সরকারের কাছে সমাধান চাই, কোর্টের কাছে নয়: কোটা আন্দোলনকারীরা
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের হাইকোর্টের আদেশে আপিল বিভাগের একমাস স্থিতাবস্থার আদেশ সত্ত্বেও 'বাংলা ব্লকেড' আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি আদালতের কাছে নয়, সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছে বলে জানিয়েছে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আপিল বিভাগের একমাস স্থিতাবস্থার আদেশের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রশীদ জিতু বলেন, "আমাদের প্রতিবাদ হাইকোর্টের আদেশের সাথে সম্পর্কিত নয়, সরকারের নির্বাহী শাখার সাথে সম্পর্কিত"
সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ৪ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করলেও 'এক দফা' দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত 'বাংলা ব্লকেড' অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রশীদ জিতু।
আপিল বিভাগের শুনানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "২০১৮ সালে আমাদের আন্দোলন ছিল কোটা সংস্কারের আন্দোলন, এখনও আমরা সেটি বলছি।"
তিনি আরো বলেন, "আমাদের দাবি সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোঠা পদ্ধতিকে সংস্কার করা। দাবিটি আমাদের নির্বাহী বিভাগের কাছে। তা সত্ত্বেও আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আপিল শুনানি যদি সম্পূর্ণভাবে আমাদের পক্ষে যায়, সেক্ষেত্রে আমরা পরবর্তীতে বিবেচনা করবো।"
তিনি বলেন, "আমাদের 'একদফা' দাবি বাস্তবায়নের পক্ষে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।"
হাইকোর্টের রায়কে আন্দোলন থামানোর একটি কৌশল বলে জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী হাসনাত আব্দুল্লাহ।
আপিল বিভাগের আদেশের পর হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, "আমরা রায়টিকে পর্যালোচনা করছি। আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। আমরা চাই একটা কমিশন গঠন করে কোটাকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হোক।"
তিনি আরও বলেন, "আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ আমাদের আন্দোলনকে থামানোর অপচেষ্টা বলে আমরা মনে করছি। নির্বাহী বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।"
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফ সোহেল বলেন, "আমাদের দাবি, কোটা পদ্ধতির সংস্কার এবং সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে সংসদে আইন পাস করা। কোটা সংস্কারের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।"
তিনি বলেন, "আমরা এই ইস্যুর বারবার পুনরাবৃত্তি চাই না। অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা দেশের সুনাগরিক হতে চাই। এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দেশে বৈষম্যহীন কোটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।"
আরেক আন্দোলনরত শিক্ষার্থী অন্বেষা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে আপিল বিভাগের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের দাবি কোটা প্রথা বাতিল নয়, এর সংস্কার। আমাদের দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে নির্বাহী শাখা একটি কমিটি গঠন করতে পারে। কমিটির সুপারিশ সাপেক্ষে সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা যেতে পারে।"
"২০১৮ সালের পর আবারো ২০২৪ সালে আমাদের এই ইস্যুতে আন্দোলন করতে হচ্ছে। আজ যদি কোটা পদ্ধতির স্থায়ী সমাধান না হয় তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একই দাবিতে আন্দোলন করতে হবে। আমরা তা চাই না। আমাদের জায়গা রাস্তায় নয়, আমাদের দাবি মেনে নিয়ে আমাদের সুযোগ দেয়া হোক।"
২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সার্কুলার পুনর্বহালের দাবিতে ২ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি, মিছিল আয়োজন এবং সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই বছরের এপ্রিলে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দিলে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়।
যদিও আন্দোলনকারীরা সংস্কার চেয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমরা যদি [কোটা পদ্ধতির] সংস্কারের জন্য যাই, তাহলে কয়েকদিন পর আরেকটি দল আসবে এবং বলবে 'আমরা আরও সংস্কার চাই'। কোটা ব্যবস্থা থাকলে এই সমস্যা আসতেই থাকবে। কিন্তু যদি এটা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কোন সমস্যা হবে না, তাই কোটা ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই।"
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
এ সময় রিট আবেদনকারীরা বলেছিলেন, ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের জন্য ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলুপ্ত করে ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডে রাখা হয়েছে, যা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অপমান করার শামিল।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রুলে ঐ পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না — সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পরবর্তীকালে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বলা হয়, সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে।