নিষেধাজ্ঞার পরেও বাজারে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা
শুক্রবার (১ নভেম্বর) থেকে দেশে সব কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে সরকারি এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে দেখা যায়নি। বিকল্পের অভাব এবং দীর্ঘ দিনের অভ্যাসের কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতারা পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের তালতলা বাজারে ঘুরে ঘুরে সবজি কিনছিলেন শাহিনা বেগম। তার হাতে ৪-৫টি পলিথিনের ব্যাগে ছিল সিম, মুলা, আলু, শসাসহ বিভিন্ন সবজি। আর সবজির দোকানীরাও পলিথিনের ব্যাগে করেই বিক্রি করছিলেন।
শাহিনা বেগম নিজেও পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো এবং সরকারের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে অবগত। বাজারের অধিকাংশ দোকানী এবং ক্রেতারাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু এরপরেও কেন বাজারে পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে?
শাহিনা বেগম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিক্রেতারা বিকল্প ব্যবস্থা রাখেননি বলেই পলিথিন নিতে হচ্ছে। পরবর্তীতে বড় ব্যাগ নিয়ে আসবো বাজার করতে। অনেক দিনের অভ্যাসের বিষয় তো, তাই এ থেকে বেরিয়ে আসতেও একটু সময় লাগবে।"
তবে বাজারে পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ স্বল্প মূল্যে সরবরাহে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বাজারের মাংসের দোকানী মো. আশরাফ টিবিএসকে বলেন, "পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো আমরা সবাই কমবেশি জানি। কিন্তু আমাদের বিকল্প দিতে হবে। কাস্টমারদের আমরা কীভাবে দেবো? কাপড় কিংবা পাটের ব্যাগে মাংস দিলে রক্ত লেগে যায়। এজন্য আমাদের বিকল্প ব্যাগ সরবরাহ করতে হবে। বাজারে এখনও বিকল্প কিছু পাইনি।"
তিনি আরও বলেন, "ক্রেতারা বাজারে আসলে ব্যাগ নিয়ে আসেন না, কিংবা বড় ব্যাগ (বার বার ব্যবহারযোগ্য) কেনেনও না। আমি পলিথিনে মাংস না দিলে কাস্টমাররা কিনতেও চান না।"
"এখন থেকে বাজারে আসলে ব্যাগ নিয়ে আসবেন— এই চিন্তা মানুষের মাথায় ঢোকাতে হবে এবং এজন্য সরকারকে প্রচারণা বাড়াতে হবে," যোগ করেন তিনি।
শুধু আগারগাঁওয়ের এ বাজারটিই নয়, শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, কাঠালবাগানসহ ৫টি কাঁচাবাজার ঘুরে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। তবে অল্প সংখ্যক ক্রেতাকে কাপড়, পাট ও প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহার করতেও দেখা গেছে ।
শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর কয়েকটি বাজারে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে মনিটরিং কার্যক্রম চালানো হয়।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের অধিকাংশই জানান, কাঁচাবাজারে পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টি তারা শুনেছেন, কিন্তু বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যবহার করছেন। ক্রেতাদের অনাগ্রহ দেখা যায় পাটের কিংবা বারবার ব্যাবহারযোগ্য ব্যাগ কিনতে।
শেওড়াপাড়ার সবজি বিক্রেতা মো. ইউসুফ টিবিএসকে বলেন, "পলিথিন না থাকলে আমাদেরই লাভ। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকার পলিথিন লাগে। তবে এখনই বন্ধ করতে পারছি না, কারণ আমি বন্ধ করলাম, কিন্তু পাশের দোকান থেকে দিলে তো আমি কাস্টমার পাবো না। বাজারে পলিথিন সরবরাহ বন্ধ থাকলে ক্রেতারাই বড় ব্যাগে সবজি নেবেন।"
ভ্যানে সবজি বিক্রেতা হালিম বলেন, "আমরা বাজার দেব কিসে? কাস্টমার তো কলা কিনলেও পলিথিন চান।"
কারওয়ানবাজারের ক্রেতা কোহিনুর আলম তুহিন টিবিএসকে বলেন, "আমরা যা সহজে ও সস্তায় পাচ্ছি তাই ব্যবহার করছি। মূল যে জায়গায় উৎপাদন হয়, সেই কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হোক। আমরা বাধ্য হয়েই কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বের হবো।"
ফল বিক্রেতা সাগর বলেন, "আমার কাছে আগের কিছু পলিথিন কেনা ছিল সেগুলো এখন ব্যবহার করছি। সাথে সাথে আমি জালের ব্যাগ ও কাগজের ঠোঙাও রেখেছি। কিন্তু ক্রেতারা পলিথিন ছাড়া নিতে চান না।"
আলু পিঁয়াজ বিক্রেতা শহীদ গাজী বলেন, "ক্রেতাদের ব্যাগ কিনতে বললে আমার থেকে পণ্য না নিয়েই চলে যান, তাই বাধ্য হয়ে পলিথিন রাখতে হয়েছে। আমার প্রতিদিন ৩০০-৩৫০ টাকার পলিথিন লাগে। এখন যদি পলিথিন বন্ধ হয়, তাহলে আমরাই বেশি লাভবান হবো।"
কাঁঠালবাগান এলাকার এক ক্রেতা এডভোকেট মামুনুর রশিদ বলেন, "ব্যাগ নিয়ে আসিনি বলে পলিথিনেই নিতে হচ্ছে। কথা দিচ্ছি, আগামীতে বাজারে ব্যাগ নিয়ে আসবো। কিন্তু এ বিষয়টির সাথে আমাদের মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে।"
কাল থেকে পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, পলিথিন ব্যাগ প্রস্তুতকারকদের দমনে অন্তর্বর্তী সরকার আগামীকাল থেকে সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান শুরু করবে।
শুক্রবার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে এক সচেতনতামূলক প্রচারণার সময় তিনি এ কথা বলেন; একইসঙ্গে, জনসাধারণকে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের আহ্বান জানান।
তিনি আরও জানান, দোকানীদের পলিথিন ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এটি লঙ্ঘন করলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
তপন কুমার বিশ্বাস আরও উল্লেখ করেন, রোববার (৩ নভেম্বর) থেকে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে; এ বিষয়ে জেলা কর্তৃপক্ষকে তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।