মিরপুর-মতিঝিল রুটে যানজট কমিয়েছে মেট্রোরেল
মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ানোর ফলে আরও স্বাচ্ছন্দ্য এবং দ্রুত যাতায়াতের সুযোগ পেয়েছেন যাত্রীরা। এর সুবাদে মিরপুর-আগারগাঁও-ফার্মগেট-মতিঝিল রুটে যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।
তবে উত্তরা-মহাখালী-মতিঝিল এবং উত্তরা-বাড্ডা-মতিঝিলের মতো অন্যান্য ব্যস্ত রুটে এখনও আগের মতোই যানজট রয়েছে।
মিরপুরের বাসা থেকে মতিঝিলের অফিসে যাতায়াত করতে আগের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেত চাকরিজীবী সায়মা হকের। এখন মেট্রোরেলের সুবাদে এক ঘণ্টার মধ্যেই অফিসে পৌঁছে যেতে পারছেন তিনি। এই রুটে যানজট কমে যাওয়ায় তার প্রতিদিনের যাতায়াতে ঝক্কি অনেকটাই কমে এসেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মোশতাক আহমেদ মেট্রোরেল রুটে যানজট হ্রাস ও শৃঙ্খলার উন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে শহরের অন্যান্য এলাকায় যানজটের সমস্যা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
গত বছরের নভেম্বরের শুরু থেকে উত্তরা ও মতিঝিলের মধ্যে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। তবে ট্রেনগুলো কেবল সকাল ৭টা ১০ থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চালু ছিল। এরপর চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি চলাচলের সময় বাড়িয়ে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত করা হয়।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের ২০.১ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে এখন মাত্র ৩১ মিনিট সময় লাগে। আগে এই রুটে যানজটে বসে থাকতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
এর ফলে অনেক মানুষ এখন বাসের মতো গণপরিবহন ফেলে আরও দ্রুত এবং আরামদায়ক যাতায়াতের মাধ্যম মেট্রোরেলকে বেছে নিয়েছে।
বাস পরিষেবায় এর স্পষ্ট প্রভাব পড়েছে। আয়াত পরিবহনের মালিক খালেদ খান মিরপুর-মতিঝিল রুটে যাত্রীর সংখ্যা ৩৫ শতাংশ কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এর ফলে তিনি কিছু বাস বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছেন।
একই ধরনের মতামত দিলেন শিকার পরিবহনের বাসের হেলপার নুর হোসেন এবং রাইড-শেয়ার প্রদানকারী মো. কামরুল। মেট্রোরেলের সাফল্যের কারণে উভয়েরই ব্যবসা কমে গেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যাত্রীদের ওপর চালানো ২০২৩ সালের একটি জরিপের তথ্য বলছে, মেট্রোরেলে চড়া যাত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯.৪১ শতাংশ আগে উত্তরা-মতিঝিল রুটে যাতায়াতের জন্য পাবলিক বাস ব্যবহার করতেন। জরিপে অংশ নেওয়া ১৪.৯৬ শতাংশ যাত্রী মেট্রোরেল চালুর আগে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৬.৮০ শতাংশ মানুষের বাহন ছিল মোটরসাইকেল, রিকশার যাত্রীর ছিলেন ৫.৩০ শতাংশ।
মেট্রোরেল মিরপুর-মতিঝিল রুটে যাত্রীদের স্বস্তি এনে দিলেও শহরের অন্যান্য অংশে যানজট একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
বনানী থেকে ফার্মগেটগামী যাত্রী শহিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মহাখালী এলাকায় ফ্লাইওভারেও যানজট আগের চেয়ে বেড়েছে। একইভাবে উত্তরা-বাড্ডা-মতিঝিল রুটেও একই ধরনের যানজট ও যাত্রীর চাপ অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বাড্ডা-রামপুরা ছাড়া উত্তরা-মতিঝিল রুটে বাস যাত্রী কমার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি মিরপুর-মতিঝিল রুটে বাস মালিকদের আয় ৫০ শতাংশ কমে যাওয়ার কথা জানান। কিছু কোম্পানি লোকসানের কারণে কার্যক্রম বন্ধও করে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে বাস অপারেটরদের সেবার মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন মাহবুবুর রহমান। তবে মেট্রোরেলের দেওয়া সুবিধা ও দক্ষতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা কার্যকরভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি না, সেটিই দেখার বিষয়।