বরগুনায় ধর্ষণ মামলায় সাক্ষীর যাবজ্জীবন : আসামিরা খালাস
বরগুনায় একটি ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার (০১ নভেম্বর) বরগুনার ও শিশু আদালতের বিচারক মো হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের দন্ডিতকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।
রায়ে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম মোঃ এমাদুল হক। তিনি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাইনচটকি গ্রামের সেকান্দার জোমাদ্দারের ছেলে ও সাবেক ইউপি সদস্য। আর খালাস প্রাপ্তরা হল, একই এলাকার খবির গাজীর ছেলে মোহসিন ও অহেদ খানের ছেলে মোয়াজ্জেম।
২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এক গৃহবধূ তার কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আজ দন্ডপ্রাপ্ত এমাদুল হক চার নম্বর সাক্ষী ছিলেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, অভিযোগকারীর দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে পড়াশোনা শেষে ২০১৫ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারী রাত ১১ টায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির বাইরে গেলে আসামীরা তার মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।
এরপর বাদী ঘুম থেকে উঠে তার মেয়েকে ঘরে না পেয়ে বাইরে খোঁজা শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে মেয়ের জুতা ও ওড়না খুজেঁ পান। এরপর তিনি সুপারি বাগান থেকে তার মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
মামলাটি গ্রহণের পর তদন্ত শেষে পুলিশ এ মামলার সাক্ষী এমাদুল হককে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এজাহারে চার নম্বর সাক্ষী ছিলেন এমাদুল।
কিন্তু এ তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে বাদী পুনরায় তদন্তের আবেদন করলে, এমাদুলকে অব্যাহতি দিয়ে পুনরায় চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয় খালাস পাওয়া মহসিন ও মোয়াজ্জেমকে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মূলত ওই গৃহবধূর মেয়েকে ধর্ষণ করেন এ মামলার চার নম্বর সাক্ষী এমাদুল। এরপর পূর্ব:শত্রুতার জেরে তিনি এ ধর্ষণের অভিযোগ চাপিয়ে দেন তার প্রতিপক্ষ মহসিন ও মোয়াজ্জেমের কাঁধে। আর নির্দোষ দুই অভিযুক্তকে ফাঁসাতে তাকে সহায়তা করেন ওই গৃহবধূ।
পরবর্তীতে অবশ্য মামলার বাদী আদালতে অভিযোগ করেন, সাক্ষী এমাদুল তার কন্যাকে ধর্ষণ করে। এরপর ধর্ষণের অভিযোগ তার প্রতিপক্ষ মহসিন ও মোয়াজ্জেমের কাঁধে তুলে দিতে নানা রকম ভয় দেখায়। তাই তিনি নিরুপায় হয়ে মহসিন ও মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। ঘটনা জানাজানির পর এমাদুল আটমাস কারাভোগও করেন। পরে আদালত বাদী ও অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য পযার্লোচনা করে এমাদুল হককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন।
আসামীর আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। এখন পর্যন্ত রায়ের কপি আমরা পাইনি।
এবিষয়ে রাষ্ট্র পক্ষের বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি একটি জঘন্যতম ঘটনা। এমাদুল হক ওই সময় ইউপি সদস্য ও আমাদের এডভোকেট ক্লার্ক ছিল। প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকার কারনে একটি স্কুল-পড়ুয়া নাবালিকা মেয়েকে নিজে ধর্ষণ করে অন্যদের বিরুদ্ধে বাদীকে বাধ্য করে মিথ্যা মামলা করায়। জঘন্যতম এঘটনায় এমাদুল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কাম্য ছিল।