সাক্ষরতার হার: এখনও যেতে হবে বহুদূর
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোর শিরোনাম ছিল ‘চার্টার ফর চেইঞ্জ’। সেটিতে ছিল ২৩টি অঙ্গীকার। এর একটি ছিল এরকম— ২০১৭ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত ১১ বছরে পরপর তিন বার দলটি ক্ষমতায় এসেছে। তাহলে এ মুহূর্তে সাক্ষরতার হারের বাস্তব চিত্রটি কী?
আঠার বা তার বেশি বয়সী, অর্থাৎ যারা পূর্ণবয়স্ক, তাদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ সাক্ষর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তৈরি বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৮এর ডাটা তাই বলছে।
এমনিতে সাক্ষরতার হার ৭৩.৯ শতাংশ। ভারতের চেয়ে এ হার খানিকটা কম। সেখানে সাক্ষরতা ৭৪.০৪ শতাংশ। আর শ্রীলঙ্কার চেয়ে তো অনেক পিছনে আমরা। সে দেশে সাক্ষরতার হার ৯৬.৩ শতাংশ।
আমাদের গ্রাম আর শহরের সাক্ষরতার হারেও অনেক ফারাক। গ্রামে যেখানে এ হার ৬৭.৩ শতাংশ, শহরে এটি ৮১.৭ শতাংশ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাকির হোসেন শনিবারেই জানালেন, সাক্ষরতার হার বাড়াতে নানা ধরনের প্রকল্প এখন বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর একটি প্রকল্প রয়েছে যেখানে পড়াশুনা ছেড়ে দেওয়া পূর্ণবয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে। মৌলিক শিক্ষা প্রকল্পটি খুব ভালো চলছে না। এ কথা জানা গেল বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইইএমইডি) সূত্রে। এটি চলমান প্রজেক্ট পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে নিযুক্ত সরকারি সংস্থা।
ওরা দেখিয়েছে যে, প্রকল্প বাস্তবায়নের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল পরে। এখন এটি শেষ হবার কথা ২০২০ সালের জুনে।
প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় লাখ শিক্ষক নিয়ে ৭৫ হাজার শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের কথা ছিল। আড়াইশ উপজেলায় এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তের সংখ্যা ৪৫ লাখ। তাদের মধ্যে ৯৬.৩৬ লাখ বই বিতরণেরও কথা ছিল।
প্রত্যেক উপজেলার জন্য সরকারের নির্বাচিত একটি করে বেসরকারি সংস্থা শিক্ষা কেন্দ্রগুলো চালাবে, এমন পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ৩৫,৫৮০টি শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে পারেনি। ৭১,৬২০ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ৪৬.৪০ লাখ বই ছাপানোর কাজও বাকি রয়ে গেছে।
এসবই বলা হচ্ছে আইএমইডির প্রতিবেদন।
প্রসঙ্গটি নিয়ে শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী মনে করেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মানুষকে শিক্ষিত ও দক্ষ বানাতে প্রকল্প নিয়েছে। কিন্তু অর্থায়নের অভাবে ওরা মৌলিক কর্মসূচিগুলোই বাদ রেখেছে সেখানে।
“তহবিল সংকট নতুন বিষয় নয়। তাতে অনেক প্রকল্পই বাস্তবায়নে সমস্যা হয়। এটা বড় একটা চ্যালেঞ্জই বটে,” বললেন এই শিক্ষাবিদ।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে এক আয়োজনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানালেন, “সাক্ষরতার হার বাড়াতে কাজ করছি আমরা। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বেশকিছু প্রকল্প এখন চলছে।”
এ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আকরাম-আল-হোসেন জানালেন, তারা পথশিশু ও পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর মতো সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাজ করছেন।
সাক্ষরতা নিয়ে এ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক তপন কুমার ঘোষও।
আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের মেনিফেস্টোতে এটাও ছিল যে, ২০১১ সালের মধ্যে শতভাগ শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন নিশ্চিত করা হবে।
প্রাক-প্রাথমিকে এখন ভর্তির হার ৯৭.৮৫ শতাংশ হলেও প্রাথমিকে ঝরে-পড়ার (ড্রপ আউট) হার ১৮.৬ শতাংশ। সরকারি হিসাবে, প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্নকারী, অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণি অব্দি লেখাপড়া শেষ করার হার ৮১.৪ শতাংশ।