গাজার হাসপাতালগুলোতে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে: জাতিসংঘ
হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য ইসরায়েল একটি "সমন্বিত নীতির" কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন অভিযোগ জানিয়েছে।
কমিশনটি বলছে, গাজার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি হামলা এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণ যুদ্ধাপরাধের পাশাপাশি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকেও গাজায় বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের প্রতি তাদের আচরণের জন্য যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ইসরায়েল এখনও এই বিষয়ে মন্তব্য করেনি। তবে তারা দীর্ঘকাল ধরে জাতিসংঘকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করে আসছে এবং পূর্ববর্তী সমালোচনামূলক প্রতিবেদনগুলোকে খারিজ করে দিয়েছে।
৩০ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উপস্থাপনের জন্য এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে, যেটির নেতৃত্ব দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান নাভি পিল্লাই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী "চিকিৎসা কর্মীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যা, আটক এবং নির্যাতন" করেছে এবং শিশুরা "স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পতন" এর "ক্ষতি বহন করছে"।
কমিশনটি পাঁচ বছরের শিশু হিন্দ রাজবের ঘটনাটি উল্লেখ করেছে। রাজবের পরিবার তাকে সহ বোমা হামলা থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় তাদের গাড়িতে বোমা আঘাত হানে। বেশ কয়েকজন পরিবারের সদস্য তাতে নিহত হলেও ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টকে সাহায্যের জন্য ফোন করতে সক্ষম হয়। শিশুটির কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা অ্যাম্বুলেন্সটিও শেলিংয়ের শিকার হয় এবং রাজব, তার পরিবারের সদস্যরা এবং অ্যাম্বুলেন্স কর্মীসহ সবাই মারা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ইসরায়েলি হামলা "জীবনের ওপর আঘাত, যেটি ফিলিস্তিনি শিশুদের একটি প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং সম্ভাব্যভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের ধ্বংসের কারণ হয়েছে।"
প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতন এবং গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের ওপর "যৌন এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা"সহ নানা অত্যাচারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্যাতন এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিদের প্রতি আচরণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে।
প্রতিবেদনে সরাসরি ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতার বেন গভীরের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এসব নির্যাতন তার "সরাসরি নির্দেশে" সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে এসব নির্যাতনের বিশদ প্রমাণ রয়েছে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধের পরিচালনা নিয়ে আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এই উদ্বেগগুলো আন্তর্জাতিক আদালতে একটি মামলায় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্তে প্রতিফলিত হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অবিশ্বাস্য হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এ হামলার প্রতিশোধ নিতে এবং হামাসকে ধ্বংস করার অভিপ্রায় নিয়ে পরের দিন থেকে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, সেখানে ইসরায়েলি অভিযান ও হামলায় এখন পর্যন্ত ৪২ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে।