ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে পুতিনের সঙ্গে কিছু 'গুরুত্বপূর্ণ' পদক্ষেপ নিতে পারি: ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার জানিয়েছেন, তার প্রশাসন ইতোমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ' আলোচনা করেছে। তিনি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শিগগিরই চলমান সংঘাত অবসানে 'উল্লেখযোগ্য' পদক্ষেপ নিতে পারেন।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ট্রাম্প বলেন, 'আমরা কথা বলব এবং সম্ভবত এমন কিছু করব, যা তাৎপর্যপূর্ণ হবে। আমরা এই যুদ্ধের অবসান চাই। আমি প্রেসিডেন্ট হলে এই যুদ্ধ শুরুই হতো না।'
তবে তার প্রশাসনের কোন কর্মকর্তারা রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি ট্রাম্প। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'উভয় পক্ষ ইতোমধ্যেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।'
পুতিনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি এটা বলতে চাই না।'
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুই হতো না। যদিও তার প্রেসিডেন্ট থাকার সময়েই পূর্ব ইউক্রেনে কিয়েভের বাহিনী ও রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়, যা ২০২২ সালে পুতিনের পূর্ণমাত্রার আক্রমণে রূপ নেয়।
ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ এড়াতে জেলেনস্কির উচিত ছিল পুতিনের সঙ্গে চুক্তি করা।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জেলেনস্কিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, 'তিনি খুব সাহসী হওয়ার কথা বলছেন, অথচ তাদের পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।'
'তারা সাহসী, তবে আমরা তাদের জন্য শত শত কোটি ডলার দিয়েছি,' যোগ করেন ট্রাম্প।
সম্প্রতি রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন ট্রাম্পকে 'চতুর ও বাস্তববাদী ব্যক্তি' বলে প্রশংসা করেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন।
পুতিন বলেন, 'বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) সঙ্গে আমাদের সবসময় বাস্তবভিত্তিক ও বিশ্বাসভাজন সম্পর্ক ছিল। আমি তার সঙ্গে একমত যে, যদি তিনি প্রেসিডেন্ট থাকতেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে যদি তার জয় চুরি না হতো, তাহলে ২০২২ সালে ইউক্রেনে এই সংকট তৈরি হতো না।'
পুতিনের এ মন্তব্য কার্যত ট্রাম্পের সেই দাবিরই সমর্থন, যেখানে তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকার করেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আদালত, সরকারি সংস্থা ও তার নিজের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল পর্যন্ত বলেছেন, নির্বাচনে জালিয়াতির কোনো প্রমাণ নেই।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প যুদ্ধ দ্রুত সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে, তারা ইউক্রেনকে সাহায্য করতে মার্কিন জনগণের ট্যাক্সের শত শত কোটি ডলার ব্যয় করছে।
ট্রাম্প ও পুতিনের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ট্রাম্প রাশিয়াকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, যেন তারা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের মুছে ফেলা ইমেইলগুলো প্রকাশ করে।
এছাড়া, ২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে এক বৈঠকে ট্রাম্প প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর পুতিনের কথা বেশি বিশ্বাস করেন বলে জানান। তিনি রুশ নেতার প্রশংসা করে বলেন, ইউক্রেন আক্রমণ করে তিনি 'খুবই বুদ্ধিমান'-এর মতো কাজ করেছেন।