সাভারে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুরসহ ৩২১ জনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা
ঢাকার সাভারে গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাজ্জাদ হোসেন (২৯) নামে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায়– মোট ৩২১ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে, সাবেক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে।
গতকাল রোববার দিবাগত রাতে সাভার মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহতের পিতা মো. আলমগীর।
যদিও রাত ১২টার পর মামলাটি রেকর্ড হওয়ায় তারিখ ১৯ আগস্ট উল্লেখ করা হয়েছে।
নিহত সাজ্জাদ হোসেন (২৯) নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর থানাধীন পশ্চিম পাটোয়ারী গ্রামের মো. আলমগীরের ছেলে।
তিনি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার পাশাপাশি গাজীপুরের মাওনায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
সাজ্জাদের পরিবার সাভারের কলমা এলাকায় বসবাস করলেও, সাজ্জাদ পোশাক কারখানায় কাজের সুবাদে গাজীপুরেই বসবাস করতেন। ঘটনার দুদিন আগে ৩ আগস্ট তিনি সাভারের কলমা এলাকার বাসায় আসেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
মামলায় ডা. এনামুর রহমান ছাড়াও, সাভার পৌর মেয়র হাজী আব্দুল গনি, মেয়রের তিন ছেলে– আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, কামরুল হাসান শাহীন ও মেহেদী হাসান তুষারসহ, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, আ. লীগ নেতা মাসুদ চৌধুরী, তেতুলঝোড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর, সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন বর্তমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, বর্তমান ও সাবেক পৌর কাউন্সিলরসহ আ. লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের মোট ৩২১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪০০ - ৫০০ জনকে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রশীদ টিবিএসকে বলেন, গতকাল রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার দিন ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে সাভার বাসস্ট্যান্ডে যান সাজ্জাদ। পরবর্তীতে মামলার বাদী বিকালে ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদ পান, এবং পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট সকাল আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে মামলার ১ থেকে ১০ নং আসামির হুকুম ও প্ররোচণায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা, যাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে, সাজ্জাদকে লাঠিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে। পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
মামলার বাদী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, ঘটনার দিন সকাল ৭টায় নাস্তা করে বাসা থেকে আন্দোলনে যোগ দিতে বের হয়ে যায় সাজ্জাদ। পরবর্তীতে বেলা ১১টা পর্যন্ত ছেলের সাথে তার মুঠোফোনে কথা হয়। এরপর আর ছেলের সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।
পরবর্তীতে খোজ নিয়ে ছেলেকে এনামে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পান তিনি, এবং পরদিন ৬ আগস্ট সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজ্জাদ মারা যান।
তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সাজ্জাদ ছিলেন সবার বড়। তাকে গ্রামের বাড়ি নীলফামারীতে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।