বার্ড স্ট্রাইক কী? পাখির সাথে বিমানের সংঘর্ষে কী ঘটে?
নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউন থেকে সোমবার স্থানীয় সময় রাতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের উদ্দেশে যাত্রা করে ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান। কিন্তু উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিমানটির ডানপাশের ইঞ্জিন বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটতে শুরু করে। এরপর সেটিতে আগুন ধরে যায়।
পাইলট তৎক্ষণাৎ কাছের একটি এয়ারপোর্টে বিমানটির জরুরি অবতরণ করান। এতে প্রাণে বেঁচে যান বিমানে থাকা ৭৩ যাত্রী ও ক্রু।
ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, এ ঘটনার কারণ 'সম্ভাব্য বার্ড স্ট্রাইক'। তবে কুইন্সটাউন এয়ারপোর্ট অবশ্য এতে দ্বিমত জানিয়ে বলেছে, 'ওই সময়ে এয়ারফিল্ডে কোনো পাখির উপস্থিতি ধরা পড়েনি।'
যদিও ঘটনাটির কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে বিমানের জন্য বার্ড স্ট্রাইক খুবই সাধারণ ও বাস্তব একটি ঝুঁকি। এটি বিমানের ক্ষয়ক্ষতি এমনকি আরোহীদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
বার্ড স্ট্রাইক কি এবং এটি কতটা সাধারণ বিষয়?
বার্ড স্ট্রাইক হলো বিমান ও পাখির মধ্যে সংঘর্ষ। ১৯০৫ সালে ওহাইওতে সর্বপ্রথম বার্ড স্ট্রাইকের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছিল ।
বর্তমানে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা দেখা যায়। সবচেয়ে বড় বার্ড স্ট্রাইকের ঘটনাটি সম্ভবত ২০০৯ সালে ঘটেছিল। সে সময় ইউএস এয়ারওয়েজের একটি বিমান নিউইয়র্কের লাগার্ডিয়া এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়নের পরপরই এটির সামনে একঝাঁক পাখি এসে পড়ে। বহু পাখি বিমানের ইঞ্জিনের মধ্যে ঢুকে পড়ায় দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়ে পাইলট বিমানটিকে কোনো রকমে হাডসন নদীতে অবতরণ করান।
২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি বোর্ড ১৬ হাজার ৬২৬টি বার্ড স্ট্রাইকের ঘটনা রেকর্ড করেছে।
অন্যদিকে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে কেবল ২০২২ সালেই ১৭ হাজার ২০০ বার্ড স্ট্রাইকের ঘটনা ঘটেছে।
বার্ড স্ট্রাইক কোথায় ঘটে, এর প্রভাব কী?
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের মতে, ৯০ শতাংশ বার্ড স্ট্রাইক বিমানবন্দরের কাছাকাছি ঘটে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিমান উড্ডয়নের পর পর, অবতরণের সময় কিংবা বিমান যখন অল্প উচ্চতায় ওড়ে তখন এ ঘটনা বেশি ঘটে।
বার্ড স্ট্রাইকের কারণে বিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। আর ছোট বিমানের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে এক ইঞ্জিনের বিমান হলে এর প্রভাব আরও মারাত্মক হতে পারে। ১৯৮৮ সাল থেকে বার্ড স্ট্রাইকের কারণে বিশ্বব্যাপী ২৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৫০টি বিমান ধ্বংস হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের সিভিল এভিয়েশন সেফটি অথোরিটি এ দুর্ঘটনা রোধে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। যেমন- বিমানবন্দরে নির্দিষ্ট ধরনের গাছ ও ঘাস লাগানো, যেগুলোর প্রতি পাখি আকৃষ্ট হয় না। শব্দের সাহায্যে পাখিদের রানওয়ে থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করা।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক