চারদিন পর বাংলাদেশি পণ্যবাহী ৫টি ট্রাক গেল ভারতে
চারদিন বন্ধ থাকার পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে রোববার থেকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এদিন বিকাল ৫টার দিকে বাংলাদেশি ৫ ট্রাক পণ্য ভারতে রপ্তানির মাধ্যমে এই কার্যক্রম চালু হয়। সোমবার থেকে পুরোদমে চলবে দু'দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রপ্তানি পণ্য না নেওয়ায় ১ জুলাই সকাল থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা এক হয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলেন আমদানি বাণিজ্য কার্যক্রম। গেল ১০০ দিনে বাংলাদেশ থেকে কোনো পণ্য চালান ভারতে রপ্তানি হয়নি। অথচ লকডাউনের ৭৭ দিনের মাথায় ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আসা শুরু করে।
করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ২২ মার্চ এই দুই বন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে দুই দেশের বন্দর, কাস্টমস, বন্দর ব্যবহারকারীরা দফায় দফায় বৈঠকের পর গত ৭ জুন সীমান্ত বাণিজ্য সচল করা হয়। এরপর থেকে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আসছে। কিন্তু ওই সময়ে বাংলাদেশি কোনো পণ্যচালান ভারতে রপ্তানি হয়নি।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলছেন, করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় 'নিরাপত্তাজনিত' কারণ দেখিয়ে ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে কোনো পণ্য নিচ্ছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা একতরফা বাণিজ্য বন্ধ করেছি। শেষেমেষ রোববার বিকাল থেকে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে।
দেশে স্থলপথে যে রপ্তানি হয়, তার প্রায় ৭০ শতাংশ ভারতে যায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৯ হাজার টন বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। তবে ভারত থেকে পণ্য আসে এর বহু গুণ।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, করোনার মধ্যে আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর গত ৭ জুন থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য স্বাভাবিক হলে ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় বেনাপোল বন্দরে কমপক্ষে দুই শতাধিক ট্রাক রপ্তানিযোগ্য পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোদ, বৃষ্টিতে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ব্যবসায়ীদের লোকসানের পাল্লাও ভারি হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা স্থলপথে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্য সচলের জন্য বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। আমদানিতে 'হ্যাঁ' বললেও রপ্তানিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ 'না' বলেই চলেছে।
আমদানি উন্মুক্ত হওয়ার পর গত ৭ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ভারত থেকে চার হাজার ২০০ ট্রাক পণ্য বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। অথচ একটি রপ্তানি ট্রাকও গ্রহণ করেনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা আমদানি রপ্তানি বন্ধ করলে টনক নড়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের।
বেনাপোলসহ আশেপাশের রপ্তানিকারকরা বলছেন, ভারতের সরকারি কর্তৃপক্ষের মনোভাব ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ পৌরসভার মেয়রের খামখেয়ালিপনা, আমদানি-রপ্তানিতে নাক গলানো, পৌরসভার কালিতলায় পার্কিং সৃষ্টি করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা ট্রাকগুলোকে জোরপূর্বক পেট্রাপোল বন্দরের সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস করপোরেশনের টারমিনালে না পাঠিয়ে চাঁদার দাবিতে কালিতলা পার্কিংয়ে রেখে দেওয়ার কারণে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কাজে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় ২২ মার্চ থেকে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। ৭ জুন থেকে আবার আমদানি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বন্ধ থাকায় ২৪ জুন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যসচিব আলাপন ভট্টাচার্যের কাছে আমরা চালুর ব্যাপারে আবেদন করি। এই বন্দর দিয়ে রপ্তানি চালু না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পরে আমরা বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ রাখলে রোববার থেকে রপ্তানি পণ্য গ্রহণ করছে ভারত। আশা করছি সোমবার থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর পুরোদমে সচল হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বেনাপোল কাস্টমের অতিরিক্ত কমিশনার ড. সৈয়দ নিয়ামুল ইসলাম জানান, রোববার বিকালে ৫টি পণ্যবাহী ট্রাক ভারতে প্রবেশ করেছে। সন্ধ্যার পর কিছু আমদানি কাজে ব্যবহৃত পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করবে। এখন থেকে দু'দেশের বাণিজ্য কার্যক্রম চলবে সমান গতিতে।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে সাধারণত ওভেন গার্মেন্টস, নিটেড গার্মেন্টস, নিটেড ফেব্রিকস, চিংড়ি, বিভিন্ন ধরনের মাছ, কাঁচা পাট, পাটজাত দ্রব্য (পাটের ব্যাগ, সুতা, চট), টিস্যু, সুপারি, ধানের কুড়া, কর্টন র্যাগস (ঝুট), ফ্লোট গাস, ব্যাটারি, জিংক পেট, সিরামিক টাইলস, সাবান, হাড়ের গুঁড়া, কাঁচা চামড়া, প্রক্রিয়াজাত চামড়া, ওষুধ, সবজি, ফল, চা, পেট্রোলিয়াম বাই প্রোডাক্ট, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য ও সিমেন্ট রপ্তানি হয়।