তানজিদের সেঞ্চুরিতে খুলনাকে হারিয়ে প্লেঅফে চট্টগ্রাম
ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে তানজিদ হাসান তামিম ব্যাটিং করলেন ১৯তম ওভার পর্যন্ত। মাঝে চললো তার ব্যাটিং শো। চার-ছক্কার পসরা সাজিয়ে তরুণ এই ওপেনার তুলে নিলেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। শেষ দিকে দ্রুত গতিতে রান তুললেন টম ব্রুস। এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স যে বড় সংগ্রহ গড়ে, বিলাল খান-শুভাগত হোমদের দাপুটে বোলিংয়ের সামনে তা পাড়ি দেওয়া দূরের পথে পরিণত হয় খুলনা টাইগার্সের জন্য। দারুণ জয়ে বিপিএলের প্লেঅফে উঠে গেল চট্টগ্রাম।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খুলনা টাইগার্সকে ৬৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে প্লেঅফ নিশ্চিত হলো তাদের। ১২ ম্যাচে সাত জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বের টিকেট কাটলো দলটি, পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান তিন নম্বরে। নিচে থাকা কোনো দলেরই সম্ভাবনা নেই চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
আজকের হারে প্লেঅফের পথ কঠিন হলো খুলনার। ১১ ম্যাচে পাঁচ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার পাঁচ নম্বরে এনামুল হক বিজয়ের দল। শেষ ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ১২, যা ইতোমধ্যে ফরচুন বরিশালের আছে। তাই শেষ ম্যাচে জিতলেই হবে না, রান রেটের সমীকরণও থাকবে। প্লেঅফে উঠতে নিজেরা বড় ব্যবধানে জিতে বরিশালের হার কামনা করতে হবে খুলনাকে। কিন্তু বরিশাল শেষ ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারালে তাদের পয়েন্ট হবে ১৪, বাদ পড়ে যাবে খুলনা।
ঘরের মাঠে টস জিতে ব্যাটিং করতে নামে চট্টগ্রাম। ম্যাচসেরা তানজিদের সেঞ্চুরি ও ব্রুসের মাঝারি ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৯২ রান তোলে তারা। বিলাল, শুভাগতদের আসাধারণ বোলিংয়ের সামনে বিজয় ও শেই হোপ ছাড়া খুলনার কেউ-ই লড়াই করতে পারেননি। এর বাইরে জেসন হোল্ডার কিছুটা লড়েন, বাকি ৮জন দুই অঙ্কের রানও করতে পারেননি। এক বল বাকি থাকতে ১২৭ রানে অলআউট হয় খুলনা।
লক্ষ্য তাড়ায় দলীয় ১৩ রানেই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনকে হারায় খুলনা। শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়েন বিজয় ও হোপ। খুলনার লড়াই বলতে এতোটুকুই, ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিও এটা। নবম ওভারে আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৩৫ রান করেন বিজয়।
শেই হোপ ২১ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩১ রান করেন। ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার হোল্ডার ১৭ বলে ১৮ রান করেন। এভিন লুইস, আফিফ হোসেন, মাহমুদুল হাসান জয়রা পারেননি দলকে পথ দেখাতে। রান তুলতে সংগ্রাম করে শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে যান তারা। দুর্দান্ত বোলিং করা বিলাল ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন। চট্টগ্রাম অধিনায়ক শুভাগত ২৫ রানে পান ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট পান সালাউদ্দিন শাকিল, শহিদুল ইসলাম, রোমারিও শেফার্ড ও নিহাদুজ্জামান।
এর আগে ব্যাটিং করা চট্টগ্রামের পুরো ইনিংসজুড়ে একটিই নাম, তানজিদ। শুরুতে নেমে প্রায় শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন বাঁহাতি তরুণ এই ওপেনার। দুর্দান্ত সব শটে ৫৪ বলে ৮টি করে চার ও ছক্কায় ১১৬ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন তানজিদ। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার প্রথম সেঞ্চুরি। তানজিদের ইনিংসটি চলমান বিপিএলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ ছিল তাওহিদ হৃদয়ের, দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে অপরাজিত ১০৮ রান করেন তিনি।
বিপিএলের ইতিহাসে সপ্তম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করলেন তানজিদ। তার আগে ফ্র্যাঞ্চাইজি এই টি-টোয়েন্টি আসরে সেঞ্চুরি করা ছয় বাংলাদেশি হলেন শাহরিয়ার নাফিস, মোহাম্মদ আশরাফুল, সাব্বির রহমান, তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। তানজিদের সেঞ্চুরিটি অবশ্য বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অষ্টম। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে বিপিএলে দুটি সেঞ্চুরির মালিক তামিম।
তানজিদের সঙ্গে ১১০ রানের জুটি গড়া টম ব্রুস ২৩ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন। এ ছাড়া সৈকত আলী ১৮ ও রোমারিও শেফার্ড ১০ রান করেন। খুলনার পক্ষে একটি করে উইকেট নেন ওয়েন পার্নেল, নাসুম আহমেদ, জেসন হোল্ডার ও মকিদুল ইসলাম মুগ্ধ।