কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু অর্থায়নে অঙ্গীকার পূরণের আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার্বন নিঃসরণ হ্রাসসহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বিভিন্ন উদ্যোগে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “সব দেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি কার্বন নিঃসরণ নিয়ে তাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর এ-সংক্রান্ত পদক্ষেপে অর্থায়নের।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে (স্থানীয় সময়) জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কনফারেন্স কক্ষ নং ৭-এ ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’ (জিসিএ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে এ আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গক্রমে, একটি কার্বন-নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও সামর্থ্যের স্বল্পতার মধ্যেও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি আমাদের অংশীদারিত্বের অঙ্গীকার এমন একটি প্লাটফর্মের সৃষ্টি করবে যেটি উদ্ভাবনী ও অভিযোজনমূলক নানা পদক্ষেপ নিয়ে সহযোগিতামূলক কার্যপ্রণালী তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।”
এই বৈঠক আয়োজনের জন্য নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুতর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে রয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমাবর্ধমানভাবে আমাদের সভ্যতার ক্ষতি সাধন করছে।”
এটি বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অস্তিত্বের জন্য যে হুমকি হযে উঠেছে সে কথাও বললেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) ৫ম মূল্যায়ন প্রতিবেদনে (এআর-৫) পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, কার্বন নিঃসরণ কার্যকরভাবে বন্ধ বা কমানো সম্ভব না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বর্তমান শতাব্দীতে তীব্রতর হতে থাকবে।
এ কথার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিকালে আমাজনের জঙ্গলে আগুন এবং বাহামা দ্বীপপুঞ্জের ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ান সমগ্র বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা বিধ্বংসী রূপ নিতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পুরো ২০১৮ এবং ২০১৯ সাল জুড়েই জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রা নির্বাহে জনগণের মাথাব্যথার কারণ হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “আমরা দুটি ক্ষেত্রে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। প্রথমত, ভবিষ্যতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে; দ্বিতীয়ত যেসব অঞ্চলে পর্যাপ্ত ক্ষতি সাধিত হয়ে গেছে সেখানে অভিযোজন ব্যবস্থা গ্রহণে। কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা ঝুঁকির মুখে থাকবে যদি আমরা এই দুটি ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করতে না পারি।”
গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) প্রতিষ্ঠার অংশ হতে পেরে বাংলাদেশ আনন্দিত বলেও জানালেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা জিসিএ-এর ঢাকা কার্যালয় স্থাপনের ঘোষণায় আরও আনন্দিত। কেননা আমাদের অভিজ্ঞতা এবং অঙ্গীকার নিয়ে জিসিএ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বড় আকারের কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হবে।”
এই অফিস অন্যান্য জিসিএ আন্তর্জাতিক অফিসসমূহের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হবে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী কমিশনকে, কো-চেয়ার এবং কমিশনারদের ‘ফ্লাগশিপ রিপোর্ট’ প্রণয়নের জন্য অভিনন্দন জানান।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিজনিত বিভিন্ন হুমকি ও চ্যালেঞ্জের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেও তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সেক্ষেত্রে জলবায়ুর চরমভাবাপন্নতা বা বৈরী আচরণ এবং পরিবেশের অবনমন আমাদের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়টি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে বলেও উদ্বেগের কথা জানান তিনি।
তবে, ব-দ্বীপ হিসেবে একই সঙ্গে দেশটির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ড সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, “টেকসই ব-দ্বীপ বাস্তবায়নে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, নীতি ও অঙ্গীকার। ডেল্টা মানেজমেন্ট অ্যাপ্রোচ গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে দীর্ঘমেয়াদি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যই এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ এর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে জিসিএ বাংলাদেশ। তাই এর সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে জিসিএ কাজ করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিবেশ বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।