দেশে ফেরার পাঁচ দিন পরই অনুশীলন শুরুর সুযোগ আছে সাকিবের?
সাড়ে পাঁচ মাস পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞার সময় শেষের দিকে চলে আসায় নিজেকে প্রস্তুত করার মিশনে মাঠে নামছেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার। নিষেধাজ্ঞা থেকে আগামী ২৯ অক্টোবর মুক্তি পেতে যাওয়া বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার ৫-৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিকেএসপিতে অনুশীলন শুরু করবেন।
ঢাকা ফিরে নিজের বনানীর বাসায় উঠেছেন সাকিব। করোনা টেস্টের ফল না পাওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবেন তিনি। টেস্টের ফল নেগেটিভ হলে দুই-তিন পরই বিকেএসপিতে শৈশবের কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করবেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। তার পারিপারিক সূত্র থেকে এমনই জানা গেছে।
অর্থাৎ, দেশে ফেরার পাঁচদিন পরই অনুশীলন শুরু করবেন সাকিব। যার অর্থ সাকিবকে ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকতে হবে না। এ কারণেই প্রশ্ন উঠছে, বিদেশ থেকে ফেরা সাকিবকে কেন আইসোলেশনে থাকতে হবে না? সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশ ফেরত সবার ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকা বাধ্যতামূলক।
সাকিবের বেলায় কি তবে এর ব্যতিক্রম হবে? যদিও এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মতো দায়িত্বশীল কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে কথা বলতে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান আকরাম খানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। আর বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানালেন, এটা সরকারের নির্দেশনার ব্যাপার। এখানে বিসিবির নির্দেশনা নেই।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, 'এ নিয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। সরকার থেকেই তো নির্দেশনা আছে বিদেশ ফেরত সবাইকে ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকতে হবে এবং এটা বাধ্যতামূলক। এখানে আসলে আমাদের বলার কিছু নেই।'
'একজন মানুষ বাইরে থেকে এলে কীভাবে কী করবে, সেটার নির্দেশনা সরকার দেবে। সাকিব যেহেতু বাইরে থেকে এসেছে, ও যদি বাইরের কারও সাথে কথা বলে থাকে বা অনুমতি নিয়ে থাকে, সেটা অন্য ব্যাপার। তবে আমাদের জনা নেই। আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে সাকিবের কোনো কথা হয়নি।'
যুক্তরাষ্ট্র থেকে করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন সাকিব। এরপরই বিমানে ওঠার অনুমতি মিলেছে তার। দেশেও পরীক্ষা করিয়ে অনুশীলন শুরু করতে হবে তার। তবে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক জানালেন, করোনা পরীক্ষার বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়। বরং আইসোলেশনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এটাকে বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
তিনি বলেন, 'সরকার থেকে করোনা পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। সরকারের নির্দেশনা আছে আইসোলেশনের ব্যাপারে। যারা বাইরে থেকে আসবে, তাদের আইসোলেশনে থাকতে হবে। এটাই হচ্ছে নির্দেশনা। কিন্তু পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। এটা বাধ্যতামূলক নয়।'
আইসোলেশনের ব্যাপারে আইইডিসিআর- এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর জানান, সাকিবকে অবশ্যই ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকতে হবে। তিনি বলেন, 'বিদেশ থেকে যে-ই ফিরুক না কেন, তাকে তার বাসায় অথবা হোটেলে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে।'
সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ৫-৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিকেএসপিতে অনুশীলন শুরুর সুযোগ নেই সাকিবের। আর যদি তিনি এই সময়েই অনুশীলন শুরু করেন, সেক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা মানা হবে না। সব মিলিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের আইসোলেশনে থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
আগামী অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এই সফর দিয়ে বাংলাদেশ দলে ফিরবেন সাকিব। প্রথম টেস্ট শুরু ২৪ অক্টোবর। তখনও নিষেধাজ্ঞায় থাকবেন সাকিব। তবে দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই তিনি খেলতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। আর এই সম্ভাবনাই বেশি।
জুয়াড়ির কাছ থেকে তিনবার প্রস্তাব পেয়েও তা গোপন করায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন সাকিব। ২৯ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাকিবের ওপর বাড়তি দায়িত্ব থাকবে। আগামী এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা থাকবে তার ওপর। এ সময়ে আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী বিভন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে সাকিবকে।