বেনাপোলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ, আটকা পড়েছে ভারতের ১৩০০ ট্রাক
নিরাপত্তাজনিত কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
গত ৬ আগস্ট সকাল থেকে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাকের জট লেগেছে।
এর আগে সোমবার (৫ আগস্ট) সকাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়।
বেনাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশানের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল ৩টা থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, "এ দিন সকালে ১৫৬টি গাড়ি পণ্য নিয়ে পেট্রাপোল থেকে বেনাপোল বন্দরে এসেছে। তারপর থেকে মঙ্গলবার কোনো পণ্য আসেনি। পরিস্থিতি শান্ত হলে আলোচনার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির কাজ শুরু করা হবে।"
তিনি জানিয়েছেন, বেনাপোল বন্দরে শ্রমিকরা না থাকায় কোনো কাজ করা যায়নি। বন্দরে নতুন শ্রমিকরা যোগদান করলেই কাজ শুরু হবে। বন্দরের সবাই কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশানের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বেনাপোল বন্দর এলাকায় শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল করেছে।
তিনি বলেন, "নিরাপত্তার স্বার্থে অনেকে পণ্য আমদানি করছেন না। এতে করে পেট্রাপোলে প্রায় ২ হাজার ট্রাক অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য।"
বেনাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়াডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বিপু জানান, সরকার পরিবর্তন হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসতে চাইছেন না। আবার বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও সড়কে নিরাপত্তার অভাবে পণ্য ছাড় করছেন না। যে কারণে পেট্রোপোল ও বেনাপোল বন্দরে কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে।
কাস্টম সূত্র জানিয়েছে, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশের সরকার অনুমোদিত ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চালু থাকা ১২টি বন্দরের অন্যতম বেনাপোল স্থলবন্দর।
এ বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার। মাত্র ৩ ঘণ্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারে কলকাতা শহরে, আবার কলকাতা থেকে পণ্য আসতেও একই সময় লাগে। তেমনি একই সময় কলকাতা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ পথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে।
প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৮০ হাজার টন পণ্য আমদানি হচ্ছে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা এবং রপ্তানি বাণিজ্য থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়।
প্রতি বছর ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি করা হয় । সরাসরি প্রায় ২০ হাজার মানুষ এবং পরোক্ষভাবে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষ এই স্থলবন্দরের ওপর নির্ভরশীল ।
আমদানি পণ্যের মধ্যে গার্মেন্টস সামগ্রী, তৈরি পোশাক, শিল্পকারখানা ও ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনি যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, খাদ্যদ্রব্য, চাল, পেঁয়াজ, তুলা, বাস, ট্রাক চ্যাসিস, মোটরসাইকেল এবং পার্টস ও টায়ার রয়েছে।
রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, টিস্যু, ধানের কুড়া, সাদা মাছ, ব্যাটারি, সিরামিক টাইলস, সাবান, হাড়ের গুড়া, ওভেন গার্মেন্টস, নীটেড গার্মেন্টস, নীটেড ফেব্রিকস, উল্লেখযোগ্য।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, তারা গতকালও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছেন বাণিজ্য সুবিধা স্বাভাবিক রাখার জন্য। নিরাপত্তার স্বার্থে অনেকে পণ্য ছাড় করছেন না।
বর্তমানে বন্দরে প্রায় আড়াই শতাধিক রপ্তানিবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। আবার পেট্রাপোল বন্দরেও ট্রাক অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য।
বেনাপোল কাস্টমের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন জানিয়েছেন, তারা বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতে সিএন্ডএফ প্রতিনিধিদের তাগাদা দিয়েছেন। কেউ কেউ পণ্য গ্রহণ না করার জন্য নিরাপত্তাকে কারণ দেখিয়েছেন। বৃহস্পতিবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন তারা।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম বলেন, "দুই পারের যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। গত দুদিন শুধু মেডিকেল ভিসার যাত্রীদের ভারতে যেতে দেওয়া হয়েছে। কোনো লাল বা অফিসিয়াল পাসপোর্টধারী যাত্রী ইমিগ্রেশনে আসেনি।"
বেনাপোলে আটকা পড়েছে ১৩০০ ভারতীয় ট্রাক
ভারতের আনুমানিক ১ হাজার ৩০০ ট্রাক বেনাপোলে সীমান্তে আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেস (এআইএমটিসি) ইতোমধ্যেই এসব যানবাহন এবং সেগুলোর কর্মীদের ফেরত পাঠানোর সুবিধার্থে সরকারকে চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এআইএমটিসি সভাপতি অমৃত লাল মদন।
তিনি বলেন, "আমরা সরকারকে জানানোর পর সরকারি হস্তক্ষেপে ট্রাকগুলো ভারতে ফিরে আসতে শুরু করেছে।"
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পরিবহণ ব্যবসায় প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন এআইএমটিসি সভাপতি।
বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতা ভারতের পরিবহণ খাতে প্রভাব ফেলার প্রধান কারণ– এটি ভারতীয় পণ্যের একটি বিশাল বাজার।
অল ইন্ডিয়া ট্রান্সপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রমেশ আগরওয়াল বলেন, "অনুকূল শুল্ক কাঠামোর জন্য প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ট্রাক বাংলাদেশে যেত, যা এখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।"