মার্কিন ভিসার জন্য প্রার্থনা করতে মন্দিরে ভিড় করছেন ভারতীয়রা
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/04/4185.jpg)
ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য প্রার্থনা করতে মন্দিরগুলোতে ভিড় করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর অভিবাসন প্রক্রিয়া কঠোর করতে একাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তার এ কঠোর অভিবাসী নীতির কারণে ভিসা প্রক্রিয়াও জটিল হয়ে গেছে।
ভিসা প্রাপ্তি বিষয়ক প্রার্থনার জন্য ভারতের পশ্চিমাঞ্চল গুজরাটের আহমেদাবাদের চমৎকারী হনুমান মন্দির এখন জনপ্রিয় উপাসনা কেন্দ্র হয়ে দাড়িয়েছে। অনেকেই এ মন্দিরকে এখন 'ভিসা হনুমান' মন্দির বলে ডাকেন।
মন্দিরের পুরোহিত বিজয় ভাট টেলিভিশন চ্যানেল টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ভিসার আবেদনকারীদের তাদের পাসপোর্ট শ্রী হনুমানের সামনে রেখে একটি ভক্তিমূলক কীর্তন গাইতে বলা হয়। হনুমান হলেন হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রিয় দেবতা, যিনি তার বানরের মতো চেহারা জন্য পরিচিত।
তিনি আরও বলেন, "এটি সম্পূর্ণ বিশ্বাসের ব্যাপার। যদি আপনি বিশ্বাস করেন, এটি ঘটবে। যদি মনে সন্দেহ থাকে, তাহলে আপনার আশা পূরণ হবে না।"
তিনি দাবি করেন, তিনি এমন কিছু উদাহরণ দেখেছেন যেখানে একাধিক প্রত্যাখ্যানের পর ভক্তরা পূজা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভিসার অনুমোদন পেয়েছেন।
অনেক ভক্তরাই দূরবর্তী রাজ্য থেকে এ মন্দিরে এসেছেন। তাদের বেশিরভাগই ভিসা অনুমোদন পাওয়ার বিশ্বাস থেকে এখানে এসেছেন বলে জানান ভাট।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন অনেক ভারতীয়ের জন্যই মর্যাদার। তবে ট্রাম্প ভারতীয়দের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে দ্বিধার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। ট্রাম্প ভিসা প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করতে চান।
তবে এইচ ১ বি ভিসা প্রোগ্রাম নিয়ে ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যেই মতবিরোধ আছে। এ ভিসা প্রোগ্রামের অধীনে সফটওয়্যার প্রকৌশলী এবং অন্যান্য দক্ষ কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। আর এ ভিসা দুই-তৃতীয়াংশই পেয়ে থাকেন ভারতীয়রা।
এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্পের অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। ইলন মাস্ক ও অভিবাসন বিরোধীরা এ বিভেদ তৈরি করেছেন। এ বিষয়ে মাস্ক বলেন, এ প্রোগ্রামটিতে 'বড় সংস্কার' প্রয়োজন। তবে তিনি বলেন, দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণে দেশে যথেষ্ট প্রতিভা নেই।
হায়দ্রাবাদের 'ভিসা দেবতা' নামে পরিচিত চিলকুর বালাজি মন্দিরে এসে ভবিষ্যৎ প্রবাসীরা প্রার্থনা করছেন। তারা এখানে নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করছেন এবং ঈশ্বরের সাহায্যের আশায় তারা ১০৮ বার পায়ে হেঁটে মন্দির প্রদক্ষিণ করছেন।
এদের মধ্যে ছিলেন হায়দ্রাবাদের একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী। আগামী এপ্রিলে তার নিউ জার্সিতে একটি নতুন চাকরিতে জয়েন করার কথা রয়েছে। তিনি এইচ ১ বি ভিসা অনুমোদন পেয়েছেন। তার জন্য ধন্যবাদ জানাতেই তিনি আবার মন্দিরে এসেছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে ওই প্রকৌশলী বলেন, "গত বছর আমাদের মধ্যে ১১ জন এ ভিসার আবেদন করেছিলাম। তাদের মধ্যে শুধু আমি ভিসা পেয়েছি।"
আরেকটি সফটওয়্যার প্রকৌশলী চন্দনা (২৬) বলেন, "তিনি ট্রাম্পের জয়ের পর হতাশ হয়েছিলেন। তিনি দুই বছর আগে ভিসার জন্য আবেদন করার পর থেকে প্রতি মাসে মন্দিরে এসেছেন। আমি জানি এখন পরিস্থিতি খুব ভাল মনে হচ্ছে না, তবে আমার বিশ্বাস আছে যে আমি এটি পাব, যেমন আমার আত্মীয়রা পেয়েছিল।"
দিল্লির শ্রী সিদ্ধি পীঠ চামৎকারি হনুমান মন্দিরের উপরও আবেদনকারীদের আস্থা বাড়ছে। মন্দিরের পুরোহিত নারায়ণ মিশ্রা বলেন, "অনেক মানুষ তাদের ভিসা অনুমোদন পাবে এ আশায় ৪১ দিনের জন্য মাংস, মদ, পেঁয়াজ এবং রসুন ত্যাগ করেছেন।"
ভক্তরা তাদের ইচ্ছাগুলি কাগজের টুকরোতে লিখে দেবতার সামনে রাখেন এবং বিভিন্ন মন্ত্র পড়েন। পরে তা একটি পবিত্র বাক্সে রাখা হয়। মিশ্রা বলেন, "মানুষ খুব বিচলিত মন নিয়ে এখানে আসেন। এটি তাদের শেষ আশ্রয় এবং আমরা সাধারণত দেখতে পাই যে তাদের ইচ্ছাগুলো সত্য হয়।"