নিজের বেতন ৪০ শতাংশ কমালেন লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট
নিজের বেতন ৪০ ভাগ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোকাই। দেশটির প্রেসিডেন্ট অফিস জানায়, এর মাধ্যমে তিনি 'দায়িত্বপূর্ণ শাসন' এবং লাইবেরিয়ানদের সাথে 'সংহতি' প্রদর্শনের নজির স্থাপনের আশা করছেন। খবর বিবিসির।
সম্প্রতি লাইবেরিয়ানরা জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়ে অভিযোগ করছে। এমতাবস্থায় দেশটির সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও কঠোর তদন্তের অধীনে রয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের দৈনিক আয় ২ মার্কিন ডলারেরও কম।
প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোকাই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানায়, তার বার্ষিক বেতন ১৩ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার। তবে বেতন কমানোর সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের ফলে তার বার্ষিক বেতন নেমে আসবে ৮ হাজার ডলারে।
অবশ্য বোকাইয়ের আগে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তার পূর্বসূরি জর্জ ওয়েহের। দেশটির সাবেক এই প্রেসিডেন্ট তার বেতন ২৫ শতাংশ কমিয়েছিলেন।
লাইবেরিয়ার অনেকেই প্রেসিডেন্ট বোকাইয়ের নিজের বেতন কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু এটি আসলেই কোনও ত্যাগ কি-না তা অন্যরা এখনও প্রশ্ন তুলছেন। কারণ দৈনিক ভাতা ও চিকিৎসা সুবিধার মতো এখনও বেশ কিছু সুবিধা তিনি পাবেন। এদিকে প্রেসিডেন্ট অফিসের বাজেট এই বছর প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলার।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান 'দ্য সেন্টার অব ট্রান্সপারেন্সি এন্ড একাউন্টেবিলিটি ইন লিবিয়া'র এন্ডারসন ডি মিয়ামেন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "আমরা শুধু আশা করি যে, জনসাধারণ স্পষ্টভাবে দেখতে পাবে যে সাশ্রয় করা অর্থগুলো কোথায় যাবে এবং কীভাবে সেগুলি মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে ব্যবহার করা হবে।"
ডব্লিউ লরেন্স ইয়েলুও দেশটিতে সরকারি স্বচ্ছতার নিশ্চিতের জন্য প্রচারণা চালায়। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে 'খুবই প্রশংসনীয়' বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, "শীর্ষ থেকে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে।"
লরেন্স আশা করেন যে, প্রেসিডেন্টের সুবিধাগুলি আগামী অর্থবছরের বাজেটে পর্যালোচনা করা হবে। একইসাথে বেতন কমানোর পাশাপাশি বোকাই লাইবেরিয়ার সিভিল সার্ভিস এজেন্সিকে 'ক্ষমতায়ন' করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যাতে সরকারি কর্মচারীরা দেশে তাদের অবদানের জন্য ন্যায্য সুবিধা পান।
এদিকে গত সপ্তাহে একদল আইনপ্রণেতা অভিযোগ করেছেন যে, তারা নিজেদের অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনের জন্য গাড়ি পাচ্ছেন না। ফলে প্রতিবাদস্বরূপ তারা স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত সাদামাটা পরিবহণ 'টুক টুকস'-এ করে সংসদে গিয়েছিলেন।
বোকাই গত জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি দুর্নীতি ও আর্থিক অব্যবস্থাপনা মোকাবেলার অঙ্গীকার করেছিলেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিজের সম্পদ ঘোষণার পাশাপাশি বোকাই প্রেসিডেন্ট অফিসের একটি অডিটের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এর ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। বোকাই দেশটির জেনারেল অডিটিং কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করেছেন।
এদিকে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট ওয়েহের সরকার দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত ছিল। এতে করে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিল।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান