‘৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেল—দুমুঠো শাক, অন্যান্য... টাকা শেষ’: বাজারে বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আমদানি পর্যায়ে নিত্যপণ্যের শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। এ সুবিধা সত্ত্বেও বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। আর এতে মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছেন।
দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দাম প্রসঙ্গে এসব কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দাম না কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'এখানে অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে। মানুষের বাজারে কষ্ট হচ্ছে — ৫০০ টাকা নিয়ে গেল, দুমুঠো শাক, অন্যান্য... কিন্তু টাকা শেষ হয়ে গেল।'
'আমরা চেষ্টা করছি বাজারে দাম কমানোর জন্য,' বলেন তিনি।
পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পিকেএসএফ ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কয়েক দিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছিলেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ। 'আমি কিছু দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম। [ক্রেতারা] যথেষ্ট গালাগালি করেছেন আমাকে। ডিমের দাম কমছে না, তেলের দাম কমছে না।
'অথচ এনবিআর এসব পণ্য আমদানিতে ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছে। অনেক সুবিধা দিয়েছে, তবু নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক। প্রধান উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে, বাজারে দাম কমানো শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ না,' বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন কিছু অর্জন করতে চায় যা জনগণকে সন্তুষ্ট করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'ভালো কাজের ফুটপ্রিন্ট এমনভাবে রেখে যাব, যাতে জনগণ সন্তুষ্ট হয়। এর ফলে, রাজনৈতিক সরকার এটা না পালন করলে জনগণ যেন তাদের বলে, আপনারা ধারাবাহিকভাবে ভালো কাজ করছেন না কেন?'
সালেহ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, 'আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করতে চাই। স্বল্প বা মধ্যমেয়াদে যে সংস্কারগুলো শুরু করব, তা এমনভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতের যে কোনো সরকার দীর্ঘমেয়াদী উপকারের জন্য সেগুলি প্রয়োগ করতে পারে।'
উপদেষ্টা বলেন, এই সমাজের উন্নয়নে কৃষক, শ্রমিক, ও কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ অবতান রয়েছে। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে, তারা প্রায়ই আড়ালে রয়ে যায়।
'সময় এসেছে, তাদের চাওয়ার প্রতিফলন করার। আমাদের চলে যাওয়ার পরও যেন জনগণ আমাদের কাজের প্রশংসা করে, মনে রাখে,' বলেন তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশে ভালোভাবে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। 'আমাদের অনেক বড় বড় ভবন আছে, কিন্তু সেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব। ব্যাংকিং খাতে এত রকমের বিশৃঙ্খলা ঠিক করতে আমরা কাজ করছি।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভাগুলোতে তার সাম্প্রতিক অংশগ্রহণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বৈঠকে সবাই আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ছিল। যাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম, তারা সবাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছিল এবং আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহযোগিতার জন্য ইচ্ছুক ছিল।'
'তাদের দেওয়া শর্তও অতিরিক্ত কঠোর ছিল না। বহুজাতিক ও দ্বিপাক্ষিক সংস্থাগুলোও আমাদের সমর্থন দিয়েছে,' জানান তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বর্তমান সরকার স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের ওপর কাজ করবে, আর দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার পরবর্তী নির্বাচিত সরকার পরিচালনা করবে। আমরা এমন একটি ভিত্তি তৈরি করে যেতে চাই যা ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকার অনুসরণ করবে এবং চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।'
প্রায় নয় বছর পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'এ প্রতিষ্ঠানটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। পিকেএসএফ একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। এর খরচ কমিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও সুনাম রয়েছে।'
তিনি মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)-কে পিকেএসএফ-এর অংশীদার সংস্থাগুলোর (এনজিও) প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিকেএসএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউর রহমান বলেন, 'একটি প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতার জন্য পিকেএসএফের প্রয়োজনীয় দৃঢ় ভিত্তি রয়েছে। এখন সময় এসেছে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর।'
পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, 'আত্মতুষ্টিতে ভুগলে হবে না। আমাদের নতুন আবিষ্কার, উদ্ভাবন এবং গবেষণার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।'
১৯৮০-এর দশকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার একটি বিশেষায়িত সংস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। উন্নয়ন সহযোগী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।
১৯৮৯ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে ১৩ নভেম্বর 'পিকেএসএফ দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
চেয়ারম্যান মো. জাকির আহমেদ খান অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ-এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংগঠনের প্রধান নির্বাহীগণ ও পিকেএসএফ-এর কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।