আজারবাইজানের বিমান বিধ্বস্তে রাশিয়া দায়ী হতে পারে, দাবি যুক্তরাষ্ট্রের
কাজাখস্তানে বড়দিনের দিন দুর্ঘটনার শিকার হওয়া আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমানটি রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভূপাতিত করতে পারে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, "প্রাথমিক ইঙ্গিতগুলো থেকে মনে হচ্ছে, এই বিমানটি রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দ্বারা ভূপাতিত হতে পারে।"
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বিমানের ছবির বাইরে আরও প্রমাণ রয়েছে। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
আজারবাইজান এয়ারলাইন্স শুক্রবার জানায়, তাদের বিমানটি "বাইরের শারীরিক ও প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপের" কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
আজারবাইজানের গণমাধ্যমের তথ্যের বরাত দিয়ে দেশটির ডিজিটাল উন্নয়ন ও পরিবহণ মন্ত্রী রাশাদ নাবিয়েভ জানান, "বিমানটির ধ্বংসাবশেষের চেহারা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে এ প্রমাণ মেলে। হস্তক্ষেপে ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরন তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে।"
বুধবার সকাল ৮টার আগে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল আজারবাইজান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৮২৪৩। উড্ডয়নের পর মাঝপথে গ্রোজনি থেকে পথ পরিবর্তন করে বিমানটি। পরে এটি দক্ষিণ-পশ্চিম কাজাখস্তানের আক্তাউয়ের কাছে বিধ্বস্ত হয়। বিমান দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছেন, আর ২৯ জন প্রাণে বেঁচে যান।
এদিকে, মার্কিন সরকার তদন্তের জন্য কাজাখস্তান ও আজারবাইজানের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জন কিরবি।
রাশাদ নাবিয়েভ বলেন, এমব্রেয়ার-১৯০ বিমানের যাত্রী ও ক্রুরা বিভিন্ন ধারালো বস্তুর আঘাতে আহত হয়েছেন, যা বিমানের কাঠামো ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করেছিল।
তিনি বলেন, "আহত রুশ নাগরিকরা গ্রোজনির আকাশে তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তাদের মতে, বাইরে থেকে এই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর কিছু একটা বিমানে আঘাত করে।"
আজারবাইজান এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, "ফ্লাইট নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকি থাকার" কারণে তারা রাশিয়ার কয়েকটি শহরে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
রুশ ফ্লাইট নিয়ন্ত্রক রোসাভিয়াটসিয়া জানিয়েছে, গ্রোজনি বিমানবন্দরের পরিস্থিতি ইউক্রেনের ড্রোন হামলা ও ঘন কুয়াশার কারণে জটিল ছিল। সংস্থার প্রধান দিমিত্রি ইয়াদরভ বলেন, ইউক্রেনীয় ড্রোনগুলো ওই এলাকায় বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছিল। যার ফলে নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রোজনি বিমানবন্দরের আশপাশ থেকে সব বিমান সরিয়ে নেওয়া হয়।
গ্রোজনি বিমানবন্দরের আকাশ সীমায় "কারপেট" লকডাউন মোড চালু করা হয়েছিল। তবে গ্রোজনির ওপর আকাশসীমা বন্ধ করা হয়নি। বিমানটি গ্রোজনি থেকে মাখাচকালায় সরানো হয়, এরপর কাজাখস্তানের আক্তাউয়ের দিকে চলে যায়।
রুশ কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন, বিমানটি আবহাওয়া এবং পাখির ঝাঁকের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু বিমানটির পেছনের অংশে দৃশ্যমান ক্ষতি দেখে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হতে পারে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সার্ভিস ফ্লাইটরাডার২৪ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানিয়েছে, "বিমানটি গ্রোজনির কাছে জিপিএস জ্যামিং এবং স্পুফিং-এর শিকার হয়েছিল।" ড্রোন হামলা প্রতিরোধে সাধারণত রাডার জ্যামিং ব্যবহৃত হয়।
বেঁচে যাওয়া ক্রুরা জানিয়েছেন, তারা বিমানে শক্তিশালী আঘাত অনুভব করেছেন। অক্সিজেন মাস্ক পড়ে যাত্রীরা বিমানের ভেতরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিমানটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, পেছনের অংশ অক্ষত থাকে। কিন্তু সামনের অংশে আগুন ধরে যায়। পাইলটরা যাত্রীদের জীবন রক্ষায় সাহসিকতা দেখান। কিন্তু বিমানের পাইলট ইগর কশন্যাকিন এবং ফার্স্ট অফিসার আলেকসান্দ্র ক্যালিয়ানিনভ দুর্ঘটনায় নিহত হন।
আজারবাইজান রাশিয়াকে তাদের বিমানে আঘাত করার জন্য অভিযুক্ত না করলেও, দেশটিতে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিরোধী দল মুসাভাত একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে মস্কো থেকে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করার দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "[ভ্লাদিমির] পুতিন শাসনকে ইউক্রেনে এবং রাশিয়ায় মানুষের গণহত্যা এবং অন্যান্য জাতির ক্ষতির কারণ হওয়া আক্রমণাত্মক যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "আজারবাইজানের কর্তৃপক্ষ আশা করে রাশিয়া পৃথক সংসদ সদস্য, মিডিয়া এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে স্বীকারোক্তি ও ক্ষমা চাইবে। তবে তারা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই দাবি জানায়নি। মুসাভাত পার্টি সরকারের প্রতি আরো নীতিগতভাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।"
আজারবাইজান সংসদ সদস্য রাসিম মুসাবেকভ বৃহস্পতিবার বলেন, "বিমানটি রুশ সীমান্তে গুলি করে নামানো হয়েছিল। এটি অস্বীকার করা অসম্ভব। যারা এটি করেছে, তাদের অপরাধী হিসেবে বিচারের আওতায় আনা উচিত এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।"