নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হংকং
ব্রিটিশ শাসন অবসানের ২৩ বছর পর স্বশাসিত হংকংকে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় এনেছে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার। গত মঙ্গলবার রাতেই চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নতুন জাতীয় নিরাপত্তা বিধিমালা সংক্রান্ত বিলটিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে একে আইনে পরিণত করেন।
বিক্ষোভ ও বাক-স্বাধীনতা দমনে এটি চীনের পক্ষ থেকে নেওয়া সর্বশেষ উদ্যোগ, বলে সমালোচনা করছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। খবর বিবিসির।
হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীরা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নতুন করে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। ফলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে চীনের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য কেন্দ্রটি।
আন্দোলন দমনে ব্যাপক কঠোর অবস্থানে আছে স্থানীয় পুলিশ। আজ বুধবার বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সাতজনকে প্রথমবারের মতো নতুন নিরাপত্তা আইনটির আওতায় গ্রেফতার করা হয়। নিষিদ্ধ একটি সমাবেশ থেকে জিজ্ঞাসাবাসের জন্য আটক করা হয় আরও প্রায় দুইশ' বিক্ষোভকারীকে।
চীনের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে হংকংভিত্তিক বিক্ষোভ দমন এবং চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির শাসন ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা বন্ধ করা। এর আওতায় জন-অসন্তোষ উস্কে দেওয়া, ষড়যন্ত্র এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ আনা যাবে, বিক্ষোভ সংগঠনকারী এবং অধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে। যার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে রাখা হয়েছে আজীবন কারাবাসের বিধান।
হংকংয়ের বিক্ষোভকারীরা বলছেন চীন তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অংশ হিসেবেই এ আইন প্রবর্তন করেছে।
১৯৯৭ সালে 'এক দেশ দুই নীতি' সমঝোতার আলোকে হংকংকে কমপক্ষে ৫০ বছর গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত করা হবে, এমন শর্তের আওতায় হংকংয়ের নিয়ন্ত্রণ চীনের কাছে হস্তান্তর করে ব্রিটেন। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের ২৩তম বার্ষিকী ছিল আজ বুধবারেই। দিবসটি উপলক্ষে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে রাস্তায় নামে হাজার হাজার গণতন্ত্র সমর্থক আন্দোলনকারী।
কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে ৫০ জনের বেশি সমবেত না হওয়ার যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, তা অমান্য করেই অনুষ্ঠিত হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান, কাঁদুনে গ্যাস এবং পিপার স্প্রে ব্যবহার করে। শহরের টাইমস স্কয়ার মলের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকেই আটক করা হয় ১৮৩ জনকে।
এসময় চীনা শাসন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতাকামী এক ব্যক্তিকে 'হংকংয়ের স্বাধীনতা চাই' এমন লেখা সম্বলিত পতাকাসহ আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, তাদের একজন সদস্যকে বিক্ষোভকারীদের একজন দাঙ্গাকারি ধারালো কোনো বস্তু দিয়ে জখম করেছে। পুলিশ কর্মকর্তার হাতে আঘাত করেই ওই হামলাকারী পালিয়ে যায়, এসময় সেখানে উপস্থিত অন্য বিক্ষোভকারীরা তাকে থামানোর কোনো চেষ্টা করেনি।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে অনেক আন্দোলনকারী টাইমস স্কয়ার মলের ভেতরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তাদের ধাওয়া করে সেখানে পুলিশের ৩০ সশস্ত্র সদস্য প্রবেশ করেন। এসময় তল্লাশি চালিয়ে আরও ৩০ জনকে আটক করা হয়।
যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশগুলো নতুন নিরাপত্তা আইন নিয়ে চীনের তীব্র সমালোচনা করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, চীন হংকংবাসীকে ৫০ বছর স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিলেও, তা মাত্র ২৩ বছর দিয়েছে।
তবে হংকং নিয়ে বিদেশিদের নাক গলানো সহ্য করা হবে না, বলে ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান জানান, চীন কখনোই তার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশিদের নাক গলানো মেনে নেবে না।