সিরিয়ার সেনা কমান্ড সেনা কর্মকর্তাদের অবহিত করেছে: আসাদের শাসন শেষ
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাল আল-আসাদের ২৪ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হয়েছে বলে দেশটির সেনা কর্মকর্তাদের জানিয়েছে সেনা কমান্ড। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন এক সেনা কর্মকর্তা।
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দাবি করছেন, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক এখন 'আসাদ মুক্ত'। বিদ্রোহী গোষ্ঠী সূত্রে জানা গেছে, সিরিয়ার জনগণের উদ্দেশ্যে খুব দ্রুতই তারা বিবৃতি দিবে।
সিরিয়ার সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, আজ রবিবার সকালেই প্রেসিডেন্ট আসাদ একটি বিমানে করে অজ্ঞাত জায়গায় চলে গেছেন। এদিকে বিদ্রোহীরা ইতোমধ্যেই রাজধানীতে প্রবেশ করেছে। তবে তারা জানিয়েছে, রাজধানীতে তারা কোনো সেনা মোতায়েনের চিহ্ন দেখতে পায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাজার হাজার মানুষ গাড়ি ও পায়ে হেঁটে দামেস্কের প্রধান একটি চত্বরে জড়ো হচ্ছেন। তাদের সবার মুখেই 'স্বাধীনতা'-এর স্লোগান।
প্রেসিডেন্ট বাল আল-আসাদের এমন নাটকীয় পতন মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এর মাধ্যমে আসাদের প্রায় অর্ধশতাব্দীর শাসনতন্ত্রের পতন ঘটেছে। তবে তার পতন রাশিয়া ও ইরানের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কারণ আসাদের পতনের কারণে ধারণা করা হচ্ছে তারা এ অঞ্চলের একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে হারিয়েছে।
বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, "আমরা সিরিয়ার জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমাদের বন্দিদের মুক্তির খবর উদ্যাপন করছি এবং তাদের শৃঙ্খল মুক্তির ঘোষণা দিচ্ছি। সেডনায়া কারাগারে অবিচারের যুগের সমাপ্তি ঘোষণা করছি।" দামেস্ক শহরের একটি বড় সামরিক কারাগারে এতোদিন হাজার হাজার বন্দিকে আটকে রেখেছিল সিরিয়ান সরকার।
ফ্লাইটরাডার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী বিদ্রোহীদের দখলে চলে যাওয়ার খবরের সময় দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে একটি বিমান উড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বিমানটি সিরিয়ার উপকূলে আসাদ সমর্থিত আলাওয়ি সম্প্রদায়ের ঘাঁটির দিকে উড়ে গেছে। তবে সেখানে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি হঠাৎই দিক পরিবর্তন করে উল্টাদিকে উড়তে থাকে এবং পরে রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। বিমানের ভেতরে কে ছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
বিদেশে থাকা সিরিয়ার প্রধান বিরোধী দলের নেতা হাদি আল-বাহরা ঘোষণা করেন, "দামেস্ক এখন বাশার আল-আসাদ মুক্ত।" সিরিয়ান জনগণের আনন্দের মাঝে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি জানান, তিনি শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত এবং জনগণের নির্বাচিত যে কোনো নেতৃত্বের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।
এদিকে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, "সিরিয়ার এই অসাধারণ ঘটনার দিকে গভীর নজর রাখছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার প্রশাসন এবং এ বিষয়ে আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।"
বছরের পর বছর সিরিয়ার জটিল গৃহযুদ্ধের ফ্রন্টলাইনগুলো নিষ্ক্রিয় ছিল। এরপর আকস্মিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইসলামপন্থীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা আসাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। রাশিয়া, ইরান এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর সহায়তায় দীর্ঘ যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও টিকে থাকে আসাদ। তবে তার অন্যান্য মিত্রদের সংকটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি এবং প্রতিপক্ষদের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হন।
বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারাহ ঘোষণা করেন, "জনগণকে নিষেধ করা হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যেতে।" তিনি জানান, এসব প্রতিষ্ঠান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকবে যতক্ষণ না আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে ইসরায়েলও আসাদের পতনে স্বস্তি পাবে। তবে একটি ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর সিরিয়া শাসনের সম্ভাবনা উদ্বেগ বাড়াতে পারে।
দামেস্কে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা আগে বিদ্রোহীরা ঘোষণা দেয়, একদিনের যুদ্ধের পর তারা হোমস শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। শহরটি থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পর হাজার হাজার বাসিন্দা রাস্তায় নেমে আসে এবং আনন্দে উল্লাস করতে থাকে। তারা 'আসাদ চলে গেছে, হোমস মুক্ত' এবং 'সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক, বাশার আল-আসাদের পতন হোক' স্লোগানে জয়োল্লাস করছেন।"