লস অ্যাঞ্জেলেস দাবানল কেন এত ধ্বংসাত্মক
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়া দাবানলে ইতিমধ্যেই আনুমানিক যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এই দাবানলকে কয়েক দশকের মধ্যে এ অঞ্চলের সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত করেছে।
ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার প্রোটেকশন জানিয়েছে, বুধবার (৮ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে উডলিতে এই দাবানলের সূত্রপাত হয়। পরে তা আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
কীভাবে দাবানলের সূত্রপাত তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক আবহাওয়ার ধরন ও সেইসাথে এ অঞ্চলের পরিবেশগত অনন্য পরিস্থিতি দাবানল ছড়িয়ে পড়তে ভূমিকা রেখেছে।
কেন দাবানল এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল?
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় খরা চলছে। গত ৯ জানুয়ারি লা নিনা (আবহাওয়ার বিশেষ পরিস্থিতি বা ধরন) ঘোষণার পর আবহাওয়ার যে পরিস্থিতির সূচনা হয়েছে, তার ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঝড়গুলো ক্যালিফোর্নিয়া থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গেছে। পাশাপাশি লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে অস্বাভাবিক বায়ুচাপের কারণে সাধারণত আলাস্কা উপসাগর থেকে আসা শীতকালীন ঝড়গুলোও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এপ্রিল মাসের পর এ অঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাতও হয়নি।
গবেষকরা বলছেন, শীতকালীন শুষ্কতা দীর্ঘতর হওয়ার কারণ সম্ভবত সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধি, যা জেট স্ট্রিমকে (দ্রুতগতির বাতাসের প্রবাহ, যা উত্তর আমেরিকার আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে) তার চলার স্বাভাবিক পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে আবহাওয়ার একটি সাধারণ ঘটনা দেখা গেছে। তা হলো মৌসুমি সান্তা আনা বাতাস। এ বাতাস ক্যালিফোর্নিয়ার পর্বতমালার ওপর দিয়ে অভ্যন্তরীণ বাতাসকে ধাক্কা দেয় এবং উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার সাথে সাথে গরম ও শুষ্ক হয়ে ওঠে।
এ বাতাসের কারণে খরা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কারণ, এটি গাছপালাকে আরও শুষ্ক করে তুলছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের আশপাশের পাহাড়ে অসংখ্য মরা গাছ রয়েছে। সেখানকার ঝোপঝাড়গুলোও আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে আগুনও খুব সহজে ছড়িয়ে পড়ছে।
এছাড়াও অঞ্চলটিতে হারিকেনের মতো শক্তিশালী ঝোড়ো হাওয়ার কারণেও আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
কেন দাবানল এত ধ্বংসাত্মক?
লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসিফিক প্যালিসেডস এবং পূর্বে আলটেডিনা ও প্যাসেডিনা শহরজুড়ে বড় দুটি দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফায়ার রিজিলেন্স সেন্টারের পরিচালক ক্রিস্টাল কোল্ডেন বলেন, বিশেষজ্ঞরা এ অঞ্চলগুলোকে বন্যভূমি ও নগরের মধ্যবর্তী সীমানা বা জায়গা হিসেবে অভিহিত করেন। এ অঞ্চলগুলোতে দাবানল বিশেষভাবে ধ্বংসাত্মক হতে পারে। কারণ, এখানকার বাড়িগুলো প্রায়ই অত্যন্ত দাহ্য ঝোপঝাড় ও গাছের কাছাকাছি থাকে।
উল্লেখ্য, ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের হাজার হাজার বাসিন্দাকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ১৩ হাজার ভবন দাবানলের আগুনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এ ঘটনায় ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
দাবানলের কারণে ৪৬ হাজারের বেশি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী সান বার্নার্ডিনোতে আরও ৮ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন।