একটা উদ্যোগ নিলেন নীল? দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানালেন পেছনের গল্প।
ছবি তোলার খুব শখ নীলের। ২০১৭ সালে কিনেছেন একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা। সেটা দিয়ে হাত পাকিয়েছেন ছবি তোলায়। তবে তার আগে ২০১৩ সালে বিরিশিরি দক্ষিন ভবানীপুর গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন অনার্স পড়তে। ভর্তি হয়েছেন ইডেন কলেজে। সেখান থেকে রাস্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স শেষ করে মার্স্টার্সে পড়ছেন এখন।
ঢাকায় এসেই ইন্টারনেট দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় হলেও ইউটিউব নিয়ে পুরোপুরি ঘাটাঘাটি শুরু করেন ২০১৮ সালের শুরুতে। খেয়াল করে দেখেন ভারতের কিছু গারো তরুণ-তরুণীর ইউটিউব চ্যানেল থাকলেও বাংলাদেশে তেমন কারো নেই। গারোদের ভাষা, গারোদের সংস্কৃতি, নিয়ে ইউটিউব দুনিয়া এক অর্থে ফাঁকাই। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চান নীল।
নীল বলেন, ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে বেশ কিছুদিন ঘাটাঘাটি করি ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে। তারপর গারোদের নিয়ে কিভাবে একটা চ্যানেল খোলা যায়, কি কনটেন্ট
দেওয়া সেটা নিয়েই চিন্তা করি। অনেক ইউটিউবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি এটা একটা টিমের কাজ। সেখানে আমার জানা শোনা তেমন কেউ নেই। যারাও আছে তারা
ইউটিউব নিয়ে বা ভিডিও নিয়ে অতটা এক্সপার্ট নয়। তাই নিজে বেশ কিছু টিউটোরিয়াল দেখি। নিজে নিজে শিখি। তারপর ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর খুলে ফেলি 'বিডি গারো প্রোডাকশন' নামের এই চ্যানেলটি।
শুরুতে এই যে ভিডিওটা আপলোড করেন সেটি একটা গারো শিশুর সারাদিনের কর্মকান্ড। নীরব নামের এই শিশুর হোম টিউটর ছিলেন নীল। নীরবের মা পার্লারে কাজ করে, বাবা ড্রাইভার। সারাদিন একা বাসায় থাকে। তার এই বাসায় থাকা নিয়েই পুরো ভিডিও।
'গারো শিশুর একটা দিন' শিরোনামের এই ভিডিওটা মানুষ পছন্দ করে। বাড়তে থাকে ভিউ ও সাবস্ক্রাইবার। তারপর নিয়মিতভাবে আপলোড করতে থাকেন ভিডিও। গারোদের গান, নাচের পাশাপাশি নিজের ব্লগিং ভিডিও আপলোড করেন নিয়মিত।
তবে ইউটিউবার হতে গিয়ে তাকে নিতে হয়েছে অনেকের সাহায্য। বিশেষ করে বন্ধুদের। কিছুদিন আগে নাচের ভিডিও শ্যুটিং করেছেন চন্দ্রিমা উদ্যানে। সেখানে অংশ নিয়েছে গারো মেয়েরা। আপলোড করার পর মানুষ বেশ পছন্দ করেছেন।
এছাড়া ক্যামেরা ধরা, কিংবা ভিডিও সম্পাদনার মতো কাজের জন্য অনেক সময় বন্ধুরা এগিয়ে এসেছে।
চ্যানেলে ভিডিও আপলোড প্রসঙ্গে নীল বললেন, 'অনেক পরিকল্পনা করে তবেই ভিডিও আপলোড করতে হয়। সাবস্ক্রাইবারদের পছন্দ-অপছন্দের পাশাপাশি গারো
সম্প্রদায়ের সঙ্গে মানানসই ভিডিও নির্মাণের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। আমি চেষ্টা করি সপ্তাহে তিনটি ভিডিও আপলোড করতে। তাতে করে একদিকে যেমন কনটেন্ট বেশি হয় আবার আমার সাবস্ক্রাইবাররাো খুশি হন।'
ইউটিউব থেকে এরই মধ্যে আয়ও করেছেন নীল। এরইমধ্যে ডলারও এসেছে তার একাউন্টে। মানুষের উৎসাহ আর আগ্রহ পাশাপাশি ডলার আসার ব্যাপারটি দারুণ
অনুপ্রাণিত করেছে নীলকে।
তিনি বললেন, আমি গারোদের নিয়ে নিয়মিত কাজ করে যেতে চাই। ভিডিও দিতে চাই। যাতে করে গারোদের যে একটা নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে সেটা যেন সবাই জানতে পারে। আমার ভিডিওকে মাধ্যমে সারাবিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে চাই আমাদের নিজস্ব রীতিনীতি।