আসামের নাগরিকত্ব সংকট: বাংলাদেশের যা করণীয়
এখন যেটা ঘটল এবং ভারতের সরকার যে কাজটা প্রক্রিয়াধীন রেখেছিল, তাতে ভারত থেকে বাংলাদেশে বড় আকারের পুশব্যাকের সরকারি পদক্ষেপ আর অপ্রকাশ্য নয়।
তবে, আমি এখন দু’রকমের চিত্র দেখতে পাচ্ছি। নিশ্চয়তা আর নিরাপত্তার জন্য আসামের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ-পড়ারা বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। আমার ধারণা, ভারত সরকারও সেটাই চাইবে। কারণ ওরা বরাবরই বলে এসেছে যে, এনআরসি নিয়ে ওদের কিছু করার নেই।
দ্বিতীয়ত, বিশাল আকারের একটি পুশব্যাকের ধাক্কা বাংলাদেশের ঘাড়ের ওপর পৌরাণিক উপাখ্যানের সেই ডেমোক্লেস'র তরবারির মতো ঝুলে থাকবে। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আরও কিছু আদায়ের জন্য এটা ভারত সরকারকে সুবিধা দেবে।
বাংলাদেশের তাই উচিত এমন একটি স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া যে, আমরা কোনো ভারতীয় নাগরিককে গ্রহণ করব না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়ে সে অবস্থা বজায় রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো যা ঘটতে পারে আর সবচেয়ে খারাপ যেটি হতে পারে, সব মিলিয়ে ভেবে আগাম পরিকল্পনা করে রাখতে হবে।
সরকারের বৈদেশিক নীতির জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। আমাদের তরফ থেকে সব সময় পরিস্থিতির গুরুত্বটা হালকা করে দেখা হয়েছে যেটা দুর্ভাগ্যজনক। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে আমাদের যে চরম ব্যর্থতা ছিল তা থেকে এই শিক্ষা নিতে হবে যে, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি আর কিছু ঘটার আগেই ব্যবস্থা নেওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
প্রশ্ন হল, ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটি এখন যেখানে আছে তাতে বাংলাদেশ কতটুকু করতে পারে?
জাতীয় স্বার্থের দিক দেখেই সরকারকে চালিত হতে হবে, তাৎক্ষণিক সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য বা অদূরদর্শিতা থেকে নয়। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারের ভারতের কাছে এটাও স্পষ্ট করা জরুরি যে, তারা এনআরসির এই নাগরিকত্ব তালিকাকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করে থাকলে নিজেদের সীমান্তের ভেতরেই এর ফলাফল বহন করার দায়িত্ব নিতে হবে তাদের।
আর তা না হলে সেটা হবে আন্তর্জাতিক আইন ও প্রথার লঙ্ঘন। যে কোনো দুটি দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা পারস্পরিক স্বার্থরক্ষার জন্য হওয়া দরকার; কোনো পক্ষের একতরফা সুবিধার জন্য নয়।
সম্পর্কটা ইতোমধ্যেই ভারতের অনুকূলে ঝুঁকে গেছে— সেটা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই হোক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই হোক।
এই লম্বা তালিকায় আর কিছু ঢোকা উচিত নয়।
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।