গাইবান্ধার ২০ হাজার বাড়ি যেভাবে ক্ষুদ্র কারখানায় পরিণত হয়েছে
গাইবান্ধার পশ্চাদপদ নিজ এলাকা নিয়ে পঞ্চাশের দশকে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন আব্দুর রহিম। এই স্বপ্ন ছিল তাঁতের শক্তিতে ভর করে এলাকাবাসীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প, যা বিকশিত হয়ে আজকের অবস্থায় আসার অনেক আগের কথা এটি।
আব্দুর রহিমের সময়ে অঞ্চলটির প্রায় সব বাড়িঘরই ছিল মাটির, ছাউনি ছিল খড়ের, কোনো একটি উদ্দীপনার অপেক্ষায় ধুঁকছিল।
ঠিক এই সময়েই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রহিম ঢাকা আসেন, এবং একটি সোয়েটার কারখানায় কাজ নেন। ১০ বছরেই এই শিল্পের সমস্ত খুঁটিনাটি শিখে নেন তিনি।
১৯৬০ এর দশকের দিকে তিনি নিজের ইউনিয়নের আরও কয়েকজনকে ঢাকায় নিয়ে আসেন, এবং তাঁদেরকে সোয়েটার, মোজা, মাফলার বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে গাইবান্ধায় ফেরত পাঠান। নিজেদের কারখানা স্থাপনের জন্য কলকাতা থেকে তাঁদের তাত কিনতেও সাহায্য করেন আব্দুর রহিম।
১৯৭১ সালের পর পার্শ্ববর্তী আরও তিন ইউনিয়নে প্রসারিত হয় এই ক্ষুদ্র গার্মেন্ট শিল্প। এভাবেই সম্ভাবনার নতুন এক প্রদীপ জ্বলে। তারপর থেকে আরও বিস্তার লাভ করেছে এই শিল্প।
স্বপ্নের আমূল বাস্তবায়ন
৫০'র দশকে আব্দুর রহিম যেমনটা দেখেছিলেন– আজকের গাইবান্ধাকে দেখে আর তাঁর সাথে মেলানোর উপায় নেই।
আঁকাবাঁকা ছোট সড়ক ধরে গ্রামের যেকোনো পাড়া/মহল্লায় প্রবেশ করলেই শুনতে পারবেন তাঁতের মৃদু 'খুট, খাট' শব্দ। গ্রামের লোকজনের কর্মব্যস্ততার উৎসব সেই শব্দতে অন্যরকম ছন্দের জোগান দেয়। যেকোনো নতুন পথিকের মধ্যেই যা অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে।
আপনার বুঝতে দেরি হবে না, এই শব্দ আর কর্মব্যস্ততা কীসের, যখন তার চোখে পড়বে সড়কের পাশের ঘরগুলোর বারান্দায় বা ঘরের মধ্যে ছোট-বড় তাঁত মেশিন চলছে। আর এসব মেশিনে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের শীতবস্ত্র। এযেন সামাজিক শিল্পোৎপাদনের এক চিত্র।
এসব বাড়ির নারীরা কেউ সুতো-কাটার কাজে ব্যস্ত, কেউ করছেন প্যাকেজিং, কেউবা ব্যস্ত তাঁত থেকে বের হওয়া কাপড়ের ফিনিশিংয়ের কাজে।
এই চিত্র দেশের উত্তরের জেলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর, মহিমাগঞ্জ ও শালমারা ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামের। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী শিবগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের প্রায় ৮টি গ্রামের। এসব এলাকার প্রায় ৫০টি গ্রামের চিত্র এমন।
কিছু বাড়ির সীমানার মধ্যেই আরেকটু বড় কারখানা গড়ে উঠেছে।
প্রতি বছরের জুলাই থেকে পরের বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এসব কারখানার কর্মযজ্ঞ। আর কিছু কারখানায় কাজ চলে বছর জুড়েই। সবমিলিয়ে এক লাখ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে এই শিল্পে।
গাইবান্ধার উন্নতির পাশাপাশি– স্থানীয় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে এই রূপান্তর।
'নাসিমা হোসিয়ারি' নামের একটি কারখানার মালিক হামিদুল হক তারই একটি উদাহরণ।
হামিদুলের কারখানা কোচাশহর ইউনিয়নের সর্ব পশ্চিমের গ্রাম ছয়ঘরিয়ায়। ফেব্রুয়ারির এক সকালে তাঁর কারখানার ছয়টি বৈদ্যুতিক তাঁত যন্ত্রে তৈরি হচ্ছিল মহিলাদের শীতবস্ত্র কার্ডিগান ও স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য সুয়্যেটার। সেই শব্দে বারবার চাপা পড়ছিল হামিদুল হকের কথা।
গর্বভরে তিনি বলেন, একসময় বাড়ির জমি ছাড়া কিছুই ছিল না আমার। এখন প্রায় ১০ বিঘা আবাদি জমির মালিক। গ্রামের বড় পাকা বাড়ির প্রায় ৩ হাজার বর্গফুটের একটি ইটের ঘরে গড়ে তুলেছেন এই কারখানা। রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরে ৮ কাঠা জমির ওপর দোতলা বাড়ি।
হামিদুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, পাকিস্তান আমলে তাঁর বাবা হস্তচালিত তাঁত মেশিনে পায়ের মোজা, মাফলার ও হাত মোজা তৈরির কাজ করতেন। এসব পণ্য প্রস্তুত করার পর নিজেই দেশের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় করতেন তিনি।
'এখন সময়ের পরিবর্তনে ব্যবসার প্রসার হয়েছে। দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে বর্তমানে এই এলাকায় পাইকার আসে শীতবস্ত্র কেনার জন্য। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আধুনিক ৬টি লুম মেশিন বসিয়েছি। প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ টাকার বস্ত্র উৎপাদন হয় এই কারখানায়। কাজ করে প্রায় ২০ জন শ্রমিক'- আরও বলেন হামিদুর।
উদ্যোক্তারা জানান, এই অঞ্চলে প্রস্তুতকৃত বস্ত্র দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষের শীতবস্ত্রের চাহিদা পূরণ করে। এসব পণ্যের বাৎসরিক বাজার সৃষ্টি হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
আব্দুর রহিম আজ বেঁচে থাকলে যা দেখতে পেতেন
ক্ষুদ্র পোশাক শিল্পের বদৌলতে এই চার ইউনিয়নের মানুষের অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন হয়েছে, যা নজর কারার মতো। বেকারত্ব একেবারেই কম। এছাড়াও অপরাধ প্রবণতাও অনেকটা কমেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নারীও এসব কাজের মাধ্যমে– সংসার ও ব্যবসার হাল ধরেছেন।
এই শিল্প থাকা এলাকাগুলোর জীবনযাত্রার মান আশেপাশের এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের বেশ উন্নত। এখন পার্শ্ববর্তী এলাকার নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করে এই শিল্পগুলোতে।
একসময় ধান ও আখের মৌসুমে এই এলাকার অনেক মানুষ অন্য এলাকায় গিয়ে মজুরি দিত। বর্তমানে এই এলাকাগুলোয় এরকম শ্রমিক নেই বললেই চলে। স্থানীয়ভাবেই রয়েছে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ।
এই গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি ঘরই এখন পাকা বা আধাপাকা। প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে সরকারি-বেসরকারি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গ্রামসংলগ্ন বাজারগুলোতে গড়ে উঠেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এজেন্ট ব্যাংকিং ব্র্যাঞ্চ। বড় বাজারগুলোয় বেসরকারি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এছাড়াও গ্রামের স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছেন ছোট/বড় মুঠোফোন বিক্রয়কেন্দ্র। প্রায় প্রতিটি গ্রামেই ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সবমিলিয়ে এই এলাকাগুলোর গ্রাম ও বাজার এখন বেশ উন্নত।
তবে স্থানীয় উদ্যোক্তারা জানালেন, এখনো সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পৃষ্ঠপোষকতা, সহায়তা না থাকায় এই শিল্পের যে হারে উন্নতি করার কথা, সেটি হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ সহায়তা, কারিগরদের আধুনিক প্রশিক্ষণ, যথাযথ বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসছে না। দেশের বড় উদ্যোক্তারা এই এলাকায় বিনিয়োগ করলে কম খরচে ভালো মানের বস্ত্র উৎপাদন করে দেশের বাজার ছাড়িয়ে এই শিল্পকে রপ্তানি উপযোগী শিল্প বানানো সম্ভব বলে মনে করেন তাঁরা।
দিনবদলের হাওয়া
ছয়ঘরিয়া গ্রামের পার্শ্বের পেপুলিয়া গ্রামে এ ধরনের ক্ষুদ্র পোশাক কারখানার পরিমাণ সবচেয়েছে বেশি বলে জানান স্থানীয়রা।
এই গ্রামের ৩৬ বছরের আমজাদ মিয়া। তিনটি হস্তচালিত তাঁত মেশিন দিয়ে শুধু হাত ও পায়ের মোজা তৈরি করেন। এক যুগ আগে তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
নিজের সেই যাত্রা শুরুর ইতিহাস তুলে ধরলেন এভাবে– '২০১১ সালে একজনের থেকে সুদে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে একটি হস্তচালিত পুরাতন তাঁত মেশিন কিনে নিজেই মোজা বানানোর কাজ শুরু করি। শুরুর দুই বছর নিজের প্রোডাক্ট নিজেই বিভিন্ন বাজারে গিয়ে খুচরা বিক্রয় করতাম। এরপর আরেকটি মেশিন কিনে আমি এবং আমার স্ত্রী কাজ শুরু করি। ২০১৭ সালে আকেটি মেশিন কিনেছি, যেটি একজন শ্রমিক চালায়।'
'তিনটি মেশিন দিয়ে আমি, আমার স্ত্রী ও একজন শ্রমিক মিলে যে পরিমাণ মোজা বানাই, তাতে করে ভালো উপার্জন হয়। প্রতিবছর একটা ভালো পরিমাণ টাকা ব্যাংকে জমা করতে পারি'- তিনি বলছিলেন।
এই গ্রামের ১,১০০ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৯০০'র মতো পরিবার এরকম একটি দুই-একটি মেশিন নিয়ে ক্ষুদ্র কারখানা চালিয়ে, আমজাদের মতোই ভালোভাবেই জীবিকা চালাচ্ছে।
পেপুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আরিফ হোসেন বলেন, অন্যান্য এলাকার স্কুলের চেয়ে এই এলাকার স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীর পরিমাণ অনেক ভালো। শিক্ষার্থী ঝরে পরার পরিমাণ খুবই কম।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার উত্তরপূর্বে সাঘাটা উপজেলা। সাঘাটার প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করেন ক্ষুদ্র গার্মেন্টস থাকা পাশের উপজেলার গ্রামগুলোয়। সাঘাটার এমনই একজন হলেন বালুয়া গ্রামের মশিউর রহমান। কোচাশহরে একটি কারখানায় কাজ করেন তিনি।
মশিউর বলেন,'এখন শুধু কাজের জন্যই নয়, আমরা প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে বিভিন্ন কেনাকাটা করতেও এসব এলাকার বাজার-হাটে আসি। বাজারের বিভিন্ন ক্লিনিকে বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর থেকে বেশ কয়েকজন এমবিবিএস ডাক্তার রুগী দেখতে আসেন। ছোটখাট শারীরিক সমস্যার জন্য আমরাও এই সেবা নিতে আসি এখানে।'
এই ৫০ গ্রামের ছোট কারখানাগুলো এখন ক্ষুদ্র কুটির শিল্প হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তাদের মতে, কোচাশহরে ৭ হাজার ৬০০টি ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে শীতবস্ত্র উৎপাদনের কাজ করছে। পার্শ্ববর্তী মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নে এমন কারখানার সংখ্যা ৫ হাজার ১০০, শালমারা ইউনিয়নে ৪ হাজার ৩০০ এবং সৈয়দপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৪৮০টি।
কোচাশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বললেন, ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও এসব এলাকায় অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বস্ত্র উৎপাদন করছে। সব মিলিয়ে কারখানার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি হবে।
তবে কয়েকটি বড় কারখানাও রয়েছে, যেখানে এগুলোর মালিকরা কোটি টাকাও বিনিয়োগ করেছেন।
কোচাশহরের মুকুদপুর এলাকায় সরকার হোসেয়ারি ১৯৮৬ সালে একটি হস্তচালিত তাঁত মেশিন নিয়ে মাফলার ও মোজা তৈরি শুরু করে। এখন এই কারখানায় ৬০০টি জ্যাকার্ড মেশিন রয়েছে। কাজ করে প্রায় ৮০০ শ্রমিক।
সরকার হোসিয়ারির স্বত্বাধিকারী আব্দুল আল সরকার জানান, এসব এলাকায় ২০টির বেশি বড় কারখানা রয়েছে– যেগুলোর প্রতিটিতে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কাজ করে।
এসব বড় কারখানা রাজধানীর অনেক স্বনামধন্য গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে সাব-কন্ট্রাক্টে শীতবস্ত্র বানিয়ে রপ্তানি করে।
এসব এলাকায় বস্ত্র তৈরির বেশিরভাগ সুতা পরিত্যক্ত 'ঝুট' কাপড় থেকে সংগ্রহ। বেশিরভাগ সুতা আসে বগুড়ার দুপচাচিয়া এলাকার শাওলপাড়া থেকে।
ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা জানান, শাওলপাড়ায় হাজারের বেশী ব্যবসায়ী আছে, যারা ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্ট থেকে ঝুট কাপড় ও পরিত্যক্ত সুতা সংগ্রহ করে মেশিনে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বস্ত্র উৎপাদনের উপযোগী সুতা তৈরি করে। আর এই শাওলগ্রামের ৯০ শতাংশ সুতা ব্যবহার হয় গোবিন্দগঞ্জের এই এলাকায়।
নারীর ক্ষমতায়ন করেছে যেভাবে
এই এলাকাগুলোর প্রায় ৩০ হাজার নারী ক্ষুদ্র পোশাক শিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত বলে জানিয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ। এদের কেউ কেউ নিজেদের কারখানা করেছেন, কেউবা শ্রমিক হিসেবে অন্যের কারখানায় কাজ করছেন।
মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পান্তামারী গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ সোফিয়া বেগমের নিজের কারখানায় ৬টি জেকার মেশিন রয়েছে। এই কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য বার্ষিক বিক্রি প্রায় ৪০ লাখ টাকার। প্রায় ১৫ বছর আগে স্বামী আহসান উদ্দিন মারা যাওয়ার পর নিজেই ব্যবসার হাল ধরেন সোফিয়া।
সোফিয়া বললেন, 'ছেলে-মেয়েসহ আমার ছয় সদস্যের সংসার। পুরোই আমি পরিচালনা করি। এই টাকা দিয়ে চার ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করছে। এক মেয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ শেষ সেমিস্টারে পড়ছে। দশ কাঠা জমির ওপর দোতলা বাড়ি করেছি নিজের উপার্জনে। এছাড়াও গাইবান্ধা শহরে চার কাঠ জমি কিনেছি, যেখানে ২০২৫ সাল নাগাদ একটি চারতলা বাড়ি করার পরিকল্পনা আছে। শুধু আমি না, এখানে অনেক নারী আছে, যারা নিজেরাই কারখানা চালায়, তারা সবাই স্বাবলম্বী।'
সোফিয়ার কারাখানার নাম 'সোফিয়া হোসিয়ারি'। এই কারখানায় কর্মরত ২০ জন কারিগরের সকলেই নারী। তাঁদেরই একজন উম্মে কুলসুম জানান, 'আমি ১০ বছর আগে থেকে এ কারখানায় কাজ করছি। বছরে ৬/৭ মাস কাজ চলে। পাশ্ববর্তী সাঘাটা উপজেলার বালুয়া গ্রামে আমার বাড়ি।'
'১০ কিলোমিটার দুর থেকে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করি। স্বামী ভ্যানচালক। দুই সন্তান আছে। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর উপার্জনই সংসারের অবলম্বন। এখান থেকে আমি যে আয় করি, তা দিয়ে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি সংসারে খরচ করি। এখন আমরা বেশ ভালোই আছি।'
দুই সন্তানের মধ্যে মেয়েটা বড়। গর্বিত এই মা বলেন, 'সে স্থানীয় একটি স্কুলে ক্লাস টেনে পড়ে। ক্লাসের রোল নম্বর-১। সে ডাক্তার হতে চায়। মেয়েকে ডাক্তার বানানোর জন্য যে পরিমাণ টাকার দরকার– সেটি আমি জোগার করবো, এজন্য ওর যেভাবে দরকার সেভাবেই পড়াশোনা করাবো।'
একটি গ্রামের রূপান্তর
বগুড়া জেলার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝপাড়া গ্রাম। এই গ্রামের পাশের একটি গ্রাম ব্রিটিশ আমল থেকেই 'বেন্নে পাড়া' নামে পরিচিত (নিচু শেণির মানুষ হিসেব এই গ্রামের মানুষদের মনে করতো স্থানীয়রা, এজন্য আঞ্চলিক ভাষায় 'বেন্নে পাড়া' নামকরণ করা হয়)। গ্রামটির অবস্থান কোচাশহর ইউনিয়নের দক্ষিণের শেষ গ্রাম ছয়ঘরিয়ার সাথে।
ছয়ঘরিয়ার ষাটোর্ধ বাসিন্দা খায়রুজ্জামান টিবিএসকে জানালেন, বেন্নে পাড়া গ্রামের মানুষ অভাবের তাড়নায় বহুবছর আগে থেকেই নানান ধরনের নিম্ন শ্রেণির কাজ করে জীবিকানির্বাহ করছিল। গ্রামের একটি শেণির মানুষ ছিল ছিঁচকে চোর ও পকেটমার। কিন্তু, ক্ষুদ্র পোশাক শিল্পে এর বাসিন্দারা সম্পৃক্ত হওয়ায় সময়ের ব্যবধানে এই গ্রামের নামকরণ হয়েছে 'কারিগর পাড়া'।
কারিগর পাড়ার ক্ষুদ্র গার্মেন্ট উদ্যোক্তা আসির উদ্দিন টিবিএসকে জানান এই রূপান্তরের গল্প। তিনি বলেন, '১৯৯০ সালের দিকে যখন কোচাশহর এলাকায় তাঁত কারখানার বেশ জোয়ার তেরি হয়, তখন আমি এক বিঘা জমি বিক্রয় করে দুইটি হস্তচালিত তাঁত মেশিন এনে বাড়িতে স্থাপন করি। নয়ারহাট এলাকায় স্থানীয় কারিগরদের কাছে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই কাজ শুরু করি। পরে আমার ছেলেকেও শিখাই।'
'আমার গ্রামের বেশিরভাগ লোকজন খুবই গরিব ও নীচু মানসিকতার ছিল, তারা অনেক খারাপ কাজ করতো। এরপর আমার দেখাদেখি আরো দুই-একজন তাঁত এনে কাজ শুরু করে। আমি অনেককেই সহায়তা করি এই কাজকে এগিয়ে নিতে।'
'এরপর ধীরে ধীরে এই গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবারের ঘরে এই শিল্প গড়ে উঠেছে। ২০০৪ সালের দিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপির সহায়তায় এই গ্রামের নাম পরিবর্তন করে 'কারিগর পাড়া' নামকরণ করা হয়'- আসির উদ্দিন বলছিলেন ।
তিনি জানালেন, 'এই গ্রামে আর কোনো অভাবী মানুষ নেই। যার কারখানা করার সামর্থ্য নেই, সে অন্যের কারখানায় কাজ করে ভালো উপার্জন করে।'
এই গ্রামের বসিন্দা সবুজ মিয়া বললেন, 'আমার মেশিন নেই। কিন্তু প্রতিবছর কাজ করে দুই/আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারি। আমার স্ত্রীও দেড়/দুই লাখ টাকা ইনকাম করে। এটা দিয়ে আমাদের ছেলে ও মেয়ে পড়াশোনা করে এবং সংসার ভালোভাবে চলে। ছেলে এখন বগুড়ার সরকারি অজিজুল হক কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছে।'
সবুজ মিয়া জানালেন, এখন এই গ্রামের মানুষ অনেক ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখে। অতীত ভুলে সকলে মিলে একটি উন্নত স্বাবলম্বী গ্রাম তৈরির পথে আমরা সকলে মিলে কাজ করছি। একসময় পাশের এলাকার লোকজন আমাদের গ্রামে ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইতো না; এখন আর এই সমস্যা নেই। গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল রয়েছে। আগামীতে একটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য পরিকল্পনা নিচ্ছি আমরা।'
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাসিবুর রহমান বললেন, এই গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষ এখন শিক্ষিত। অনেকের ছেলে মেয়ে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।১৫ বছর আগে এই গ্রামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই ছিল না। এখন ৯ জন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
শুরুর কথা: আব্দুর রহিমের উদ্যোগকে আরো গতি দেন নয়া মিয়া ও তোতা মিয়া সরকার
নয়ারহাট হোসেয়ারী শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, ৬০'র দশকে গাইবান্ধার কিছু স্থানীয় ব্যক্তিকে সোয়েটার, মাফলার, মোজা ইত্যাদি বুননের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর আব্দুর রহিম বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে তাঁদের যোগাযোগ করিয়ে দেন ঋণ নিয়ে তাঁতযন্ত্র কেনার জন্য।
রাজধানীর মীরপুর এলাকায় 'ম্যাডনা ফ্যাশন' নামের একটি বড় কারখানাও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে এটি রাজধানীতে বড় রপ্তানি-নির্ভর কারখানায় রূপান্তরিত হয়।
এরমধ্যে তার দুই ছেলে বাবার ব্যবসার হাল না ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এদের মধ্যে একজন মারা যান। ২০০৯ সালের দিকে আব্দুর রহিম নিজেও মারা যান। এরপর ম্যাডোনা ফ্যাশন বন্ধ হয়ে যায়, বলে জানান ইকবাল।
গাইবান্ধায় ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা স্থাপনে আব্দুর রহিমের প্রাথমিক প্রচেষ্টার পরে– কোচাশহর ইউনিয়নের দুই চাচাতো ভাই– নয়া মিয়া ও তোতা মিয়া সরকার আরও লোকজনকে এই ব্যবসায় উৎসাহী করার পদক্ষেপ নেন।
এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করে দুজনই এলাকায় একসাথে থান কাপড়ের (শার্ট,প্যান্ট ও নারীদের বিভিন্ন পরিধেয় পোশাকের এক রংয়ের ও প্রিন্টের কাপড়) ব্যবসা শুরু করে স্বাধীনতার পরপরই। তারা ঢাকার বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল থেকে পাইকারি কাপড় কিনে এলাকা নিয়ে এসে খুচরা/পাইকারি বিক্রয় করতেন।
তোতা মিয়ার ছেলে হোসাইন মিয়া জানালেন, '১৯৮২ সালে তাঁরা দুই বন্ধু ঢাকায় থান কাপড় কিনতে গিয়ে একটি টেক্সটাইল মিলে প্রায় ৩০ টন বিদেশি সুতা পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তারা খুব কম দামে সেই সুতা কিনে সেটা এলাকায় নিয়ে এসে বিক্রি করেন।'
সুতা বিক্রির জন্য তাঁরা তখন মানুষকে নতুন ও পুরোনো তাঁত কেনার উৎসাহ দিতে থাকেন। এজন্য সুতা বাকিতে বিক্রি করেন, তবে শর্ত ছিল– মাল তৈরি করে বিক্রয়ের পর টাকা পরিশোধ করতে হবে।
'সে সময়, আরো প্রায় ৪০ জন নতুন উদ্যোক্তা মোজা-মাফলার বানানোর কাজ শুরু করলেন। এরপর এলাকায় শুরু হলো এই ক্ষুদ্র গার্মেন্ট শিল্পের জোয়ার'- যোগ করেন হোসেইন মিয়া।
নয়ারহাটের নামকরণ করা হয়েছে, দুই বন্ধুর মধ্যে নয়া মিয়ার নামে। এটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় শীতবস্ত্র বিক্রয় হাব। এখানে প্রায় ৪০০ দোকান রয়েছে শীতবস্ত্র পাইকারি বিক্রয়ের জন্য।
শুধু নয়ারহাট নয়, এসব এলাকায় আরো ১৫টি স্থানীয় বাজারে পাইকারি বিক্রয়ের হাব তৈরি হয়েছে। কোচাশহর ইউনিয়নের বুনাতলা বাজার, বৈরাগী বাজার, ডাকুমারা হাট উল্লেখযোগ্য। শালমারা ইউনিয়নের মিরারপাড়া বাজার, শালমারা বাজার, কলাকাটা হাটসহ বিভিন্ন বাজারে আরো প্রায় ৫০০টি দোকান রয়েছে বস্ত্রের পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে।
শালমারা ক্ষুদ্র গার্মেন্টস উদ্যোক্তা সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন টিবিএসকে বলেন, গত বছর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বস্ত্র বিক্রয় করেছে শালমারা ইউনিয়নের কারখানাগুলো। তবে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় কোচাশহর ইউনিয়ন এলাকায়। সেখানে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বাজার ছিল। এছাড়াও মহিমাগঞ্জ ও সৈয়দপুর এলাকায় আরো ৫০০ কোটি টাকার বস্ত্র উৎপাদন হয়েছে গত মওসুমে।
কোচাশহর হোসিয়ারি পল্লির দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কারিগর শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, শীতবস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে ওঠায় কারখানা মালিকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন, তেমনি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরাও খুঁজে পেয়েছেন কর্মসংস্থান। পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে এখন আর দুশ্চিন্তা করতে হয় না তাঁদের।
তবে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় দক্ষ কারিগরের অনেক অভাব রয়েছে। এছাড়াও গত কয়েক বছরে কোচাশহর হোসিয়ারি পল্লিতে অত্যাধুনিক কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় মেশিন যুক্ত হয়েছে। যেসব মেশিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় বলে জানান তিনি।
সকল কাজের কাজী সাবু ভাই
কোচাশহর এলাকার ইসমাইল হোসেন সাবু। তাকে সবাই সাবু ভাই বলেই চিনেন। শামীমা হোসিয়ারি ও শামীমা মেশিনারিজ নামে দুইটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। কোচাশহর বাজারেই দুইটি পৃথক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
১৫ জন শ্রমিক দিয়ে বস্ত্র শিল্পটি চালান, এর পাশাপাশি তাঁত শিল্পের জন্য সকল ধরনের নতুন পুরাতন মেশিনারিজ ও পার্টস বিক্রয় করেন। কারো কারখানার যেকোনো মেশিনের সমস্যা সমাধানের জন্য তাঁর নাম এই এলাকায় বেশ প্রসিদ্ধ।
সাবু টিবিএসকে জানান, ২০ বছর আগে ঢাকার ধোলাইখালে একটি লেদ কারখানায় কাজ করতেন। পরবর্তীতে এলাকায় এসে তিনটি তাঁত মেশিন কিনে বস্ত্র ব্যবসা শুরু করেন। যেহেতু মেশিনারিজ ঠিকঠাক করার কাজ জানা ছিল, তাই প্রথমদিকে হস্তচালিত তাঁত মেশিন ও ইলেকট্রিক লুম মেশিন মেরামতের কাজ করতেন। পরবর্তীতে পুরাতন মেশিনারিজ কেনা-বেচা করার শুরু করেন। এখন বস্ত্র উৎপাদনের জন্য আধুনিক জেকার মেশিন বিদেশ থেকে আমদানি করে এসব এলাকায় সাপ্লাই করেন।
তিনি বলেন, এই চার ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজার কাখানার মধ্যে বেশিরভাগই তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন মেশিন পার্টস কেনে। এতে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। তিনি ছাড়াও আরো তিনজন ব্যবসায়ী আছেন তার মতো কাজ ও মেশিনারিজ ব্যবসা করেন।
এই এলাকার কোনো কারখানায় কোনোরকম ডিজাইনার নেই। এখানে সকলেই নিজেই উদ্যোক্তা, নিজেই ব্যবসায়ী নিজেরাই কারিগর।
মহিমাগঞ্জের কারখানা মালিক জাহিদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'আমার কারখানায় সোয়েটার তৈরি হয়। আমি বিভিন্ন সুতার রং সমন্বয় করে ডিজাইন তৈরি করি। সেই ডিজাইন অনুসারে শ্রমিকরা কাজ করে। আমি নিজেও অনেক সময় মেশিনের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করি, এবং শ্রমিকদের নির্দেশনা দেই'।
'এই ৫০ গ্রামে যতো কারখানা আছে, সবগুলোতেই এভাবে বস্ত্র উৎপাদন প্রক্রিয়া চলে' যোগ করেন তিনি।
সরকারি সহায়তার অভাব
নয়ারহাট হোসেয়ারি শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, এসব এলাকায় এসএমই ফাউন্ডেশনের ঋণ কার্যক্রম রয়েছে খুব ছোট পরিসরে, উল্লেখ করার মতো কিছু নেই। তাঁত শিল্পকে আধুনিকায়নের জন্য কারো পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই। যদিও ট্যাক্সের টাকা ঠিকঠাকভাবে আদায় করছে সরকার।
এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাইকারি বাজারগুলোর রাস্তা বড় যান চলাচল ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পাইকারদের যাতায়াতের জন্য উপযুক্ত নয়। এই এলাকার জন্য তাঁত শিল্পীদের দক্ষতা উন্নয়নে কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে- তিনি আরও বলেন।
নয়ারহাটের একটি কারখানা মালিক শাহাদুল ইসলাম জানান, এ সমস্ত বিকাশমান ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে স্থানীয় ব্যাংকগুলো কোনো ঋণ দেয় না। ফলে কারখানা চালাতে তাঁদের উচ্চ সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের থেকে ঋণ নিতে হয়। নয়তো ক্রেতাদের থেকে আগাম টাকা নিয়ে শীত মৌসুমে তাদের উৎপাদন শুরু করতে হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এতে লাভের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। তদুপরি ব্যবসা ভাল নাহলে ঋণগ্রস্ত হয়ে তাদের বিপাকেও পড়তে হয় - আরও জানান তিনি।