সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ ও নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ থাকছে ২০২৫ অর্থবছরেও
আর্থিক কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য উন্নয়ন ও পরিচালন বাজেটের আওতায় নতুন অর্থবছরেও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন গাড়ি কেনা এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখবে অর্থ মন্ত্রণালয়। জুলাই মাসের শুরুতেই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে অর্থবিভাগ।
এছাড়া, পূর্তকাজ ও ভূমি অধিগ্রহণ, প্রশিক্ষণ ও সভার সম্মানীর ক্ষেত্রেও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে। উন্নয়ন ও পরিচালন—উভয় ক্ষেত্রেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হতে পারে।
তবে পেট্রোল, তেল, লুব্রিকেন্ট ও বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকছে না।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ থাকলেও তা শুধু সরকারি তহবিল ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে।
তবে বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীদের আমন্ত্রণে এবং তাদের অর্থায়নে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, সরকারি অর্থায়ন ও উন্নয়ন সহযোগী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের প্রদত্ত স্কলারশিপ, ফেলোশিপের আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়ন করা যাবে।
সরবরাহকারী, ঠিকাদার, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তারা পণ্য ও সেবার গুণগত মান নিরীক্ষা ও পরিদর্শনে বিদেশ যেতে পারবেন।
চলতি অর্থবছরেও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গাড়ি কেনা নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সীমিত আকারে কৃচ্ছ্রতাসাধন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। তবে ধীরে ধীরে কৃচ্ছ্রতাসাধন থেকে বের হবে সরকার।
আগামী অর্থবছরে কোন কোন খাতে কৃচ্ছ্রতা সাধন করা হবে—এমন প্রশ্নে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্ত টিবিএসকে বলেন, নতুন অর্থবছরও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন গাড়ি, জলযান ও আকাশযান কেনা বন্ধ থাকবে। সরকারি অর্থায়নে আগামী অর্থবছরেও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখা হবে।
তিনি আরও বলেন, 'পূর্তকাজ ও ভূমি অধিগ্রহণে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করা হতে পারে। যদিও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ের সম্মানী থেকে খুব বেশি সাশ্রয় হয় না, তবু মানসিকভাবে কৃচ্ছ্রতার ধারণা পোষণ করতে এক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। সবকিছু ৩০ জুনের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে।'
এবার বাজেটের আকার যেহেতু তুলনামুলকভাবে ছোট, তাই কৃচ্ছ্রতা সাধনের সুযোগও থাকবে কম। চলতি অর্থবছরে পেট্রোল, তেল, লুব্রিকেন্টে বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ বিল বাবদ বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ ব্যয় করার নির্দেশনা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী অর্থবছরে এসব খাতে বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না।
এর কারণ হিসেবে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ বিলে মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হলেও তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। আগের চেয়ে বিদ্যুতের ব্যবহার ২০ শতাংশ কমানো হলেও বাড়তি দামের কারণে বিল বাড়ছে।
আবার লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার সরকারি অফিসগুলোতে জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে, এতেও ব্যয় বাড়ছে। তাই নতুন অর্থবছরে পেট্রোল, অয়েল, লুব্রিকেন্ট এবং বিদ্যুৎ বিল বাবদ বরাদ্দের শতভাগ ব্যবহার করা যাবে।
কোভিড সংক্রমণের পর থেকেই সরকার কৃচ্ছ্রতা সাধন নীতি অনুসরণ করছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর দেশে ডলার সংকট শুরু হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ অধিক হারে কমতে থাকায় কৃচছ্রতা সাধনে আরেকটু কঠোর হয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতা সাধন থেকে সরে আসে সরকার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃচ্ছ্রতা সাধন নীতির কারণে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা। চলতি অর্থবছরে কত সাশ্রয় হচ্ছে, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব জানা সম্ভব হয়নি।
তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির প্রেক্ষিতে এবং অগ্রাধিকার খাতে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে শেয়ার ও ইক্যুইটি বিনিয়োগ খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ খাতে ১৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হ্রাস করা হয়েছে।