ব্যালকনিতে ফুলের টবে ঘুঘুর বাসা, ডিম ফুটে বাচ্চা ওঠার অপেক্ষায়
আমার বাসার চারপাশে গাছপালায় অসংখ্য বুনো পাখির মেলা বসে। ছাদে পোষা কবুতরের ঘর। কবুতরকে খাবার দিলে কয়েক জোড়া ঘুঘু পাখি মিশে থাকে কবুতরের সাথে, যেন তারাও পোষ্য। বাড়ির আম গাছ, করমচা গাছে বেশ কয়েকবার বাসা বেঁধেছে—ডিম, বাচ্চা সব হয়েছে। সেসব ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। কখন ডিম ফুটে বাচ্চাগুলো উড়ে যেত আমরা খুব একটা জানতেও পারতাম না।
আমার নয় বছরের ছেলে জাওয়াদ। ও দেখে, একটা ঘুঘু পাখি বারান্দার গ্রিলে বসে মধুর সুরে ডাকাডাকি করছে। বারান্দার গ্রিল তার বেশ পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে।
জাওয়াদ স্কুল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু একটা পাগলাটে পাখিপ্রেমিক ও। স্কুলে বসেই মাঝে মাঝে পাখির কথা মনে করে অন্যমনস্ক হয়ে ওঠে। চোখের পাতায় ঘুঘু পাখির বাসা, ডিম, বাচ্চা খেলা করে।
১০ নভেম্বর। জাওয়াদ হঠাৎ দৌড়ে এসে চিৎকার, চেঁচামেচি, আনন্দ-উল্লাসে বাড়ি মাথায় তুলে নিল। 'আমাদের ঘুঘু পাখি আইসপ্লান্ট ফুলের টবে বাসা বেঁধেছে।'
পরের দিন একটা ডিম, তারপর আরও একটা। জাওয়াদের সাথে সাথে পুরো বাড়িতে নতুন এক আনন্দ।
এখন রীতিমতো টবের বাসায় ডিমে তা দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে টবের গাছের করুণ দশা, পানি দিতে পারছি না, যত্ন নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। জলহীন শুকনো পাতাগুলো ঝরে পড়ছে বারান্দায়। তাতে কী, জাওয়াদের একটাই চিন্তা আর ক্ষণ গণনা—কবে বাচ্চা ফুটবে?
ক্যামেরায় ছবি ধরে রেখেছে জাওয়াদ। একদম কাছে গিয়ে বসে থাকে। কিন্তু মা পাখিটা জাওয়াদকে ভয় পায় না কেন? বাচ্চারা কি ওর দেয়া খাবার খাবে? ওরা কি বড় হয়েও এখানেই থাকবে? ওদের ধরে কি খাঁচায় রাখব? নাকি হঠাৎ এক দুপুরে কাউকে কিছু না জানিয়ে উড়ে যাবে ওই উঁচু গাছের ডালে? …নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় মনে।
- আতিকুর রহমান আপেল: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক; ডেমরা, ফরিদপুর, পাবনা