অক্ষরজ্ঞানহীন হয়েও পাস করেছিলেন স্কুল, এবার সেই স্কুলের বিরুদ্ধেই ঠুকে দিলেন মামলা
হাই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অ্যালেশা অরটিজ তার জীবনের প্রথম 'এ' গ্রেডটি কখনো ভুলবেন না। ইংরেজি ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্টের জন্য একটি গল্প জমা দিয়ে তিনি এই গ্রেড অর্জন করেন। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে অরটিজ বলেন, 'এর আগে, আমি সবসময় খাতায় 'এ' অক্ষরটি আঁকতাম এবং ভাবতাম, কেউ হয়তো আমাকে এই গ্রেড দিয়েছে।'
কিন্তু বাস্তবে, ১৯ বছর বয়সি অরটিজ তার লেখালেখি বা টাইপ করা কোনো কাজই করতে পারতেন না। তিনি সবসময় স্পিচ-টু-টেক্সট সফটওয়্যার ব্যবহার করতেন। হার্টফোর্ড পাবলিক হাই স্কুলে পড়াকালীন তিনি সব অ্যাসাইনমেন্ট এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করতেন।
অরটিজের অভিযোগ তাকে কোনোদিনই যথাযথ থেরাপি বা বিশেষ শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হয়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে তাকে প্রায়ই আচরণগত সমস্যার কারণে ক্লাসের বদলে প্রধান শিক্ষকের অফিসে বসিয়ে রাখা হতো। অতিরিক্ত সহায়তার জন্য আবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করেছিল। গত বসন্তে স্নাতক পাশ করলেও, তিনি তখনও পড়তে বা লিখতে জানতেন না।
অরটিজ বলেন, 'আমি সাহায্য চেয়েছিলাম'।
'তারা বলেছিল, না'।
'আমি জানতে চেয়েছিলাম আমার সমস্যাটা কী। তারা বলেছিল, এখন আর কিছু করার নেই।'
বর্তমানে অরটিজ ইউনিভার্সিটি অফ কানেকটিকাটে পড়াশোনা করছেন, তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ এক দশকের অবহেলার কারণে তার পড়াশোনা এখনও পিছিয়ে রয়েছে। তিনি এক মামলায় ১৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। মামলায় হার্টফোর্ড শহর, শিক্ষা বোর্ড এবং হার্টফোর্ড পাবলিক স্কুলের শিক্ষক টিল্ডা সান্তিয়াগোকে আসামি করা হয়েছে।
সান্তিয়াগো কোনো মন্তব্যের জন্য সাড়া দেননি। হার্টফোর্ড শিক্ষা বোর্ডের চেয়ার জেনিফার হকেনহুল এবং শহরের প্রধান আইনজীবী জনাথন হার্ডিংও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
সুপারিনটেনডেন্ট লেসলি টরেস-রদ্রিগেজ কোনো মন্তব্য করেননি, তবে অক্টোবরের শিক্ষা বোর্ডের এক সভায় বলেছেন যে, অরটিজের অভিযোগ নিয়ে তিনি গভীরভাবে চিন্তিত এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
অরটিজের বয়স তখন পাঁচ, যখন তার পরিবার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো সেবা পাওয়ার আশায় পুয়ের্তো রিকো থেকে কানেকটিকাটে আসে। পুয়ের্তো রিকোতে অরটিজের অ্যাটেনশন ডেফিসিট/হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি), অপজিশনাল ডিফায়েন্ট ডিজঅর্ডার এবং কথার সমস্যার (স্পিচ ইমপেডিমেন্ট) চিকিৎসা নির্ণয় হয়েছিল বলে তিনি জানান। তার মামলার তথ্য অনুযায়ী, হার্টফোর্ডে এক শিক্ষক রিপোর্ট করেন যে, অরটিজ বর্ণ, শব্দ এবং সংখ্যা চিনতে সমস্যায় ভুগছিলেন।
তবুও, অরটিজ তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, ক্লাসে থাকলেও, তাকে সাধারণ কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হতো, যেমন ওয়ার্কশিটে বর্ণ লেখা বা অক্ষর চিহ্নিত করা। ফলে তিনি সহপাঠীদের থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করতেন বলে জানান।
'আমার কাজের মধ্যে হয়তো থাকতো মেঝে ঝাড়ু দেওয়া... অথবা ক্লাসরুম পরিষ্কার করা, বই গোছানো—এসব দিয়ে আমাকে ব্যস্ত রাখা হতো, বলেন অরটিজ।
স্কুলের রেকর্ডে দেখা গেছে, অরটিজ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়লেও তার একাডেমিক দক্ষতা ছিল কিন্ডারগার্টেন বা প্রথম শ্রেণির পর্যায়ে। তার হতাশার ঝুঁকিও ছিল অনেক বেশি।
তবুও, হার্টফোর্ড পাবলিক স্কুল তার শিক্ষার পদ্ধতি বদলায়নি বা তার বিশেষ প্রয়োজন নিয়ে কাজ করেনি বলে অভিযোগ। উচ্চ বিদ্যালয়ের জুনিয়র বছরে, অরটিজ বিশেষ শিক্ষার দায়িত্বে থাকা টিল্ডা সান্তিয়াগোর কাছ থেকে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন।
অরটিজ বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তাকে কখনোই ফেল করানো হয়নি, এমনকি অ্যাসাইনমেন্টের কোনো গ্রেড না পেয়েও। কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা থেকে, তিনি নিজের ঘাটতি পূরণের জন্য নিজে নিজে চেষ্টা করেন। কারাওকের মাধ্যমে গানের সঙ্গে প্রদর্শিত অক্ষর মুখস্থ করে তিনি পড়া শেখার চেষ্টা করেন। ক্লাসে যা পড়ানো হতো, তা রেকর্ড করে শুনতেন এবং ডিকটেশন সফটওয়্যারের সাহায্যে অ্যাসাইনমেন্ট লিখতেন।
তিনি বলেন, 'অনেক সময় বাথরুমে গিয়ে এমন ভান করতাম যে আমি কারও সঙ্গে কথা বলছি, কিন্তু আসলে আমি অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর দিচ্ছিলাম'।
তিনি আরও জানান, ডিকটেশন সফটওয়্যার দিয়ে গল্প ও কবিতা লিখতে তার ভালো লাগত। গ্র্যাজুয়েশনের সময় তিনি একটি প্রকল্প জমা দেন যার নাম ছিল 'স্পেশাল এডুকেশন: এ সিস্টেমিক ফেলিউর।'
ইউনিভার্সিটি অফ কানেকটিকাটে ভর্তির আবেদন করার সময়, স্কুলের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখেন তিনি।
অরটিজ লিখেন, 'এটা সহজ ছিল না। আমি আরও কিছু করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখনও পিছিয়ে আছি। তাও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে থামিনি'।
অরটিজ যখন প্রথম হার্টফোর্ড পাবলিক স্কুলের অভিজ্ঞতা নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে কথা বলেন, তখন অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। কনেকটিকাট মিররে এক প্রাক্তন শিক্ষক লিখেছিলেন যে, স্কুলে বিশেষ শিক্ষা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই এবং কিছু শিক্ষক তাদের তালিকায় ৮০ জনেরও বেশি ছাত্রকে দেখভাল করছেন।
অক্টোবরে, রাজ্য বিধানসভার সদস্যরা স্কুল জেলা কর্তৃপক্ষকে সমালোচনা করে, এবং শিক্ষার জন্য রাজ্য বাজেটের ওপর আরও নজরদারি বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। এক মুখপাত্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, হার্টফোর্ড পাবলিক স্কুল শিক্ষক সংকটে ভুগছে এবং আরও বাজেট কমানো উচিত নয়। হার্টফোর্ড কুরান্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মে মাসে শহরটি স্কুলের বাজেট থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার কমিয়েছে।
অরটিজ বলেন, তিনি চান অন্য শিক্ষার্থীরা যেন তার মতো কষ্ট না পায়। এখনও তিনি কলেজে অ্যাসাইনমেন্টগুলো ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে করেন, কিন্তু এখন ইউনিভার্সিটি অফ কনেকটিকাটের সেন্টার ফর স্টুডেন্টস উইথ ডিসঅ্যাবিলিটিজ থেকে সাহায্য পান।
স্কুল শেষ করার পর, অরটিজ তার কম শিক্ষার কারণে ভবিষ্যতে কিছু চ্যালেঞ্জের কথা ভাবছেন, যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া বা প্রথম চাকরি খোঁজা। তার স্বপ্ন ডক্টরেট করা।