'স্ত্রী টাকা নিয়ে পালিয়েছে, তারপর যৌতুকের দায়ে মামলা করেছে': প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান সাবেক জল্লাদ শাহজাহান
একাধিক মামলার রায়ে দীর্ঘ ৪৪ বছর কারাভোগ করেছেন নরসিংদী জেলার আলোচিত সাবেক জল্লাদ শাহজাহান। কারাগারে একের পর ফাঁসি কার্যকরে অংশ নিয়ে দেশব্যাপী পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি।
দীর্ঘ কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ২৮ জুন মুক্তি পান শাহজাহান। এরপর তিনি নতুন করে জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখছিলেন।
তারই ধারাবাহিকতায় শাহজাহান একটি চায়ের দোকান দিয়ে ফেরেন স্বাভাবিক জীবনে। এ সময় এক তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর গত ডিসেম্বর মাসে ঐ নারীকে বিয়ে করেন তিনি।
তবে সেই সংসার খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বিয়ের মাত্র দুই মাস পরে তার স্ত্রী ৭ লাখ টাকার বেশি নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শাহজাহান। এমনকি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যৌতুক নিষেধাজ্ঞা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে ঐ নারী।
গতকাল, সোমবার (১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিয়ে করে সর্বস্ব হওয়ার দাবি করেছেন শাহজাহান। এমতাবস্থায় নিজের জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
শাহজালাল অভিযোগ করেছেন যে, তার স্ত্রী একটি প্রতারক চক্রের সদস্য। যার শিকার হয়েছেন তিনি। চক্রটি তার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
সাবেক জল্লাদ শাহজাহানকে ৩৬টি মামলায় ১৪৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি ১৯৭৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিল। এরপর জেলে একজন জল্লাদ হিসাবে কাজ করে তিনি বহু বছরের সাজা মওকুফ করতে সক্ষম হন। গত বছরের ২৮ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
নিজের স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হওয়া সম্পর্কে শাহজালাল বলেন, "একদিন কেরানীগঞ্জের কদমতলি থেকে যাওয়ার পথে সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে একটি ভ্যানিটি ব্যাগ পাই। ব্যাগে থাকা কাগজপত্র থেকে পাওয়া ফোন নম্বরে কল করে আমি ব্যাগটি নিয়ে যেতে বলি।"
শাহজালাল আরও বলেন, "এরপর আমি ঐ নাম্বারে কল দিয়েছিলাম। ফোনটি সাথী আক্তার ফাতেমা নামের একজন ধরেছিল। আমি তাকে আমার কাছ থেকে তার ব্যাগটি নিতে বলেছিলাম। পরে সে তার মাকে সাথে নিয়ে আমার সাথে দেখা করেন। এরপর ফাতেমার সাথে ফোনে কথা বলা শুরু করলাম। এক পর্যায়ে তারা গোলাম বাজারে (তার বাড়ির কাছে) চলে আসেন। তার মা তখন আমার বাড়িতে রান্নার কাজ শুরু করেন।"
শাহজাহান অভিযোগ করেন, "ওরা যে এত বড়ো একটা প্রতারক চক্র তা জানতামই না। ওদের চক্রে কয়েকজন নারী ও পুরুষ আছে। তারাই বিয়ের সময় সাক্ষী হয়েছেন এবং আমার বিরুদ্ধে করা মামলায়ও সাক্ষী হয়েছেন।"
প্রথম দেখা হওয়ার পাঁচ মাস পর ২১ ডিসেম্বর ৫ লাখ টাকা যৌতুকের চুক্তিতে শাহজাহান ও ফাতেমার বিয়ে হয়। শাহজাহান বলেন, "বিয়ের আগে তারা আমার কাছ থেকে প্রতারণা করে দেড় লাখ টাকা নিয়েছিল। বিয়ের দিন সই করে আমার জমানো আরও ১০ লাখ টাকা নিয়ে যায়।"
শাহজাহান বলেন, "এরপর বিয়ের ৫৩তম দিনে আমার স্ত্রী নগদ ৭ লাখ টাকাসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। আমি থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তারা মামলা নিতে অস্বীকার করে। বরং আমি জানতে পারি যে, ১৫ ফেব্রুয়ারি সাথী আক্তার ফাতেমা আমার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা করেছেন।"
কারাগারে যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের কথা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে শাহজাহান বলেন, "শেখের বেটির কাছে আমার চাওয়া এসবের পুরস্কার হিসেবে আমাকে একটি আবাসন ও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত যেন চলতে পারি তার জন্য একটি সহজ কর্সংস্থানের ব্যবস্থা করে দিন।"
শাহজাহান বলেন, "আমি এখন উভয় সংকটে জীবনযাপন করছি। একে তো আমার অচল অর্থনৈতিক অবস্থা। অন্যদিকে এক নারী আমার জীবনের শেষ জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। আমাকে যৌতুকের মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।"
প্রতারণার অভিযোগে স্ত্রী সাথী আক্তার ফাতেমা ও শাশুড়ি শাহিনুর বেগমসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন শাহজাহান। রোববার (৩১ মার্চ) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ. কে. এম. রকিবুল হাসানের আদালতে এ মামলা করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি এই ঘটনার সাথে জড়িত চক্রের শাস্তির দাবিও জানান।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে ২৭ জুন প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য আসামিরা হলেন- শাহজাহানের শ্বশুর বাড়ির স্বজন দীন ইসলাম, আজিদা বেগম, রাসেল ও বাবলু।